পার্থসারথি সেনগুপ্ত

যখন রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকায় বিচারক নিয়োগে ইন্টারভিউ হতে পারছে না, তখন না হয় হাকোর্টের ‘জজ’ – রাই চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেবেন! আর তো কিছু করার নেই। রাজ্য সরকার এবার এই বিষয়ে তার মতামত জানাক। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাঙ্গণম ও বিচারপতি হিরন্ময় বন্দোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন তাদের এজলাসেই পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ২০১৭ সালে ডব্লিউ বি সি এস নিয়োগে নানা দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া জন স্বার্থ মামলার শুনানির সময়ই এই নির্দেশ জারি করা হয়। এই বিষয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জেনে হাই কোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে। ১৪ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।

সরকারি সূত্রে খবর, কমিশনের পূর্বতন চেয়ারম্যান পিয়ালী সেনগুপ্তের কার্যকাল প্রায় ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। কিন্ত ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকার চেয়ারম্যান পদে যাকে মনোনিত করে, তাকে রাজ্য পালের অনুমোদন সাপেক্ষেই নিয়োগ করা হয়। কিন্তু এখনও তা না হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া নানা ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিন মামলার শুনানির সময় এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করেন বিচারপতিরা। তাদের মতে, এটা খুবই ‘ সিরিয়াস ‘ বিষয়। এই প্রসঙ্গে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কথাও বলেন। যাতে বলা হয়েছে যে বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যেন কোনো বিলম্ব না হয়। কারণ তা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে হানিকর।

এমন কথাও বিচারকরা এদিন বলেন যে চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকায় কমিশনের বিচারপতি নিয়োগে দীর্ঘ সুত্রিতার কারণে বার কাউন্সিল অভিযোগ তুলছেন নানা ক্ষেত্রে যেমন পকসো আদালতে বিচারপতির পদ শূন্য রয়েছে। এর জেরে তারা এদিন কমিশনের কৌঁসুলিকে নির্দেশ দেন যে খোদ অ্যাডভোকেট জেনারেল যেন এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেনে নেন কেন চেয়ারম্যান পদে নিয়োগে দেরি হচ্ছে। কেন ফুল কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মাত্র দুজন এই মুহূর্তে রয়েছেন। বাকিরা কোথায়। যদি বিলম্বিত লয়েই সব কিছু চলে তো, তাহলে না হয় হাই কোর্টের জজরাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এই ক্ষেত্রে যে পূর্ব দৃষ্টান্ত আছে, সেই প্রসঙ্গে তারা তামিলনাড়ু পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ( যার যাত্রা শুরু স্বাধীনতারও আগে মাদ্রাজ পাবলিক কমিশন হিসাবে) এই ধরনের বিচার বিভাগীয় ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন। এদিন রাম চন্দ্র ভট্টাচার্য বনাম ডব্লিউ পি এস সি জনস্বার্থ মামলায় আইনজীবী শামীম আহমেদ উচ্চ আদালতে জানান, শুধু বিচারপতি পদে প্রার্থী দের ইন্টারভিউ নয়, কমিশনের চেয়ারম্যান পদ শূন্য থাকায় এমনকি ডব্লিউ বি সি এস নিয়োগ পরীক্ষায় রাজ্যের আমলা পদে নিয়োগও ব্যাহত হচ্ছে।

সরকারি সূত্রে খবর, কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে পিয়ালী দেবীর কার্য কাল শেষ হয় গত বছর ১৫ অগস্ট। এরপর কমিশনের সদস্য কর্নেল ( অবসর প্রাপ্ত ) এ কে সান্যাল দিন কয়েক অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান হিসাবে থাকার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অবসর নেন। এখন মাত্র রয়েছেন দুজন সদস্য। তাদের মধ্যে এক জনের এই মাসেই অবসর নেওয়ার কথা। যদিও এদিন কমিশনের এক কর্তা বলেন, ” অবিলম্বে সব কিছুর সমাধান হতে চলেছে। কারণ সরকার শীঘ্রই এখন উপযুক্ত ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করতে চলেছে বলেই সূত্রে জানা গিয়েছে। একজনের নাম উঠে আসছে।”

পি এস সি দুর্নীতি মুক্ত মঞ্চের মুখপাত্র ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ” আমরা টানা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সমস্যার কথা বার বার তুলেছি। যে কমিশন ২০১৭ সালের বি সি এস পরীক্ষায় প্রিলিমে ২০০ এর মধ্যে ১৩ পেয়ে ফেল করা প্রার্থীকে বে আইনি ভাবে মেইন্স এ বসিয়ে বি ডি ও বানায়, সেখানে চেয়ারম্যান না থাকাটা আরো নিয়োগ দুর্নীতির পথ মসৃণ করে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক এই পরিস্থিতি। উচ্চ আদালতের কাছে রাজ্যের চাকরি প্রার্থীদের প্রার্থনা তারা এর সুবিচার করুন। “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here