দেশের সময় : পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে। কিন্তু এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি । ভোটে রাজ্যের হিংসার ঘটনা ও ফলাফল বিশ্লেষণ, সবনিয়েই এবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসছে বঙ্গ বিজেপি।

বাংলাতেও কি এবার মহারাষ্ট্রের মতো ঘটনা ঘটতে পারে? মহারাষ্ট্র সরকারের যেভাবে উলটেছিল পাশার দান সেভাবেই কি বাংলাতেও হবে পট পরিবর্তন। একদিকে ৩৫৫ ধারা জারির দাবি সঙ্গে একের পর এক বিজেপি নেতাদের সরকার ফেলে দেওয়ার হুংকারে বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে শুরু নয়া জল্পনা।

শনিবারই শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘গ্যারান্টি দিয়ে বলছি পাঁচ মাসের মধ্যে সরকার পড়ে যাবে।’ এই প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘ পাঁচ-ছয় মাস কেন, যেকোনও দিন যখন খুশি সরকার পড়ে যেতে পারে। হঠাৎ বিধায়কেরা মনে করতে পারেন আমরা আর সমর্থন করব না বলে সমর্থন সরিয়ে নিতে পারেন। আবার তাঁরা মনে করতে পারেন আমরা অন্য কাউকে সমর্থন করব। অথবা ধরুন এমন গণআন্দোলন শুরু হল যে (MLA) এম এল এ-রা বললো আমরা বিধায়ক পদে থাকব না। এই বলে বিধায়ক পদ ছেড়ে দিল। এমন না হওয়ার তো কিছু নেই।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। সব সম্ভাবনাই আছে।’

এরপরই শুরু হয় জল্পনা, বাংলাতেও কি মহারাষ্ট্রের পথে ঘোড়া কেনাবেচার পরিকল্পনা চলছে?

রবিবার সল্টলেকের বিজেপি দফতরেই এই বৈঠক করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এই বৈঠকে রয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যে নিযুক্ত বিজেপির ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পান্ডে, আশা লাকরা, অমিত মালব্য, দিলীপ ঘোষেরা। তবে এই বৈঠকে ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী।

দিন দুয়েক আগেই দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন সুকান্ত। পঞ্চায়েত ভোট পর্বে বিজেপি বারবার রাজ্যে ৩৫৫ ও ৩৫৬ ধারা লাগু করার দাবি জানিয়েছে। হিংসা রুখতে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবারও করেছেন শুভেন্দুরা।

বিজেপি সূত্রে খবর, রবিবারের বৈঠকে ৩৫৫ ধারার দাবি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সেইসঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ ত্রুটি বিচ্যুতিও আলোচনায় উঠে আসতে পারে। সামনের বছরেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। উনিশের থেকে যাতে বাংলা থেকে আরও বেশি আসন বিজেপির দখলে যায় সেটাই লক্ষ্য সুকান্তদের।

অন্যদিকে, পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ৩৫৫ ধারা জারির দাবি জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। একদিকে সরকার শেষের সময়সীমা, অন্যদিকে ৩৫৫ জারির দাবি, সব মিলিয়ে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার ফেলার চক্রান্তের অভিযোগ তুলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, সুকান্ত মজুমদারের বিধায়ক নিয়ে করা মন্তব্য নেহাতই অমূলক নাও হতে পারে। যেভাবে মহারাষ্ট্রে নির্বাচিত সরকারের বিধায়কদের একটা বড় অংশ জার্সি বদলে সিয়াসি অঙ্ক উলোটপালট করে দেয়। একনাথ শিন্ডে বিধায়কদের সিংহভাগকে নিয়ে বেরিয়ে নিজেদের আসল শিবসেনা বলে দাবি করে বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়ে। সেই পথে এখানেও হয়ত বিজেপির সরকার বদলের পরিকল্পনা।

যদিও সুকান্তদের সরকার ফেলার দাবিতে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি বিজেপির একটা স্টাইল। কিন্তু বাংলায় দূরবীণ দিয়ে খুঁজলেও একনাথ শিন্ডে বা অজিত পাওয়ারকে পাওয়া যাবে না। বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ রইল, গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করে বাংলায় ৩৫৫ ধারা জারি করতে চাইলে বাংলার মানুষ গণপ্রতিরোধ করে আটকে দেবেন।’

তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের অঙ্ক বাংলায় মিলবে না। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলে। এমন বিশ্বাসঘাতক তাঁর দলে নেই।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here