দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ শুক্রবার দুপুরে বারাণসী থেকে কলকাতায় ফেরার সময় বিমানের অস্বাভাবিক ঝাঁকুনিতে পিঠে আঘাত পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানটি কলকাতার আকাশসীমায় পৌঁছনোর পর হঠাৎ করেই তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে অনেকটা নিচে নেমে আসে। এই ঘটনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন । যদিও সরকারিভাবে এই ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। আগে থেকেই তাঁর কোমরে ব্যথা ছিল। ফলে কষ্ট বাড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত কতটা তাও বিশদে জানা সম্ভব হয়নি ৷

রাজ্য সরকারের ভাড়া করা ফ্যালকন বিমানে ইদানীং প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী যাতায়াত করেন। তবে এ দিন যে বিমানটিতে তিনি চড়েছিলেন, নির্দিষ্ট ভাবে সেই বিমানটিতে তিনি এর আগে সফর করেননি। ঘটনাচক্রে বিমানের দুই পাইলট ছিলেন বাবা ও মেয়ে। দুর্যোগ কাটার মিনিট চারেক পরে মুখ্যমন্ত্রীর বিমানটি কলকাতার মাটি ছোঁয়।

মুখ্যমন্ত্রী গত বুধবার বারাণসী যান। ওই দিন সন্ধায় তিনি বারাণসীতে গঙ্গার ঘাটে আরতি দেখেন। পরদিন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বারাণসীতে বিধানসভা ভোটের প্রচার সভায় ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেন তিনি। পূর্ব নির্ধারিত সূচি আজ দুপুরে তিনি বারাণসী থেকে বিমানে কলকাতায় ফেরেন।

এ দিন আকাশ ছিল যথেষ্ট পরিষ্কার। মেঘ, বৃষ্টি, ঝড় ছিল না। তবে বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিমানটি আচমকা একটি ঝঞ্ঝার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেখে পাইলট অত্যন্ত দ্রুততায় উচ্চতা প্রায় পাঁচ হাজার ফুট নামিয়ে দেন। তাতেই প্রবল ঝাঁকুনি ও উথালপাথাল। বিমানের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সহযাত্রীরা অবশ্য জানতে পেরেছিলেন, তাঁদের বিমানের সামনে অন্য একটি বড় বিমান এসে পড়ে। সেটিই হল বিপত্তির কারণ।

নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে, তা জানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। যদি তাঁর বিমানের সামনে অন্য কোনও বিমান এসেই থাকে, তা হলে বিষয়টি যথেষ্ট গুরুতর বলে নবান্নের একটি সূত্রের বক্তব্য। আর যদি ঝঞ্ঝার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের উচ্চতা আচমকা কমিয়ে দিতে হয়, তা হলেও তার সব খুঁটিনাটি জানতে উদ্যোগী হবে নবান্ন।

সাধারণত এই ধরনের অভিযোগ উঠলে দেশের আকাশের বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) তদন্ত করে। সে ক্ষেত্রে বিমান মাটি ছোঁয়ার পরে পাইলট লিখিত যে রিপোর্ট জমা দেন তা গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিনও পাইলট রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম আকাশে যখন সাত হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ছ’হাজার ফুটে নামছিলেন, আচমকাই সামনে ঝঞ্ঝাপূর্ণ মেঘ দেখতে পান। সে কথা তিনি কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে জানান। এটিসি তাঁকে দু’হাজার ফুট উচ্চতায় নেমে আসতে বলে। তিনি সেই মতো নেমে আসেন। বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাইলটের রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্তে নামবে ডিজিসিএ। তবে পাইলটের রিপোর্টে দ্বিতীয় কোনও বিমানের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানা যায়নি।

মুখ্যমন্ত্রীর বিমান যাত্রায় জটিলতার বেশ কয়েকটি ঘটনা এর আগে ঘটেছে। ২০১৬-তে একটি বেসরকারি বিমানে মুখ্যমন্ত্রী পাটনা থেকে কলকাতায় ফেরার পথে কলকাতায় নামার আগে তাঁর বিমানটিকে প্রায় আধ ঘণ্টা আকাশে চক্কর কাটতে হয় রানওয়েতে নামার অনুমতি না মেলায়। বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে আসায় পাইলট বারে বারে অবতরণের অনুমতি চাইলেও বিলম্ব করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রাজ্য সরকারের তরফে ওই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল এবং অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

২০১৭-তে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফেরার সময় তাঁর বিমান চার ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। পরের বছর বাগডোগরা থেকে কলকাতায় নামার আগে মুখ্যমন্ত্রীর বিমানকে অনেকক্ষণ আকাশে অপেক্ষা করতে হয় রানওয়ে ফাঁকা না থাকায়। ওই ঘটনায় রাজ্য সরকার প্রশ্ন তোলে, মুখ্যমন্ত্রীর বিমানটি অগ্রাধিকার পেতে পারে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here