দেশের সময় , কলকাতা: ‌ বাড়ছে ভারতীয় সেনার শক্তি। সেনায় যুক্ত হতে চলেছে আরও একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যাডভান্স স্টেলথ ফ্রিগেট। শত্রুপক্ষের র‌্যাডারকে ফাঁকি দিয়ে পাল্টা আঘাত করতে এই অত্যাধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্রিগেটের জুড়ি মেলা ভার। খাতায় কলমে এই ফ্রিগেটের নাম দেওয়া হয়েছে আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি। নীলগিরি গোত্রের P17A প্রকল্পের এই ফ্রিগেটটি এদিনই জলে ছাড়া হল। আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি তৈরি করেছে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)। সূত্রের খবর, P17A ক্লাসের শেষতম ফ্রিগেট এটি। 

এদিন গার্ডেনরিচে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস  সহ জিআরএসই এবং নৌবাহিনীর শীর্ষকর্তারা। ভারতের নৌবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট সাতটি এই P17A প্রকল্পের ফ্রিগেট তৈরি করার জন্য বরাত পায় মাঝগাঁও ডক ইয়ার্ড (এমডিএল) এবং গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)। গত তিন বছরে জিআরএসই দু’টি ফ্রিগেট তৈরি করে নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। শেষতম ফ্রিগেটটি এদিন জলে নামল। অন্যদিকে, এমডিএল এর শেষতম এই গোত্রের ফ্রিগেটটি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জলে নামানো হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার। 

এদিন রাষ্ট্রপতি নিজের বক্তব্য বলেন, “ভারতীয় জল সীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনী ভূমিকা অপরিসীম। আত্মনির্ভর ভারত তৈরি করার ব্যাপারে দেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হওয়ায় ভারতবর্ষ নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সবদিক থেকে সক্ষম।” ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্তাদের কথায়, এই রণতরী সমুদ্রের অন্দরে গিয়ে ‘আড়াল’ খুঁজে নিতে পারে। পাশাপাশিই শত্রুপক্ষের র‌্যাডারের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে হামলা চালাতে পারে দ্রুত। শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হেনে ধ্বংস করতে পারে শত্রুর জলযান বা আস্ত বন্দর। 

কলকাতার প্রশংসা করে গেলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
গার্ডেনরিচে ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরী ‘‌আইএনএস বিন্ধ্যগিরি’‌ ভাসানো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে মমতা তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। দু’‌জনেই সৌজন্য বিনিময় করেন। এরপর তাঁরা অনুষ্ঠানে চলে যান। সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। হলুদ গোলাপ দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। রাষ্ট্রপতি এদিন অর্থনীতির সার্বিক বিকাশ এবং জলসীমা মজবুত করতে নৌশক্তি প্রসারের ওপর জোর দেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমি কলকাতায় এলাম। সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতিসম্পন্ন জীবন্ত এই শহরে বিশেষ স্থান রয়েছে আমাদের জাতির হৃদয়ের। বুদ্ধির দিক দিয়ে এই শহর প্রাণবন্ত। রয়েছে সাংস্কৃতিক উত্তাপ। ভারতের যা কিছু সেরা এই শহর তারই প্রতীক। এদিন গার্ডেনরিচে তারকাখচিত অনুষ্ঠানে নৌসেনার নতুন স্টেলথ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, আজ ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ভবিষ্যতে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছে। আইএনএস ‘‌বিন্ধ্যগিরি’‌ নামের এই রণতরী ভারতীয় নৌসেনার ‘‌প্রজেক্ট–‌১৭ আল‌ফা’‌ বা সংক্ষেপে পি–‌১৭ প্রকল্পের ৬ষ্ঠ জাহাজ। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নেশামুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় স্তরে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এদিন সকালে কলকাতার রাজভবনে নেশামুক্ত ভারত অভিযানের অন্তর্ভুক্ত ‘‌My Bengal Addiction-free Bengal’‌ শীর্ষক‌‌ এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করে এই পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই নেশার আসক্তি শুধু পরিবার নয়, সমাজ তথা সমগ্র দেশের কাছে চিন্তার বিষয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশ, সারা বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি মানুষ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, মন্ত্রী শশী পাঁজা ও মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা উপস্থিত ছিলেন। এদিন বিকেলেই রাষ্ট্রপতি দিল্লি ফিরে যান। তাঁকে বিদায় জানাতে কলকাতা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন ফিরহাদ হাকিম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here