দেশের সময়,কলকাতা: সব কিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, এদফায় উত্তরবঙ্গে দুটি প্রশাসনিক বৈঠক করার পাশাপাশি চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন মমতা। রয়েছে একগুচ্ছ কর্মসূচিও।

ধূপগুড়ি উপ নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের পর এটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফর। আবার বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। তাই সবদিক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এবারের পাহাড় সফর যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

এদফায় পাহাড় সফর থেকে মুখ্যমন্ত্রী নতুন কী কী ঘোষণা করেন, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

নবান্ন সূত্রের খবর, চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তবে ডিসেম্বরের শুরুতেই পাহাড় সফরে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পেন সফর থেকে ফিরে আসার পর পায়ের চোটের কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে বেশ কিছুদিন বাড়িতে থাকতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে।

পা একটু সুস্থ হতেই ফের নবান্নে যাওয়া-আসা শুরু করেছেন। এরপরই উত্তরবঙ্গ সফরের জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের ইঙ্গিত দেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক মহলে এব্যাপারে তৎপরতাও শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে দুটি প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। চা-বাগান শ্রমিকদের হাতে তুলে দেবেন বসত জমির পাট্টাও। এছাড়াও আরও একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এদিকে,প্রায় পাঁচ মাস থমকে থাকার পর ডিসেম্বর থেকে ফের শুরু হতে পারে বিজেপির ‘মেগা’ সমাবেশ। ঠিক হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনের আগে বছরভর রাজ্যে প্রায় ৪০টি সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। সেই মতো বাংলায় বেশ কয়েকটি জায়গায় সভা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে কার্যত বন্ধ সেই কর্মসূচি।

সূত্রের খবর, ডিসেম্বর থেকে রাজ্যে ঝড়ের গতিতে ফের সভা শুরু করতে পারেন বিজেপির তিন শীর্ষ নেতা। তবে এর আগে একাধিক বার নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত নানা কারণে সভা বাতিল হয়েছে। এ বার কী হতে চলেছে, সেই দিকে তাকিয়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা।

প্রসঙ্গত,পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ সত্ত্বেও বঙ্গে নিজেদের ‘রেকর্ড’ সংখ্যক আসন জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল-সহ নিজেদের ‘গড়ে’ উল্লেখযোগ্য ফলাফল হয়নি তাদের। এর পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় নেতাদের সক্রিয়তাকে ‘মানদণ্ড’ করে জেলা কমিটিতে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। যার জেরে আবার জেলায় জেলায় শুরু হয় বিক্ষোভ।

মোদী সরকারের নবম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশ জুড়ে ৫১টি সভা করার কথা ছিল বিজেপির এই ত্রয়ীর। কিন্তু সেই সময় রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ওই কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়। কথা ছিল, নির্বাচন মিটলেই রাজ্যে আসবেন তাঁরা। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পরেও কেন আর কিছু হচ্ছে না, তা নিয়ে জল্পনা আছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।

দলের একাংশের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের পরে সাংগঠনিক রদবদলের জেরে জেলায় জেলায় বিজেপির মধ্যে যে ভাবে কোন্দল ও বিক্ষোভ মাথা চাড়া দিয়েছে, তার ফলেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আপাতত বঙ্গ সফর এড়িয়ে চলেছেন। সেই জট কাটতে পারে ডিসেম্বরে।

সূত্রের খবর, এই নিয়ে যথেষ্ট বিচলিত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিছু ঘটনা নজরে আসার পরে এই রাজ্যের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা। রিপোর্টে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কি বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব অপারগ?

রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, এই কোন্দলের পরিস্থিতির মুখোমুখি যাতে হতে না হয়, সেই কারণেই এত দিন বঙ্গ সফর এড়িয়ে যাচ্ছিলেন শাহ-নড্ডারা। পুজোর উদ্বোধনে শাহ কলকাতায় এলেও সাংগঠনিক আলোচনার জন্য সময় খরচ করেননি।

সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শাহের যাত্রাপথে রাজ্যে দল পরিচালনা নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছেন। পুজোর মধ্যে নড্ডার কলকাতা সফরও ছিল মূলত অরাজনৈতিক।

যদিও কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মুখ খুলতে চাননি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here