দেশের সময় ,বনগাঁ : আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বিবাদ। আর তার জেরেই এক গৃহবধূকে প্রকাশ্যে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করল বধূর দেওর, ননদ এবং শাশুড়ি। ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় ৩ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন সাজা দিল আদালত।দেখুন ভিডিও

রায় ঘোষণা হতেই সরকার পক্ষের আইনজীবীকে ফুলের মালা পরিয়ে উচ্ছ্বাস গ্রামবাসীদের। প্রসঙ্গত, গত বছরের ফেব্রুয়ারির ২৭ তারিখ নৃশংস এক খুনের ঘটনা ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার হাটখোলা এলাকায়। কুপিয়ে খুন করা হয় ফুলমালা কীর্তনীয়া নামে এক গৃহবধূকে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হতেই তদন্তে নেমে পুলিশ ওই গৃহবধূর দেওর অমর কির্তনীয়া, শাশুড়ি সারথী কীর্তনীয়া এবং ননদ রাধিকা কির্তনীয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকেই চলছিল শুনানি।স্বামী সমীর কীর্তনীয়া এবং ছেলে সুমন কাজের সূত্রে অন্য রাজ্যে থাকতেন।

ফুলমালার দেওর অমর কীর্তনীয়ার সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত পারিবারিক বিবাদ ঘটেছিল ফুলমালাদের সঙ্গে। দুই পরিবারের জমির সীমানার মাঝে একটি আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে যে শেষপর্যন্ত একটা জীবন এইভাবে চলে যাবে, তা কোনওভাবেই ভাবতে পারেন নি ফুলমালার পরিবারের সদস্যরা।


এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সঞ্জয় দাস জানান, গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী সকাল ৯ টা নাগাদ আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে ফুলমালার সঙ্গে তাঁর দেওর অমর কীর্তনীয়ার বিবাদ বাধলে সেখানে হাজির হয় ফুলমালার ননদ রাধিকা সরকার কীর্তনীয়া এবং শাশুড়ি সারথী কীর্তনীয়া।

এরপর তিনজন মিলে নৃশংসভাবে একটি কুড়ুল দিয়ে ফুলমালাকে একের পর এক কোপ দিয়ে প্রকাশ্যে খুন করে। ঘটনার পর প্রতিবেশীরা এসে তিনজনকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এই ঘটনায় ফুলমালার দেওর, ননদ এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ফুলমালার ভাই কমল হাওলাদার।

ধৃত ৩ জনের মধ্যে কিছুদিন পর হাইকোর্ট থেকে ননদ রাধিকা জামিনে মুক্তি পেলেও দেওর অমর এবং শাশুড়ি সারথীর বনগাঁর ২ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে কাষ্টডি ট্রায়াল হয়। মোট ২৫ জন সাক্ষী এবং অন্যান্য তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ২৩ ফেব্রুয়ারী অভিযুক্ত ৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক।

অবশেষে খুনের ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় মঙ্গলবার দুপুরে বিচারক পরেশচন্দ্র কর্মকার দোষী ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেন। এদিন রায় শুনতে হাজির ছিলেন মৃত ফুলমালার স্বামী, ছেলে সহ অন্যান্য পরিজন এবং গ্রামের মানুষেরা। তাঁরা চেয়েছিলেন, দোষীদের যেন ফাঁসি হয়।

আদালতের রায়ে খুশির হাওয়া মৃতার গ্রামে। খুনের পরই অভিযুক্তদের কঠোর থেকে কঠোরতম সাজার দাবি করেছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। অবশেষে আদালত অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দেওয়ায় খুশি সকলেই। খুশি মৃতার পরিবারের সদস্যরাও। তাঁরা বলছেন, আর তো আমাদের মেয়েকে ফিরে পাব না। কিন্তু, ওরা সারা জীবন জেলে থাকুক। বুঝক এ কাজ করলে কী হতে পারে শেষ পর্যন্ত। তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আসমি পক্ষের আইনজীবী দেবাকর বিশ্বাস। শীঘ্রই তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here