দেশেরসময় , কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়েছিল অশান্তি-হিংসা, ভোট পর্ব থেকে গণনা অবধিও সেই রেশ বজায় রয়েছে। গোটা ভোট পর্বে ৪০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

এখনও গণনা চলছে, পাশাপাশি মিলছে অশান্তির খবরও৷ অগ্নিগর্ভ ভাঙড়। এর মধ্যেই গতকাল পঞ্চায়েত ভোটের ফলপ্রকাশের রাতেও ব্যাপক বোমাবাজি, দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়েছেন আইএসএফ কর্মীরা। গতকাল রাত থেকেই বোমা পড়ছে ভাঙড়ে। জানা গেছে, ভোট লুঠের অভিযোগে অশান্তি ছড়িয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়েন কয়েকজন আইএসএফ কর্মী। পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিও শুরু হয়। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ঘটনায় এক পুলিশ কর্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর। গুলি লেগে জখম দুই আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।


সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয় ভাঙড়ে (Panchayat Election Result 2023)। মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। রবার বুলেটও ছোড়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। বোমার আঘাতে জখম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। জখম তাঁর দেহরক্ষীও। কাঁঠালিয়া স্কুলের পাশে একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে বোমা।

বোমার আঘাতে জখম হন দুই আইএসএফ কর্মী। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশের তরফে এখনও কিছু জানা যায়নি।


রক্তপাত দিয়ে শুরু হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব।

শেষ দিনেও রক্ত ঝরেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বার বার রাজনৈতিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাঙড়ের একাংশ। লাগামহীন হিংসার সাক্ষী থেকেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। বোমাবাজি হয়েছে, গুলি চলেছে। দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন সকালেও তৃণমূল-আইএসএফ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ভাঙড়। সেই ঘটনায় দুজন আইএসএফ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে খবর মেলে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হয়েছিল। এখনও অবধি ভোটের ফলের যে সার্বিক চিত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে আপাতভাবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই জয়জয়কার।

ভাঙড়ে ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূলের দখলে এসেছে ১৮টি । আইএসএফ এবং জমিরক্ষা কমিটির জোট পেয়েছে একটি মাত্র পঞ্চায়েত। ভাঙড়-২ ব্লকের দুটি জেলা পরিষদের আসনের ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। তার আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আইএসএফ। বুধবার সকালেও দেখা গেছে পরিস্থিতি থমথমে। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন হয়েছে এলাকায়। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।

বাম-বিজেপিকে অনেকটাই পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০টি জেলা পরিষদে মধ্যে ১৫টিতেই এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪২,২২৬ আসনে এগিয়ে তৃণমূল, পঞ্চায়েত সমিতির ৯৭৩০ আসনের মধ্যে ৫৯৮৮ আসনে তৃণমূল, ৭১৯টি আসনে এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি।

হুগলির জেলা পরিষদ দখল করল তৃণমূল। এই জেলায় জেলা পরিষদের ৫৩টি আসন। তার মধ্যে ৫১টিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছে। দু’টি আসন পেয়েছে বিজেপি। এ ছাড়া, ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির ১৭টি এবং ২০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮৯টিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছে।

যেভাবে শিক্ষা থেকে শুরু করে নিয়োগ, একের পর এক দুর্নীতির পর্দাফাস হতে শুরু করেছে, তা দেখে মনে করা হয়েছিল যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক তৃণমূলের ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু গতকাল গণনা পর্ব থেকেই দেখা যাচ্ছিল, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের সঙ্গে বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। এবারও দাপট অব্যাহত শাসক দলের। এখনও অবধি  গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে ঘাসফুলের জয়জয়কার জারি। যেমন পূর্ব বর্ধমানে নিরঙ্কুশ জয়ের দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল। হাওড়া, কোচবিহারেও দারুণ ফল তৃণমূল কংগ্রেসের।


দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলেই থাকল। এই জেলার জেলা পরিষদের মোট ৮৫টি আসনের মধ্যে ৮৪টিতে জয়ী হয়েছে শাসকদল। একটি আসনে জয় পেয়েছে আইএসএফ।

কোচবিহারেও জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে। এই জেলায় মোট জেলা পরিষদ ৩৪টি। তার মধ্যে ৩২টিতেই জয় পেয়েছে শাসকদল। দু’টি আসন জিতেছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতেও তৃণমূলের আধিপত্য।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ দখলে রাখল তৃণমূল। ৫৬টি জেলা পরিষদে তারা জয় পেয়েছে। বিরোধীরা জিতেছে ১৪টি আসনে।


পশ্চিম বর্ধমানে জেলা পরিষদ দখলে রাখল তৃণমূল। এই জেলার জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য। ১৮টি আসনের সব ক’টিতেই শাসকদল জয় পেয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯৪১টি আসন এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৬৫টি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল।

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদও তৃণমূলের দখলে। এই জেলায় মোট জেলা পরিষদের সংখ্যা ২১। সব ক’টিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে শাসকদল। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য। এ ছাড়া, পঞ্চায়েত সমিতির ১৮৯টি আসনের মধ্যে ১৬৪টিতে তৃণমূল জয় পেয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩০৮টি আসনের মধ্যে ৮৭১টিতে জয়ী তৃণমূল।

অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২১-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলেও, এবারে রক্তক্ষরণ হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের। গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদের অধিকাংশ আসনেই বিজেপিকে টপকে গিয়েছে তৃণমূল। পাহাড়ে আবার স্থানীয় দলগুলি ভাল ফল করেছে।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে মালদা-মুর্শিদাবাদে। দুই জেলাতেই তৃণমূলকে জোর টক্কর দিচ্ছে বাম, বিজেপি থেকে শুরু করে কংগ্রেস। পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি ও তৃণমূলের কড়া লড়াই চলছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে আবার বিজেপিকে টপকে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here