দেশের সময় : বিদায় ২০২৩। আলোর রোশনাই থেকে নাচে-গানে, উন্মাদনায় নতুন বছর, ২০২৪-কে বরণ করে নিল কলকাতা থেকে গোটা বিশ্ব। বড়দিন-এর মতোই ৩১ ডিসেম্বর রাতে উন্মাদনায় মেতে উঠেছে কলকাতার পার্কস্ট্রিট। শুধু পার্কস্ট্রিট নয়, ফ্লোটেল, গ্র্যান্ড হোটেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁয় চলল বর্ষশেষ ও নববর্ষের পার্টি। একেবারে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশনের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল কলকাতাবাসী।

সীমান্ত শহর বনগাঁ, সর্বত্রই রঙ ঝলমলে বাহারি আলোয় সেজে উঠেছে এলাকা। বছরের শেষ দিন বলে কথা। উপরি পাওনা হিসেবে, রবিবার। ফলে রাজপথ যেন জনারণ্য।

নতুন বছরের প্রাক-লগ্নে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেবল কলকাতা নয়, ইংরেজির নববর্ষকে স্বাগত জানাতে মেতে উঠেছে দিঘা থেকে দুর্গাপুর, মন্দারমণি থেকে দার্জিলিং, গোটা বাংলা। আবার মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, লখনউ, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাও মেতে উঠেছে নববর্ষ উদযাপনে। আলোর রোশনাইয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বিশিষ্ট স্থানগুলি। বলা যায়, রাতভোর পার্টি-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে আট থেকে আশি।

দীপাবলির রাত কি না, বোঝা দায়! ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই শুরু হল নতুন বছরের উদ্‌যাপন। সঙ্গে শব্দবাজির তাণ্ডব। কোথাও কোথাও তা দীপাবলিকেও হার মানাল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, শহর থেকে শহরতলি— প্রায় সর্বত্রই শব্দবাজির দাপট! রাত বাড়তেই পাল্লা দিয়ে বাড়ল শব্দদূষণের মাত্রা। তফাৎ রইল না হাসপাতাল চত্বরের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের। সৌজন্য, বর্ষবরণের রাত।

বছরভর দূষণের দাপটে অতিষ্ঠ ছিল কলকাতা। এত দিন শব্দের ‘অশ্লীল’ তাণ্ডবের জন্য কালীপুজো, দীপাবলিই বরাদ্দ ছিল। গত তিন-চার বছরে সে ধারা বদলেছে। দূষণের গণ্ডি ভাঙার তালিকায় বর্ষবরণের রাতও জুড়েছে। রবিবার মহানগরীর কপালে জুটল সেই শব্দ দূষণই। সন্ধ্যার পর থেকেই শহর ও শহরতলির অলিগলিতে বাজতে শুরু করেছিল পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স, চলতি কথায় ‘ডি জে বক্স’। সেই শব্দের দাপটে অতিষ্ঠ হয়েছেন মানুষজন। শব্দবাজি যেমন ফেটেছে, তেমনই ফেটেছে আতসবাজি।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবিবার রাত ১২টা নাগাদ নিউ মার্কেট চত্বরে শব্দের পারদ চড়েছিল ৭৬.৪ ডেসিবেলে। ওই সময় ওই এলাকায় যা থাকার কথা ৬৫ ডেসিবেলের নীচে! কসবা শিল্পাঞ্চলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেখানে শব্দদূষণের মাত্রা থাকা উচিত ৭০ ডেসিবেল। রবিবার রাত ১২টা নাগাদ সেখানে দূষণ পৌঁছেছিল ৮৭.৫ ডেসিবেলে। বাগবাজারের মতো নাগরিক বসত এলাকাতেও শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। ৪৫ ডেসিবেলের পরিবর্তে দূষণের মাত্রা পৌঁছেছিল ৭০.৩ ডেসিবেলে। বিরাটিতেও দূষণ ছুঁয়েছে ৮৩.৭ ডেসিবেলে। পাটুলিতেও ৬৫.৭ ডেসিবেল।

যদিও ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে, ঘড়ির কাঁটায় নতুন বছর প্রথম শুরু অকল্যান্ডে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারপর একে-একে বিভিন্ন দেশে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন শুরু হয়। স্বাভাবিকভাবেই হই-হুল্লোড়, উন্মাদনায় মেতে ওঠে গোটা বিশ্ব।

শুধুই কী শব্দ, দূষিত হয়েছে বায়ুও। অনেকে বলছেন, কালীপুজো, দীপাবলি, ছটপুজো-সহ প্রতিটি উৎসবের মরসুমে শব্দ-বায়ুদূষণের লেখচিত্র যে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল, সে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল রবিবার রাতে, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে। পরিবেশবিদেরা জানান, শীতের রাতে এমনিতেই দূষণ বাড়ে। তার উপরে আতসবাজির ধোঁয়ায় তা আরও বেড়েছে। এক পরিবেশকর্মী বলছেন, ‘‘শব্দ ও বিপজ্জনক বায়ুদূষণ দিয়েই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে কলকাতা।’’ আতসবাজি না হয় নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু ডি জে এবং শব্দবাজি তো নিষিদ্ধ। তা হলে সেগুলি এত উপদ্রব চালাল কী ভাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here