সৃজিতা শীল, কলকাতা :

পুজো শেষ৷ পুজোর শুরু যাঁদের হাতে হয়েছিল, তাঁদের আস্তানা কেমন আছে পুজোর শেষে?
ভাসানের পর নতুন আশাই বা কী তাঁদের, কোনগুলো আশঙ্কা? কুমোরটুলির দশমী ঘুরে দেখল দেশের সময়-

উমা এখানে বিদায় নেন মহালয়ার আগেই৷ তার পরই ফুরসত মিলেছে এতটুকু৷ আগন্ত্তক হলে হয়তো গভীর শূন্যতা অনুভব করবেন৷ কারণ কুমোরটুলি ফাঁকা৷ কিন্ত্ত কুমোরটুলির শিল্পীরা মানিয়ে নিয়েছেন বেশ৷ তাই বলে কি কাজ কমেছে?

দুগ্গা গিয়েছেন কৈলাসে ৷ কলকাতা শহরের মৃৎশিল্পের কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন জেলার শ্রমিকরা৷ মুঠোভরা আয়ে হয়তো উৎসবেও মেতেছেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত কুমোরটুলির স্থায়ী শিল্পীরা৷ একে একে মণ্ডপে গিয়েছে দুর্গাপ্রতিমা৷ কিন্ত্ত লক্ষ্মী, কালী, জগদ্ধাত্রী এখনও বাকি৷ তবে সেজন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় না৷

তার ওপর এ বছর পুজোর মুখেই আবার বৃষ্টি হয়েছে ঝেঁপে৷ তাই প্রতিমা গড়তে খরচও হয়েছে বেশি৷ সে সব স্মৃতি এখনও আঁকা দেওয়ালে৷ পলেস্তরা খসা দেওয়ালে এখনও অস্পষ্ট দুর্গামূর্তির অবয়ব৷ বাড়তি রংয়ের ছিটে যেন দেওয়াল জুড়ে এঁকেছে মাতৃমূর্তি৷


পুজোর দিন ক’টা কুমোরটুলির কাটে কাজে কম্মেই৷ যে সব শিল্পীরা স্থায়ী ভাবে কুমোরটুলিতে বসবাস করেন তাঁরা কয়েকদিন হয়তো বেরোন পরিবারকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে৷ বিশেষ করে যান সেই সব মণ্ডপে যেখানে রয়েছে তাঁর তৈরি মূর্তি৷ দেখুন ভিডিও

তবে সযত্নে তৈরি মূর্তির বিসর্জন নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁদের৷ তাই বলে বিজয়া দশমীর পর যখন মূর্তি জলে পডে় মন খারাপ কি হয় না? কিন্ত্ত বিসর্জন না হলে যে পরের বছর নতুন করে গড়ার সুযোগ আসবে না৷ নতুন বরাতও পাবেন না তাঁরা৷ বিসর্জন না হলে তো পেটও চলবে না তাঁদের৷ সৃষ্টি আর ধ্বংসের সমীকরণ তাঁরা বুঝে নিয়েছেন বেশ সহজে৷

কুমোরটুলির শিল্পীদের অনেকেই কিন্ত্ত সাবেকিয়ানার পক্ষে৷ পুজোকমিটি আর থিমের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে কুমোরটুলির শিল্পের ধারা৷ গোটা কাজটাই করতে হয় পুজো কমিটির নির্দেশে৷ তাই মৃৎশিল্পীর শিল্পসত্ত্বা চাপা পডে় থাকে মনের ভিতরেই৷ শিল্পী …. পাল-এর কথায়, ‘থিমের ঠাকুর বানিয়ে মজা নেই৷ যেমন বলল তেমন করে দিলাম৷ পয়সা আছে কিন্ত্ত নিজের তুলির টান দেওয়ার তৃপ্তি নেই সেখানে৷’


দশমীতে কুমারটুলি যেন উপডে় যাওয়া বুডে়াবটগাছতলা৷ প্রাচীন বট ঝডে় পডে় যাওয়ার পর সূর্যের প্রকাশিত আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়৷ তেমনই প্রতিমা মণ্ডপে চলে যাওয়ার পর বোঝা যায় মৃতৎশিল্পীদের কর্মশালাগুলির বিশালতা৷

কোথাও পডে় একটা বাঁশ, কোথাও কয়েক কাহন বিচালি৷ প্রকট শূন্যতা ভরাট করে পুরনো সিলিং ফ্যান৷

ধ্বংস না হলে সৃষ্টি কি করে হবে? তাই প্রতিমা নিরঞ্জন নয়, দশমীতেও ফাঁকা কুমোরটুলির আক্ষেপ অন্য কারণে৷ সখের ফটোশিকারিদের ‘অত্যাচার’ যে তাঁদের কী ভাবে সামলাতে হয় বর্ণনা দিলেন প্রায় সবাই৷ শিল্পী … বলেন, ‘দুগ্গা পুজোর আগে কটা দিন ফটোগ্রাফার বেড়ে যায়৷ ধরুন দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য খেতে গিয়েছি৷ ফিরে এসে দেখলাম কয়েকটা প্রতীমার হাত ভাঙা৷ কারও আঙুল নেই৷ কেউ ইচ্ছা করে একাজ করেছে বলছি না৷ কিন্ত্ত ক্ষতি তো আমাদেরই হচ্ছে৷ একে সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়৷ আর ছবি তুলতে যাঁরা আসেন তাঁদের পিঠে থাকে বড় বড় সব ব্যাগ৷ তার ধাক্কায় যে কী কী খসছে তার হিসেব আর কে রাখে? বারণ করলে বলে, অনুমতি নিয়ে ঢুকেছি৷ আচ্ছা আমার স্টুডিওয় অনুমতি কি দিয়েছে কেউ? তোলো না ছবি যত পারো, বাইরে থেকে৷’ প্রায় সব শিল্পীর একটাই অনুরোধ, ছবি তুলুন৷ তবে পিঠে ব্যাগ নিয়ে কুমারটুলিতে নয়৷


কথায় কথায় বেলা গড়ায়, কোথা থেকে ম্যাও ম্যাও করতে করতে হাজির হয় পালমশাইয়ের পোষা হুলোটা৷ গোল্লা পাকিয়ে আয়েশ করে ঘুমের আয়োজন করে নিজের পছন্দের জায়গাটায়৷ অনেকদিন পর পুনর্দখল করা গিয়েছে যে৷ ওখানেই তো ছিল একটা বিশাল মূর্তি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here