দেশের সময় : লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ । মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার শনিবার দুপুর ৩টেয় সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন। 

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, আগামী ১৬ জুন শেষ হচ্ছে চলতি লোকসভার মেয়াদ।

রাজীব জানান, প্রথম দফায় ২১ রাজ্যে ভোট হবে। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল।   তৃতীয় দফার ভোট হবে ৭ মে। চতুর্থ দফার ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম দফার ভোট হবে ২০ মে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটগণনা।

 

৯৭ কোটি ভোটার ভোট দেবেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে। ৪৯.৭ কোটি পুরুষ ও ৪৭.১ কোটি মহিলা ভোটার। নতুন ভোটার ১.৮২ কোটি। শতবর্ষের উপরে আয়ুর ভোটারের সংখ্য়া ২.১৮ লক্ষ। ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা ৪৮ হাজার। ৫৫ লাখ ইভিএমের ব্যবস্থা করা হবে।

এবারে বেড়েছে মহিলা ভোটারের সংখ্যা। ৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ রাজ্য এমন রয়েছে, যেখানে পুরুষ ভোটারের তুলনায় মহিলা ভোটারের সংখ্যা বেশি।

নির্বাচনে হিংসার কোনও জায়গা নেই। লোকসভা নির্বাচনে যেন রক্তগঙ্গা না বয়, তা নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের। অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা করা হবে। নির্দেশ জেলাশাসকদের।

নির্বাচনী ডিউটিতে সরকারি কর্মীদের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কড়া নিয়ম। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও কাজে। নির্দেশ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের।

১১ রাজ্যের নির্বাচনে ৩৪০০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন আটকানো হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে টাকার ব্যবহার করে ভোটারদের প্রভাবিত করা যাবে না। সমস্ত এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোনও বিনামূল্যে উপহার দেওয়া চলবে না। টাকা, মদ, শাড়ি, প্রেসার কুকারের মতো জিনিস দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেই কড়া পদক্ষেপ। জিএসটি-র মাধ্যমে নজর রাখা হবে যে কোনও পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বাড়ছে কি না। বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি। যে রাজ্যে হেলিকপ্টার অবতরণম করে, সেখানেও চেকিং হবে। রেল ও সড়কপথেও কড়া নজরদারি চালানো হবে।

নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার নিয়েও আমরা সতর্ক। ফেক নিউজ তৈরি করা যাবে না। এবারের নির্বাচনে নয়া নিয়ম- রাজ্যের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিলিট করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। তথ্য যাচাই করা হবে। নিজেরাও সতর্ক হন। যাচাই না করে শেয়ার করবেন না।

প্রত্যেক তারকা প্রচারককে নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইনের নোটিস দিতে হবে। ইস্যু ভিত্তিক প্রচার হোক, কিন্তু ঘৃণামূলক মন্তব্য, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ করা চলবে না।

সংবাদমাধ্যমকেও নির্দেশ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। কোনও বিজ্ঞাপন হলে, তা জানিয়ে দিতে হবে।

৫৩৭ দলকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরা প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিত। অন্য দলের গাড়ি ব্যবহার করত। এমন দল-কে এবার নির্বাচন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের ডিজিটাল রেকর্ড থাকবে কমিশনের কাছে।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কোনওভাবে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। কড়া নির্দেশ কমিশনের।

মোট ২১০০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। তারাই বাহিনী নিয়োগ করবেন।

৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের কাছে ফর্ম পৌঁছে দেওয়া হবে। তারা বুথে না আসলে, বাড়ি গিয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সকলকে ভোট দিতে আসার আবেদন জানালেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজীব জানান, লোকসভা ভোটের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘নো ইওর ক্যান্ডিডেট’ নামে নতুন অ্যাপ চালু করা হচ্ছে, যেখানে প্রার্থীদের বিষয়ে বিশদে জানা যাবে।

প্রার্থীর অপরাধের ইতিহাস বা ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে, তাঁকে তিনবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও জানাতে হবে, কেন অপরাধের ইতিহাস থাকা কাউকে প্রার্থী করা হল, অন্য কেউ কেন প্রার্থী হলেন না।

রাজীব বলেন, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে বেশ কিছু বাধা পেরোতে হবে কমিশনকে। তার জন্য অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, যাঁরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। হিংসা বা রক্তক্ষয় হতে দেওয়া যাবে না।’’ তিনি জানান, কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে জানানো যাবে কমিশনকে। সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করবে কমিশন। জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কোনও রকম চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভোটের দায়িত্বে রাখা যাবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের হিংসার বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।

ভোটে যথেচ্ছ ভাবে টাকা ব্যবহার করাও রদ করা হবে বলে জানালেন রাজীব। তিনি জানান, কয়েকটি রাজ্যে ভোটে টাকার ব্যবহার বেশি হয়। সেগুলির দিকে নজর রাখছে কমিশন। টাকার অপব্যবহার হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য আমরা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কোনও রকম উপঢৌকন যাতে না দেওয়া হয়, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে সংস্থাগুলিকে। সমস্ত বিমানবন্দরগুলির দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যগুলিতে  কোনও হেলিকপ্টার নামলে, তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here