দেশের সময় : শীত-উৎসবের আবহাওয়া বলতে যা বোঝায়, সেই হিমেশ পরশ সকাল থেকে তেমন ছিল না। কিন্তু বছরের প্রথম দিন, ঠান্ডা ‘আহা মরি’ না হলেও এই হাল্কা শীতের স্পর্শেও অখুশি নয় শহর।

কল্পতরু উৎসব উপলক্ষ্যে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ভক্তদের ভিড় ছবি তুলেছেন – ধ্রুব হালদার ৷

উৎসবের মেজাজটা সকাল থেকেই মালুম হচ্ছিল। কলকাতা ছাড়িয়ে পিকনিকে শামিল হবে, না শহরের ভিতরে চিরাচরিত চিডি়য়াখানা-ভিক্টোরিয়ার বাগানের শীত-পার্বণে যোগ দেওয়া হবে— সেই ধন্দ যথারীতি উঁকি দিয়েছে।

ছবি- দেবাশিস রায় ।

গত কয়েক বছরে এই দিনগুলিতে শহরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হয়ে উঠেছে নিউটাউনের ইকো-ট্যুরিজ়ম পার্ক। বছরের শেষ দিনটিতে ইকো পার্কের সাতটি বিস্ময় না আলিপুরের পশুপাখির বাগানে ৷

সিংহ-জাগুয়ার-ক্যাঙারুদের চাক্ষুষ করার মজা— বেছে নেওয়া সহজ কাজ ছিল না কলকাতার জন্য।
সোমবার সকাল থেকেই পিকনিকের মেজাজে দেখা গিয়েছে ময়দান এলাকাকে। দল বেঁধে জড়ো হয়ে দেদার খাওয়াদাওয়া চলল সেখানে। তার পর সেই ভিড়ই আবার ছড়িয়ে পড়ল শহরের নানা প্রান্তে।

দুপুরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, টিকিট কাউন্টারের সামনে কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা নেই। দিনভর চলেছে অত্যুৎসাহী যুবকদের বাঘকে ছোলা খাওয়ানোর পালা। জিরাফ ও জেব্রার খাঁচায় নির্বিচারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে বিস্কুট, কমলালেবু বা কমলালেবুর খোসা। বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে তার হালুম ডাকে চমকে উঠেছিল উত্তর কোলকাতার স্কুল ছাত্র মৃন্ময় সেন ৷ তার কথায়, ‘‘সামনে থেকে বাঘ এই প্রথম দেখলাম। তাই এত কাছ থেকে ডাক শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’

ছবি- দেবাশিস রায়।

অতিরিক্ত ভিড় দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাঘ-সিংহদেরও বারবার খাঁচার ভিতরের ঘরে লুকোতে দেখা গেল। তা সত্ত্বেও চিড়িয়াখানায় এসে বাঘ-সিংহ দেখে খুশি দর্শকেরা।

ছবি- দেবাশিস রায় ৷

ব্যারাসত থেকে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে এদিন প্রথম বার সারাদিন চিড়িয়াখানায় সপরিবার কাটালেন মইদুল ইসলাম ৷ মইদুলের কথায়, ‘‘আমরা পিকনিকের আমেজে ছিলাম। আজ আসব বলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। বাড়ি থেকে সারাদিনের খাবার নিয়ে এসেছিলাম।’’

বছরের প্রথম দিন অনেকে ছুটির মেজাজে কাটাচ্ছেন। সকাল থেকেই ডায়মন্ড হারবার, ইছামতী, গড়চুমুকের মতো পিকনিক স্পটগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। চলছে ডিজে বাজিয়ে পিকনিক, নৌকাবিহার, খানা পিনা। 


আবার ভিন্ন চিত্রও আছে, অনেকেই ভক্তির সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পৌঁছে গেছেন মন্দিরে-মঠে। তাই বেলুড় মঠ, তারাপীঠ, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরে, কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় জমেছে। পরিবারের মঙ্গলকামনায় পুজো দিয়েছেন অনেকেই।

সোমবার কল্পতরু উৎসব ঘিরে বেলুড় মঠে ভক্তদের ঢল নেমেছে। ভোর পাঁচটা থেকে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মঙ্গল আরতির মাধ্যমে পুজো শুরু হয় মঠে। সারাদিন নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে শুরু করে। 

ছবি- ধ্রুব হালদার ৷

পয়লা জানুয়ারির এই বিশেষ দিনেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব কল্পতরু হন। সেই ঘটনাকে সামনে রেখে প্রতিবছর এই দিনে বেলুড় মঠে কল্পতরু উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভক্তদের কাছে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে বছর শুরু করেন তাঁরা। এই উৎসব ঘিরে ভক্তদের জন্য বিশেষ আয়োজন করেন মঠ কর্তৃপক্ষ। থাকে ভোগ খাওয়ানোর আয়োজনও।

শুধু বেলুড় মঠ নয়, ভোর থেকে পুজো দিতে ভক্তদের লাইন পড়েছে দক্ষিণেশ্বরেও। দেবী ভবতারিণীর পুজো দিয়ে নতুন বছরের সূচনা করছেন তাঁরা। এই বিশেষ দিনে মন্দির চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আঁটোসাঁটো। 

ছবি- ধ্রুব হালদার ৷

Kalpataru Utsav 2023: আজকের দিনে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। ১৮৮৬ সালের সেই দিনকে স্মরণে রেখেই পালন করা হয় কল্পতরু উৎসব। কাশীপুর উদ্যানবাটি, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পাশাপাশি এই দিনটি পালিত হয় শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুরেও।

ছবি- ধ্রুব হালদার ৷

ভোরে মঙ্গলআরতির মধ্যে দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়েছে কামারপুকুরে। সারাদিন ধরে চলবে পূজাপাঠ, বৈদিক মন্ত্র, স্তোত্রপাঠ। ভক্তদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে। শনিবার গভীর রাত থেকেই ভক্তদের জমায়েত হতে শুরু করেছে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। এবছর পুরনো নিয়ম মেনেই ঠাকুর দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুল হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে অগুণতি ভক্ত। সকালে ভিড় এতটাই হয়েছিল যে কাশীপুর ডাকাত কালীবাড়ি পেরিয়ে গোপাল চ্যাটার্জ্জী রোড ধরে তা পৌঁচ্ছে গিয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। ভিড় এড়াতে এবছর উৎসব দু দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে কল্পতরু উৎসব। আগামী দুদিনও ভক্তরা ঠাকুর দর্শন করতে পারবেন। নতুন বছরের প্রথমদিনে ভক্তসমাগমের কথা মাথায় রেখেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খিচুড়ি ভোগের।

কাশীপুর উদ্যানবাটি ঠাকুর এর শয়ন কক্ষ- ধ্রুব হালদার

একই ছবি ধরা পড়েছে তারাপীঠেও। সারা বছর যাতে ভালো ভাবে কাটে, এই কামনা নিয়ে ভক্তরা তারা মা-র পুজো দিয়েছেন ।  রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষকে ডালা হাতে লাইনে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভোরে দেবীর মঙ্গল আরতি দিয়ে পুজো শুরু হয় তারাপীঠে। ভক্তদের ভিড় সামলাতে সেখানেও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, এদিন মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকলে ভক্তদের মোবাইলে ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। কয়েকদিন আগেই মন্দির কমিটি গর্ভগৃহে ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

একদিকে যখন মাইথনে পিকনিক করতে আসা মানুষ ভিড় জমিয়েছেন , অন্যদিকে কাছে থাকা কল্যাণেশ্বরী মন্দিরেও ভক্তরা ভিড় করেছিলেন।  সেখানে পুজো দিয়ে অনেকেই বছর শুরু করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here