দেশের সময় , কলকাতা :রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই ইডির হাতে পাকড়াও বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা দাপুটে তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য।

দাদা শঙ্কর আঢ্য গ্রেপ্তার হতেই এবার ইডি-র স্ক্যানারে ভাই মলয় আঢ্যও। ফরেন এক্সচেঞ্জ সংস্থার সূত্রে সোমবার তাঁকে তলব করা হলেও হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে তৃতীয়বার মলয়কে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হলো।

শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেপ্তারের পরে আদালতে ইডি দাবি করেছিল, ফরেন এক্সচেঞ্জ সংস্থাগুলির মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। এই দুর্নীতিতে মলয়ের ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে ইডি। কলকাতার পাশাপাশি দুবাই এবং বাংলাদেশেও শঙ্করের সংস্থা থাকতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

ইডি-র অভিযোগ, ফোরেক্স ফরেন এক্সচেঞ্জ সংস্থা ছাড়াও এমন বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন শঙ্কর এবং মলয় আঢ্য। সেই সংস্থাগুলির মাধ্যমে ভারতীয় টাকা ডলারে কনভার্ট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওই ফরেন এক্সচেঞ্জ সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে আদালতে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইডি-র আরও দাবি, এই চক্রে জ্যোতিপ্রিয় এবং শঙ্করই শুধু জড়িত নন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামও ব্যবহার করা হয়েছিল।

সম্প্রতি ইডি আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, শঙ্কর আঢ্যের সংস্থা থেকে দুবাইয়ের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলারের বেশি ট্রান্সফার হয়েছে। তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে, ওই টাকা রেশন দুর্নীতির।

গোয়েন্দাদের ধারণা, দুবাই এবং বাংলাদেশে বেনামে সংস্থা খুলে ব্যবসার আড়ালে টাকা পাচার হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে আরও তথ্য পেতেই মলয়কে ডাকা হচ্ছে। যদিও শঙ্করের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন তাঁরা।

অন্যদিকে, আর্থিক দুর্নীতি, বিদেশি মুদ্রা পাচারের পর এবার শঙ্কর ও তার পুত্র শুভ আঢ্যের বিদেশি কোম্পানির হদিশ পেল ইডি। তবে ওই কোম্পানি ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়নি সাফাই শঙ্করের।

শঙ্কর ও ছেলে শুভ আঢ্যর বিদেশি কোম্পানির হদিশ দুবাইতে S.B.R.M GENERAL TRADING কোম্পানি সম্পর্কে ধৃত শঙ্কর আঢ্য জানান, কোম্পানিটি রপ্তানির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি না হওয়ায় সেটি ব্যবহার হয়নি। ইডির তদন্ত থেকে জানা আরও কিছু তথ্য পণ্য রপ্তানিতে ভারতীয় সংস্থার সাথে লেনদেন এই S.B.R.M GENERAL TRADING কোম্পানি। ভারতীয় কোম্পানিগুলিতে যথেষ্ট অর্থ পাঠিয়েছে। তবে এই কোম্পানির দ্বারা কত অর্থ পাঠানো হয়েছেসেই বিষয়টি বর্তমানে তদন্তসাপেক্ষ।

রেশন বন্টন দুর্নীতির তদন্তে নেমে বাকিবুর-বালুর সূত্র ধরে ইডির জালে ধরা পড়েছিল দাপুটে রাঘব বোয়াল বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য। আর্থিক দুর্নীতি, বিদেশে মুদ্রা পাচার-সহ পরিবারের নামে একাধিক কোম্পানি এমনকি নিজের নামেও একাধিক FFMC কোম্পানি, সবেতেই যে দুর্নীতির কাণ্ডারি শঙ্কর, সেই তথ্যের সন্ধান মিলেছিল ইডির তল্লাশিতে। ইডির হাতে এসেছিল শঙ্করের ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির খোঁজও। এবার শঙ্কর ও তার পুত্র শুভ আঢ্যের বিদেশি কোম্পানির হদিশ পেল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দামহল। দুবাইতে শঙ্করের সেই কোম্পানি S.B.R.M GENERAL TRADING-এর সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি বলে ব্যবসায় এই কোম্পানি কোনও ভাবে ব্যবহৃত হয়নি। সাফাই দিলেন অভিযুক্ত তৃনমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য। 

ইডি সূত্রে খবর, জেরায় তিনি জানান, সংস্থাটি বিদেশে রফতানির প্রয়োজনে তৈরি করা হয়েছিল। তার মাধ্যমে ব্যবসা করা হয়নি। কিন্তু নথি ঘেঁটে ইডি অন্য তথ্য পেয়েছে।

ইডি সূত্রে দুবাইয়ের রাক ব্যাঙ্কের নথি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর একটি ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে ৭৯,৫৪৮ ডলার লেনদেন হয়েছে শঙ্করের সংস্থার। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ৬৬ লক্ষের বেশি। রেশন ‘দুর্নীতি’র সঙ্গে এই টাকার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রেশন মামলায় জ্যোতিপ্রিয়ের সূত্র ধরেই শঙ্করের নাম পেয়েছে ইডি। গত ৫ জানুয়ারি বনগাঁয় শঙ্করের বাড়িতে তারা তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। প্রায় ১৭ ঘণ্টা তল্লাশির পর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

আদালতে ইডি জানায়, জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে শঙ্করের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। এমনকি, হাসপাতালে থাকাকালীন কন্যা প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে মন্ত্রী যে চিঠি লেনদেন করেছেন, তাতেই শঙ্করের উল্লেখ রয়েছে। টাকার লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশ ওই চিঠিতে দেওয়া হয়েছিল বলে ইডির দাবি। জ্যোতিপ্রিয়ের হস্তাক্ষরের সঙ্গে ওই চিঠির লেখা মিলিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও ধৃত মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে বার বার দাবি করেছেন শঙ্কর।

প্রসঙ্গত, দুবাইতে শঙ্করের ফরেক্স কোম্পানির নথি, আদালতে পেশ করেছিল ইডি। জানা গিয়েছিল শঙ্কর ও তার কোম্পানির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠানো হত দুবাইতে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৬ লক্ষেরও বেশি টাকা পাঠানো হয়েছিল শঙ্কর ওরফে ডাকু মারফত। এবার দুর্ণীতিতে নাম জড়াল শঙ্করপুত্রেরও। মূলত পণ্য রপ্তানিতে ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে  লেনদেনে ভারতীয় কোম্পানিগুলিতে যথেষ্ট অর্থ পাঠিয়েছে বৈদেশিক ওই কোম্পানি। এখন প্রশ্নরেশন বন্টন দুর্নীতিতে এই বিতর্কিত S.B.R.M GENERAL TRADING মারফত বিদেশে ঠিক কত টাকা পাচার হয়েছে তা নিতান্তই তদন্তসাপেক্ষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here