দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘দিদির দূত’ হিসেবে তৃণমূলের যে ভলান্টিয়াররা কাজ করবেন, তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবেন তাঁরা। সারপ্রাইজ় ভিজিট করবেন। সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, সেই কথা শুনবেন তাঁরা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে একেবারে মিশে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একেবারে আমজনতার হেঁশেল পর্যন্ত যাতে পৌঁছে যেতে পারেন তৃণমূলের নীচু তলার কর্মীরা, এমন জনসংযোগের কথা বলা হয়েছে। এর জন্য এলাকায় এলাকায় নেতা-কর্মীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাত কাটানোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে আগেই৷

সেই বার্তার পর এবার গঙ্গাসাগরের মেলা পরিদর্শনে এসে হঠাৎই পূর্বঘোষিত কোনও কর্মসূচি ছাড়াই এক গৃহস্থের বাড়ির হেঁশেলে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সময় কাটালেন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে। যেন ‘দিদির দূত’-দের কেমন হওয়া উচিত, এদিন তারই একটি মডেল তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বুধবার গঙ্গাসাগরে এসে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল কপিলমুনির আশ্রমে। কিন্তু যাওয়ার পথেই মাঝে আচমকা একটা দোকানে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই দোকান থেকে নিজের পরিবারের মহিলাদের জন্য ব্যাগ ও হার কেনেন তিনি।

আর তারপরই বাড়ির ভিতরে ঢুকে যান। সোজা ঢুকে পড়েন বাড়ির অন্দরমহলে। সেখানে তিনি রান্নাঘরও যান। কথা বলেন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে। সেই বাড়িতে গ্যাসের ওভেন রয়েছে। পাশাপাশি রান্নাঘরে একটি মাটির উনুনও রয়েছে। গ্যাসের ওভেনের পাশাপাশি মাটির উনুন দেখে মুখ্যমন্ত্রী বেশ আনন্দিত হয়েছেন বলেই দাবি ওই গৃহকর্ত্রীর।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়িতে আসায় বেজায় খুশি ওই গৃহকর্ত্রী। তাঁর রান্নাঘরের মাটির উনুনটি বেশ পছন্দ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী। বাড়িতে কী কী রান্না হয়েছে, সেই সবও খোঁজখবর নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে একটি কলসিও রয়েছে, সেই কলসিটিও মুখ্যমন্ত্রীর বেশ পছন্দ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে কি এত কাছে আর রোজ রোজ পাওয়া যায়? তাই আজ যখন মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে ঢোকেন, তখন সটান তাঁকে প্রণাম সেরে ফেলেন ওই গৃহকর্ত্রী। বাড়ির কর্তার নাতিকে একটি খেলনাও কিনে দেন তিনি।

সম্প্রতি নজরুল মঞ্চের একটি দলীয় বৈঠক থেকে ‘দিদির দূত’দের ভূমিকা নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। দলের নেতাদের বলেছিলেন, তাঁরা যাতে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি যান। প্রয়োজনে তাঁদের হেঁশেলেও যেন ঢুকে যান। আসলে সেই বার্তার পিছনে ছিল, জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ। আর এদিন গঙ্গাসাগরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই প্রকল্প উদ্বোধনের মাঝখানে শুরু করে দিলেন সেই জনসংযোগের কাজ। যদিও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার এমন নিদর্শন এর আগেও অনেক রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। অতীতে কোথাও চায়ের দোকানে ঢুকে পড়া, কোথাও আবার নিজে হাতেই মোমো বানানো- এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।

হাতে আর মাত্র দিন কয়েক।তার আগে সাগরের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে গিয়ে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। গঙ্গাসাগরের হেলিপ্যাড থেকে তিনটি হেলিপ্যাডের উদ্বোধন করেন। আক্ষেপ প্রকাশ করেন সাগর নিয়ে। কেন্দ্র চাইলে গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করতে পারেন বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এদিন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে যান তিনি। সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানান। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার জন্য শুভকামনা জানান। বলেন গঙ্গার পবিত্র জলে, মানুষের মন পবিত্র, মুক্ত হোক। শরীর সুস্থ থাকুক সকলের। 

নিজের বক্তব্যে বলেন, সাগর আর গঙ্গা আলাদা নয়। আগে কথা ছিল সব সাগর বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। এখন বদলে গিয়েছে, এখন বলা যায়, সব সাগর একবার, গঙ্গা সাগর বারবার। কারণ গঙ্গাসাগরের মানুষ আমাদের সহায়তা করেছেন সমগ্র বিষয়ে। উঠে আসে মুড়িগঙ্গা ব্রিজের প্রসঙ্গ। কেন্দ্র সহায়তা করেনি, আগামী দিনে মানুষ চাইলে, টাকার যোগান হলে, মুড়িগঙ্গার ওপর ব্রিজ তৈরি হবে বলেও জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here