কুন্তল চক্রবর্তী

ভারতে ভগবানের পরেই নেতার স্থানl মানুষ তার দুঃখ দুর্দশার কথা ভগবানকে যেমন জানাই এবং বলে দুঃখ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে, ঠিক তেমনি মানুষ নেতার কাছে জোর হাত করে নিজের দুঃখ-দুর্দশা যন্ত্রণার কথা বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করেল  মনে করে ঈশ্বরের অন্যতম অবতার নেতা তার দুঃখ দুর্দশা যন্ত্রনার মুক্তি ঘটাবে ৷

বাস্তব কি বলছে? তা আমরা সকলেই জানিl তবুও আর কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে তারপর নেতার কার্যালয় গুলি দেবত্ব স্বীকৃতি লাভ করে দেবলয় হয়ে উঠবে ৷ হঠাৎই আমাদের দেশে নেতাদের উপর মা লক্ষী এবং কুবের দেব ভর করেছে, তার ফলে নেতাদের একাংশ হঠাৎই ফুলে ফেঁপে উঠেছে এতে জনগণ বিস্মিত হলেও কুবের যন্ত্র এবং লক্ষ্মী যন্ত্রের কিছুটা বিক্রি বাটা বাড়ার ফলে পঙ্গু অর্থনীতি ক্রাচ এ ভর দিয়ে উঠে সচল হবার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ৷

রাজনীতি এখন একটি সংগঠিত শিল্প হয়ে উঠেছে, নেতাদের একাংশ এই সংগঠিত শিল্পের শিল্পপতি ,এ কথা শুনে বিস্মিত হলেও এটাই সত্যি, এটাই বাস্তবতাl ইডি -সিবিআই যৌথ তল্লাশীর মধ্য দিয়ে একটা কথা প্রমাণ করতে পেরেছে নেতা হওয়া মানেই অর্থের জোয়ারে ভেসে যাওয়া সাথে বান্ধবীটাও অতিরিক্ত প্রাপ্তি ৷ একটা সময় ছিল যখন নেতারা জনগণের সাথে ঘুরতেন জনগণের সঙ্গে থাকতেন, হঠাৎই কয়েক বছরের এটি ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে এখন নেতাদের পিছনেই জনগণ ছোটে ৷ নেতার ভাষণ শুনতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হলেও নেতা কিন্তু একজন কেউ জিজ্ঞাসা করে না তার সংসার চলছে কি করে?

অথচ সকলেই নেতার সমর্থনে হাত তুলতে ব্যস্ত ৷ সমগ্র দেশের মানুষ এখন একটি ঘোরের মধ্যে আছেl একদিকে তীব্র হিন্দুত্ব অপরদিকে হিন্দু বিরোধীতা -এই সমীকরণের মধ্য দিয়ে এ দেশের রাজনীতি বর্তমানে অতিবাহিত হচ্ছে ৷ এর থেকে মুক্তি এই মুহূর্তে অসম্ভব ৷ এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে হলে দেশের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় কেই রাজনীতির দায় এবং দায়িত্ব নিতে হবে ৷ এখানেই বিশাল শূন্যতা ৷ শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় রাজনীতি থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে ,সুতরাং অশিক্ষিত ,অর্ধশিক্ষিত নেতার এখন আকাশ পরিক্রমা ৷

হেলিকপ্টার এবং বিমান পথে নেতার আগমন ,পুষ্প বৃষ্টি ,স্লোগান নেতার অলংকার এবং অহংকার ৷ এই অহংকার চূর্ণ করবে কে? যেখানে নেতাই এখন ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা প্রতি রূপ ৷ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নেতা দেবত্বে উন্নীত হবে ৷ নেতার নামের পাশে ঠাকুর শব্দের ব্যবহার পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়ে গেছে ৷ শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফলাফলের অপেক্ষা ৷ এরপরে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ আরো বেশি বেশি করে শুরু হবে এটাই ২০২৩ সালের অন্যতম সম্ভাবনা এবং এই সম্ভাবনা এই শতাব্দীতেই বাস্তবায়িত হবেl বর্তমান রাজনীতি যদি লক্ষ্য করা যায় এবং রাজনৈতিক নেতাদের যদি ভালো করে পর্যালোচনা করা যায় তাহলে তাদের ডিগ্রীর পাশে ডাক্তার, ব্যারিস্টার, অধ্যাপক, শিক্ষক শব্দগুলি প্রায় অবলুপ্তির পথে ৷ তার জায়গা দখল করে নিয়েছে সমাজসেবী নামের শব্দ ৷

এই সমাজসেবী শব্দটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক নেতারা ৷ এবং এই অস্ত্রই জনগণকে  আক্রমণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত ৷ শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় আজ আর চাকরি প্রার্থী নয় তারা চাকরির জন্য কোন জায়গায় ভিক্ষুক কোন জায়গায় ক্রেতা হয়ে উঠেছে ৷ এই অবস্থার পরিবর্তন  দ্রুত সম্ভব নয়l দেশ এবং জাতি সেবায় নেতাদের আন্তরিকতা ,উৎসাহ ,প্রচেষ্টা এবং উদ্দীপনাকে সম্মান জানিয়ে বলছি অবিলম্বে সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের বেতন এবং ভাতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন ৷ সেবার অর্থ নিঃস্বার্থ ত্যাগ ৷

রাজনৈতিক নেতাদের রাজনীতি থেকে বন্ধ হওয়া থেকেপ্রয়োজন সমস্ত আয়ের উৎস ৷ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন আমলা তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ৷ যেখানে দেশ এবং জাতির অগ্রগতি উন্নয়ন চলবে  আইএএস ,আইপিএস , ডব্লিউবিসিএস পাস শিক্ষিত যুবক যুবতীর তর্জনীর ইশারায় ৷ তবেই সফল হবে দেশের উন্নয়ন ৷ যদিও এই পথ অতিক্রম করা  এখনই সম্ভব নয়, তবু তার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে দেশের সাধারণ জনগন কেই ৷

হীরক রাজার দেশের রাজা আজ বাস্তবের পটভূমিতে দাঁড়িয়েl এখন সময় এসেছে দড়ি ধরে টান মারাবার ৷ এর জন্য দেশের প্রস্তুতজনগণকে ই প্রস্তুত থাকতে হবে ৷ কারণ এ দেশ আপনার আমার সকলের ই ৷

কুন্তল চক্রবর্তীচক্রবর্তী কলেজ রোড খয়রামারি  বনগাঁ উত্তর চব্বিশ পরগনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here