দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ Matua– মঙ্গলবার মতুয়াদের বারুণী মেলায় ভার্চুয়াল বক্তব্যের শুরুতেই বাংলায় ভাষণ শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতুয়া ধর্ম মহামেলায় এবং পুণ্যস্নান উপলক্ষে শুরু হওয়া মেলায় হরিচাঁদ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী । ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে আয়োজিত এই বারুণী মেলায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন মোদী।

মতুয়াদের মন জয় করতে কোনও খামতি রাখছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৷ ঠাকুরনগরের মতুয়া মহামেলায় মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শুরুতেই হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের ভাষণ শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। মতুয়াদের মন জিততে নিজের ভাষণের শুরু বাংলাতেই করলেন তিনি। স্পষ্ট বাংলায় বললেন, “জয় হরি বোল। হরিচাঁদ ঠাকুরের ২১১ তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে সকল পূণ্যার্থীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন ও নমস্কার।” সেই সঙ্গে অতীতে তাঁর ওরাকান্দি সফরের কথাও উল্লেখ করেন। বললেন, “ঠাকুরবাড়ি আমাকে সবসময় আপন করে নিয়েছে। ওরাকান্দি সফরের সময়েই আন্তরিকতা পেয়েছি। আজ ঠাকুরবাড়ির মতো মহাতীর্থে প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে ভাল লাগছে।”

পাশাপাশি এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেল নির্যাতন প্রতিরোধে আওয়াজ তোলার কথা। রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে নেমে আসা কাউকে আক্রমণ এবং হুমকি দেওয়ার ঘটনা ‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতি পরিপন্থী’ বলে জানিয়েছেন তিনি। মতুয়া সমাজের কাছে তাঁর বার্তা, ‘‘এমন প্রবণতা রুখতে হবে।’’

অনেকেই ভেবেছিলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া সমাজের মন পেতে প্রধানমন্ত্রীর মুখে সিএএ সংক্রান্ত নতুন কোনও ঘোষণা শোনা যাবে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদী অত্যাচার এবং অরাজকতা রুখতে সক্রিয় হওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন মতুয়া সমাজের কাছে। সরাসরি নাম না করলেও প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের নিশানা রামপুরহাটের বগটুই হত্যাকাণ্ডের দিকে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। হিংসা এবং অরাজকতা দূর করার পাশাপাশি দুর্নীতির মোকাবিলার কথাও মঙ্গলবার শোনা গিয়েছে মোদীর বক্তৃতায়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, বাংলাদেশ সফরের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সুকৌশলে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা মতুয়াদের ভাবাবেগ উসকে দিতে চেয়েছেন।

পাশাপাশি মতুয়া সমাজের থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে মঙ্গলবার ঠাকুরনগরের বারুণীর পুণ্যস্নান অনুষ্ঠান এবং মেলায় ভার্চুয়াল বক্তৃতায় গত বছর বাংলাদেশের ওড়াকান্দি সফরের কথাও বললেন তিনি।

বর্তমানে ভারতীয় সমাজে বিভাজনের অপচেষ্টা চলছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই সময়ে হরিচাঁদ ঠাকুরের দর্শনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি আমরা।’’ নারীশিক্ষা প্রচারে হরিচাঁদের ভূমিকার কথাও এসেছে তাঁর বক্তৃতায়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এই মহামেলা মতুয়া পরম্পরাকে স্মরণ করার উপযুক্ত সময়। এটা সেই মূল্যবোধগুলির প্রতি আস্থা দেখানোর সময়, যা হরিচাঁদ ঠাকুর দেখিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে গুরুচাঁদ ঠাকুর ও বড় মা তা আরও মজবুত করেছেন। আজ শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে এই পরম্পরাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয়তা, ঐক্য এবং নিজের আস্থার উপর ভরসা রেখে আধুনিকতাকে গ্রহণ করে নিতে শিখিয়েছে মতুয়া ভাবাদর্শ।

আজ যখন স্বার্থের জন্য মানুষকে খুন হতে হচ্ছে, যখন সমাজে ভাগাভাগির চেষ্টা হচ্ছে, যখন ভাষা ও জাতির ভিত্তিতে ভাগাভাগির চেষ্টা হচ্ছে, তখন হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবন দর্শন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই মেলা এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনাকে আরও মজবুত করে।”

মতুয়া ভাবাদর্শের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হরিচাঁদ ঠাকুর সমাজ সংস্কারের প্রবাহকে কখনও আটকে থাকতে দেননি। আজ যে লিঙ্গ ব্যবস্থার কথা বলা হয়, তা আঠারো শতকেই হরিচাঁদ ঠাকুর নিজের লক্ষ্য করে নিয়েছিলেন। তিনি মহিলাদের শিক্ষা থেকে কাজের অধিকারের জন্য কথা বলেছিলেন।

সেই সময়ে তিনি মহিলা কোর্ট, মহিলাদের স্কুল তৈরি করেছিলেন। এটাই বোঝায়, তাঁর লক্ষ্য কী ছিল। আজ যখন ভারতে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযান সফল হচ্ছে, যখন সমাজের সব ক্ষেত্রে আমাদের মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দেশগঠনের কাজ করছে, তখন দেখে মনে হয়, আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরের মান রাখতে পেরেছি। ভারতের বিকাশে মতুয়া সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তাই কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় চেষ্টা করে যাতে এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক পরিবারের জীবন সহজ হয়। তাঁরা যাতে প্রত্যেক জনকল্যাণকর প্রকল্পের দ্রুত সুবিধা পান তার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারকেও এই নিয়ে বলা হচ্ছে।”

সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “হরিচাঁদ ঠাকুর আমাদের কর্তব্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের নিজের দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হবে, তার উপর জোর দিয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর।

দুর্নীতিকে সমাজ থেকে দূর করার জন্য আমাদের সবাইকে আরও সজাগ থাকতে হবে। কোথাও কারও উপর অত্যাচার হলে, সেখানে প্রতিবাদ করুন। এটা সমাজের প্রতি এবং দেশের প্রতি কর্তৃব্য। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়া আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

কিন্তু রাজনৈতিক মতবিরোধের জন্য কাউকে ভয় দেখিয়ে, হিংসার মাধ্যমে আটকানোর চেষ্টা করে, তাহলে অন্যের অধিকার খর্ব হয়। সমাজের কোথাও হিংসা বা অরাজকতা থাকলে তার প্রতিবাদ করতে হবে।”

মতুয়াদের মন পেতে গেরুয়া হাইকম্যান্ডের নয়া স্ট্র্যাটেজিতে রাজ্য রাজনীতিতে চাঞ্চল্য। একইসঙ্গে মোদীর এই পদক্ষেপে বঙ্গ বিজেপি-র প্রতিও বিশেষ বার্তা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মতুয়াদের আস্থা পেতে ক্ষুব্ধ নেতাকেও অগ্রাধিকার হাইকম্যান্ডের। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর -কেও এদিন শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here