সঙ্গীতা চৌধুরী:

স্টার জলসার ‘কথা’- ধারাবাহিকের হাত ধরে বহুদিন পর ছোটপর্দায় ফিরলেন সাহেব ভট্টাচার্য। এক সময় স্টার জলসার ‘বন্ধন’ ধারাবাহিক দিয়ে অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তবে এবার এক দাম্ভিক সেলিব্রিটি শেফের চরিত্রেই দর্শকরা সন্দীপ রায়ের একসময়কার তোপসেকে দেখতে পাবেন। এখানে তাকে দেখা যাচ্ছে এক অভিজাত পরিবারের ছেলের রূপে, যে একটি ক্যাফের মালিক এবং যার চলনে- বলনে রয়েছে অত্যাধুনিক সংস্কৃতির ছাপ।

শুদ্ধ বাংলা সে বোঝে না। চরিত্রের নাম অগ্নিভ গুহ ওরফে এভি। জোকা থেকে বেশ কিছুটা দূরে চিত্রায়ন ফিল্ম স্টুডিওতে শুটিং চলছে ‘কথা’-র। সম্প্রতি এই ধারাবাহিকের ঝাঁ চকচকে ‘ মমস্ ক্যাফে’ সাজানো সেটেই মুখোমুখি হওয়া গেল অভিনেতার সঙ্গে।

 অভিনয় জগতে প্রথম পা রাখার গল্পটা কি ? সাহেব বলেন, ” আমি প্রথম অভিনয় জগতে কাজ শুরু করি শিশু শিল্পী হিসেবে।   ‘সংঘর্ষ ‘ আমার প্রথম ছবির কাজ। এরপর আরো বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘লাঠি’ ছবিটি। পরিচালক প্রভাত রায়ের এই ছবিতে কাজ করার সময় আমি নিতান্তই ছেলেমানুষ তাই সে সময় আমি অভিনেতা কৌশিক সেনের কোলেই সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতাম। খুব মজা হতো।

ছবির সব বড় বড় শিল্পীরা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। সে সব দিনের কথা মনে হলে খুশিতে মনটা ভরে যায়। তবে শুরুতে কলকাতা দূরদর্শণের একটি টেলিফিল্মে কাজ করি, যেখানে চিন্ময় রায় এবং তরুণ কুমারের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যদিও আমি তখন খুবই ছোট, তবে ও রকম মাপের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করাটা আমার একটা বিশেষ স্মৃতি।”

পরবর্তীতে অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, সন্দীপ রায়ের মতো  পরিচালকদের সঙ্গেও কাজের সুযোগ এসেছে, সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? সাহেবের উত্তর, ” রীনা দির (অপর্ণা সেন) ‘ইতি মৃণালিনী’ ছবি,ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময়, দুই বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম।

তবে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে শুধু অভিনয়ের শিক্ষাই পাই নি, কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় সেই অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছি। একজন ভালো পরিচালক বা একজন ভালো অভিনেতা হওয়ার আগেও যে আমাদের একজন ভালো মানুষ হতে হবে জীবনের এই বিশেষ শিক্ষা আমি বাবুদার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি।

সন্দীপ রায়ের ফেলুদাতে তিন বার তোপসে হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। এই কাজগুলো আমাকে অনেক পরিনত করে তুলেছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। বড় পর্দার জন্য অনেক কাজের সুযোগ আসে।”

বিখ্যাত ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যের ছেলে হয়ে ময়দানের দিকে পা বাড়ানোর ইচ্ছে হয় নি ? “আসলে ছোট থেকেই আমার অভিনয়ের ঝোঁক, একটু- আধটু ক্রিকেট খেলেছি কিন্তু ফুটবলার হবো এটা ভাবিনি। তবে বাবা আর আমি দুজনেই বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িয়ে শুধু মাধ্যমটা আলাদা।” 

অনেকদিন পর ছোট পর্দায় ফিরে কেমন লাগছে ? ‘কথা’- র এভি বলেন, ” বেশ একটা থিয়েটার থিয়েটার ফিল হচ্ছে, কারণ বেশ কিছু দৃশ্যেই কাজ করতে হচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ- তরুণীর সঙ্গে।  এখনকার ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে একটাই কথা বলবো এরা খুব স্মার্ট এবং যেকোন বিষয়ে খুবই তৎপর। তবে কাজের পরিবেশ পুরোটাই পাল্টে গেছে ,আগের সঙ্গে কোন মিলই নেই। 

” বড় পর্দা, সঞ্চলনা, ওয়েব সিরিজের পর হঠাৎ করে ছোট পর্দায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন? এ ব্যাপারে সাহেবের বক্তব্য যে, “ছোট পর্দার মাধ্যমে রোজ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। অভিনয় দিয়ে তাদের ঘরের মানুষ হয়ে ওঠাটা একজন অভিনেতার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি। বর্তমানে আমি সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।

কাজেই এই মুহূর্তে আমি দুটো থিয়েটার দলের শো করা ছাড়া অন্য কোন দিকে মন দিতে চাই না। এরমধ্যে একটি দল আমার নিজস্ব। তবে দর্শকদের আগাম জানিয়ে রাখি যে, নতুন বছরে তারা আমাকে তিনটি ছবিতে দেখতে পাবেন। “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here