দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ পাখির চোখ পঞ্চায়েত নির্বাচন। হাওড়ার পাঁচলায় সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯০০ টিরও বেশি সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন তিনি। এক দিনে ৬ লক্ষ মানুষকে সরকারি পরিষেবা নজিরবিহীন, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর কী কী বললেন, দেখুন এক নজরে…

আগরতলায় যা বলেছিলেন, পাঁচলায় সেই একই শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । আদানির নাম করলেন না। তবে বৃহস্পতিবার আরও একবার এলআইসির প্রসঙ্গ টেনে বাংলার মানুষকে সতর্ক করতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন পাঁচলার সরকারি কর্মসূচি থেকে মমতা বলেন, ‘এলআইসিতে অনেকে টাকা রাখেন। ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন। সব চলে যাচ্ছে আদার ব্যাপারীদের ঘরে।’ মমতা আরও বলেন, ‘যে কোনও দিন বলবে এলআইসি উঠিয়ে দাও, ব্যাঙ্ক উঠিয়ে দাও।’

অনেকের মতে, জাহাজ ব্যবসায় যাদের বিপুল প্রতিপত্তি তাদের নাম হয়তো কৌশলেই আদার ব্যাপারী বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। আদার ব্যাপারী উল্লেখ করে আসলে ঘুরিয়ে এমনভাবে বলছেন, যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে। দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষের অ্যাকাউন্ট রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কে। ভারতের প্রায় ২৭ কোটি মানুষের সঞ্চয় রাখা আছে এলআইসিতে। আদানিদের শেয়ারের দর পতনে যখন এই দুই সরকারি ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সেই আবহে এই দুই সংস্থার নাম নিয়েই জনতাকে সতর্ক করতে চাইলেন মমতা।

আদানি কাণ্ডে যখন সংসদ উত্তাল তখন দেখা গিয়েছে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখিয়েছে দিল্লির এসবিআই ও এলআইসি সদর দফতরের সামনে। অনেকের মতে, সাধারণ মানুষ আদানির শেয়ারের দরের পতন, হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট অতশত বোঝেন না। তাঁরা এসবিআই, এলআইসি জানেন। কারণ সেখানে তাঁদের আমানত রয়েছে। তাই তৃণমূলও হয়তো বারবার করে এলআইসি-এসবিআইয়ের কথাই তুলে ধরছে।

এদিনও আবাস, সড়ক ও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদান না পাওয়া নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘১০০ দিনের কাজের ৭ হাজার কোটি টাকা আমরা পাই। কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। আমি কেন্দ্রকে বলব, গরিব লোকের টাকা মারবেন না, তাঁদের ফিরিয়ে দিন।’

আজ সভা থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নিউটাউনের ইকো পার্কে “হরিণালয়” মিনি চিড়িয়াখানা-র শুভ উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইকো পার্ক “হরিণালয়ে” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন ও অচিরাচরিত শক্তি উৎস দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ বনদপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ ।

এদিন নিউটাউনের ইকো পার্কে “হরিণালয়” মিনি চিড়িয়াখানা-র শুভ উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ইকো পার্ক “হরিণালয়ে” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বন ও অচিরাচরিত শক্তি উৎস দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ বনদপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকবৃন্দ ।

এক দিনে ৬ লক্ষ মানুষকে সরকারি পরিষেবা নজিরবিহীন, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর কী কী বললেন, দেখুন এক নজরে:

বনদফতর ৩৯২টি মোটর সাইকেল দিয়েছে। পশুদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। আরেকটা চিড়িয়াখানা হল। ডিয়ার পার্ক হয়েছে। হুগলিতে বলাগড়ের সবুজ দ্বীপ, দারুণ একটা জায়গা। সেখানেও আমরা ট্যুরিজম করে দিয়েছি।

ফুরফুরা শরিফে ৩০ বেডের হাসপাতাল ছিল। ১০০ বেডের হাসপাতালের শিলান্যাস হল আজ। সাগর হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিট চালু হল। হুগলির ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল, ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুটি ক্রিটিক্যাল ইউনিটের শিলান্যাস।

পিএইচই দফতর ২০৮ টি পানীয় জল প্রকল্পের শিলান্যাস। ২৫৯১ কোটি টাকা। ৫০ লক্ষ মানুষ এর ফলে বাড়িতে জল পাবেন। গ্রামীণ এলাকাতেও বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবে।

২০২৪ সালের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব, সব বাড়িতে যাতে জল পৌঁছে যায়। ৫৬ টি ভূগর্ভস্থ পানীয় জল সরবরাহ কেন্দ্র হল হাওড়াতে। ৫ লক্ষ ৫৯ হাজার মানুষ উপকৃত হলেন।

মনীষী পঞ্চানন বর্মা জন্মদিন, ওঁ একজন জ্ঞানী মানুষ। তাঁর জন্মদিনে ছুটি দেওয়া আছে। বিশ্ববিদ্যালয় আগেই হয়েছে, এখন তাঁর অডিটোরিয়াম করেছে এসজেডিএ এবং তথ্যাগার ও লোক শিল্পীকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হল।
হাওড়া জেলায় ৫৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫২৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কেবল হাওড়া জেলাতেই ৬ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষ পরিষেবা পেয়েছেন আজ।

৬৬ একর জমির ওপর ফুটপাত গড়ে তোলা হচ্ছে। ১১৯টি প্লট বন্টন করা হবে। তাতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। লোকাল ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। আজকে তিন জনকে ‘অ্যালোটমেন্ট লেটার’ দিয়ে দেওয়া হল।

বানতলায় ৪০০ ট্যানারি আছে. তার মধ্যে ২০০ টা গড়ে উঠেছে গত এক বছরে। ৯২ টাকে লিজ় দেওয়া হয়েছে। চর্মশিল্পে ৫০ টি ইউনিট রয়েছে, আরও ৫০ টা গড়ে উঠছে। এখানে ৩০ হাজার কোটির বিনিয়োগ হয়েছে, আরও ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে। ৩ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে কেবল বানতলায়। রাজ্য সরকার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়।

প্রাণীদের চিকিৎসার জন্য ২১৮টা অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। ১২৬ টি ব্লকে চালু হয়েছে। হাওড়ায় কোণা এক্সপ্রেসের ওপর নব নির্মীত সেতুর সঙ্গে ২ লেনের আন্ডারপাস করে দেওয়া হয়েছে। ২ নম্বর ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। ২ লেনের রাস্তা বাড়িয়ে চার লেনের করা হয়েছে।

সাঁকরাইলে পানীয় জল প্রকল্পের শিলান্যাস. ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। হাওড়া জেলা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জেলা। হাওড়াকে বলা হত প্রাচ্যের ম্যাঞ্চেস্টার। শিল্পের পুণ্যভূমি। বাম আমলে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

হাওড়ার ৯৫ শতাংশ মানুষকে কিছু না কিছু সরকারি পরিষেবা। হাওড়ার পাঁচ হাজার শিল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। ৬৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আরও ২০ হাজার ৩০০র বেশি শিল্পে বিনিয়োগ। ফলে দেড় লক্ষের কর্মসংস্থান হবে।

দেউচা পাঁচামিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। ১০ হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজ। যাঁরা জমি দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি। পুরুলিয়ায় ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ।

কন্যাশ্রীর মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্কলারশিপ পাচ্ছে। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড। এছাড়াও লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন।

গরিব লোকের টাকা মারবে না কেন্দ্র। টাকা ফেরত দিন। ১০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দিয়েছে রাজ্যের পয়সা থেকে। আবাস যোজনা, বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা দেয় না। ১১ লক্ষ লোকের বাড়ির টাকা পড়ে।

রেশনে ফুড সাবসিবি কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছি। আবাস যোজনায় টাকা আমাদেরও দিতে হয় , ওরা একা দেয় না। ৬০-৪০ অনুপাতে টাকা দিতে হয়। ওরা শুধু ছবি লাগায়। বাড়ির টাকা ওরা একা দেয় না। রাজ্য থেকেও তুলে নিয়ে যায়। মাছের তেলে মাছ ভাজে। রাজ্য সরকার শুল্ক নেয় না। কেন্দ্র নেয়। এখন জিএসটি হয়েছে। যে ভাগটা আমরা পাব, সেটা দিচ্ছে না।

নির্বাচনের সময় বড় বড় কথা। উজ্জ্বালা গ্যাস দেবে, তারপর ধাঁ। লাইফ ইনস্যুরেন্সে অনেকের টাকা রয়েছে। হাইজিং লোন আছে, ব্যাঙ্কের জমা আছে… সেই টাকাগুলো কোথায় যাচ্ছে? আদার ব্যাপারীদের ঘরে চলে যাচ্ছে। যে কোনও দিন বলবে, এলআইসি, ব্যাঙ্ক উঠিয়ে দাও।


বাংলার বাড়ি প্রকল্প, আপনারা ভাবছেন করছি না কেন, কিন্তু করব কীভাবে, টাকা দেয়নি তো। রাস্তাগুলো করতে পারছি না। রাস্তা সংস্কারের জন্য আপাতত ২ হাজার কোটি টাকার একটা প্ল্যান তৈরি করছি।
শুধু ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজেদের প্রচার করে, গরিবের অন্ন কাড়ে। তপশিলি, আদিবাসী ভাইবোনেরা কত ভাল পড়াশোনা করছে।

কোনও ঝগড়াঝাটি নয়, বাংলা ভাগ আমরা করতে দেব না। যাদের কাজ নেই, তারা ঘুম থেকে উঠে টেলিভিশনের সামনে বসে পড়ে। ওই একটা টিকটিকি পড়ে গেল, সারাদিন চলছে তো চলছে। একটা ভালো কথা বলে না, কারণ কেন্দ্র বলে দিয়েছে, আমাদের খবর চালাতে হবে, তা না হলে তোমার চ্যানেল কেটে দেওয়া হবে। দিল্লি থেকে অনেক নতুন চ্যানেল এসেছে, আমাদের বিরুদ্ধে বলে যায়। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। তোমরা আমায় গালাগালি দিলে আমার গালে ফসকা পড়বে না।

লড়তে হলে লড়, গড়তে হলে গড়ো, তা না হলে দড়ি আর কলসি আছে…আগে বাংলাকে দেখে মুখ ভ্যাঙাত। এখন এসে দেখে যাও। সারা দেশে ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান কমে গিয়েছে, বাংলায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়ে গিয়েছে।
কোচবিহারে বিমানবন্দর, অন্ডালেও তৈরি, মালদাতেও তৈরি, বালুরঘাটেও প্রায় তৈরি। বাংলায় ২৭টা স্থায়ী হেলিপ্যাড।

এখন একটা অ্যাপ করেছি। যে যদি কোনও বজ্জাতি করে, তাহলে অ্যাপের প্যানিক বটম টিপে দেবেন, দেখবেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে যাবে। আমাকে সেদিন সায়নী বলল, দিদি রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, গাড়িটা খারাপ হয়ে গিয়েছে, দেখলাম হঠাৎ পুলিশ হাজির। জিজ্ঞাসা করছিল, আপনার কী গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে? তার মানে আপনাদের প্রত্যেকটা গাড়ি কন্ট্রোল করা হচ্ছে, কে কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, কোথাও কোনও দুষ্টুমি করছে কিনা, তাও ট্র্যাক হয়ে যাচ্ছে।

সব উৎসব সুন্দরভাবে পালন করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here