দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: কলকাতা পুরভোটের প্রচারে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শহরাঞ্চল, মফস্বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগগুলো বিরোধীরা সবচেয়ে বেশি করে তোলে, তার মধ্যে অন্যতম সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি। বুধবার ফুলবাগান মোড়ের সভা থেকে সিন্ডিকেট রাজ শব্দটি না বলেও দলকে তা নিয়েই কড়া বার্তা দিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে কলকাতার ভোটের ইস্তেহার প্রকাশে বিজেপির তরফে দীনেশ ত্রিবেদী যে ইস্যুকে মুখ্য করে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, এদিন সেটাকেও ভোঁতা করে দিতে চাইলেন দিদি।


উত্তর কলকাতার ফুলবাগানে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে জনসভা করেন তিনি। সেই সভা থেকেই কলকাতা পুরভোটের তৃণমূল প্রার্থীদের সতর্ক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার কয়েকটা কথা বলে যাচ্ছি, যাঁরা এলাকার সমস্যা দেখতে পারবেন না, তাঁরা কাউন্সিলর হবেন না।’ একটি ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, ‘নিজের পাড়া ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকদিন আগে বাড়িতে ফিরছিলাম। সেই সময় আমাকে একজন বলেন, দিদি পাইপটা ঠিক হয়নি। আমি কাউন্সিলরকে ফোন করে বলি কীরে এটাও কী আমি দেখব? এবার তাঁকে আর ভোটের টিকিট দিইনি।’

এদিন জনসভায় তিনি বলেন, ‘কোনও জায়গায় কিছু হলেই আগে কাউন্সিলরদের এগিয়ে যেতে হবে।’ প্রসঙ্গত, প্রশাসনিক বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের ধমক দিয়েছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘আমি বকার জন্য বলি না, সংশোধন করার জন্য বলি।’

তাঁর সতর্কবার্তা, ‘বাড়ির পারমিশনের জন্য অনেকেই বলেন আমাকে টাকা দিতে হবে, ভুলেও তা করবেন না।’ পরোক্ষে সিন্ডিকেট ইস্যু নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আশা করবেন না, আপনার এলাকায় আপনার থেকেই সব কিনতে হবে।’ সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর আবেদন, ‘সমস্তটাই অনলাইনে হয়ে গেছে। সেখানেই বাড়ি তৈরির জন্য আবেদন করুন। সাত দিনের মধ্যে অনুমতি পাবেন।’

পাশাপাশি সকলকে ভোটদানের জন্য আহ্বানও জানান তৃণমূল নেত্রী। বলেন, ‘কলকাতায় ভোটদান খুব কম হয়। এদিকে আমরা কত কাজ করি।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আগামী দিনে আরও কাজ হবে‌। গত কয়েক বছরে প্রচুর কাজ হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যে অল্প বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। আমাদের তা হয় না। আগামী দিনে আরও ২০০ পাম্পিং স্টেশন হবে।’

প্রসঙ্গত বিজেপির ইস্তেহারে পুর পরিষেবার একাধিক বিষয়কে অনলাইন করার প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছিল। মমতা এদিন একদিকে যেমন দলের হবু কাউন্সিলরদের বার্তা দিলেন, তেমনই বিজেপির অস্ত্রকে নির্বিষ করতে চাইলেন। বোঝাতে চাইলেন, অনলাইন করার জন্য ওদের জেতানোর দরকার নেই। তৃণমূলই যা করার করবে।

এ ব্যাপারে বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন, ভাল লাগছে এটা ভেবে যে বিজেপির ইস্তেহার দেখে দিদিমণির টনক নড়েছে। সেইসঙ্গে তিনি এও বলেন, ফুলবাগানের সভায় মমতা যা বলেছেন তাতেই স্পষ্ট, ওঁর দলের নেতারা বাড়ির অনুমোদন দিয়ে টাকা তোলে। নইলে অনুমোদন দেয় না। এও মেনে নিয়েছেন, কোনও এলাকায় কেউ বাড়ি করলে তাঁর ভাইয়েরাই সিন্ডিকেট থেকে মাল নেওয়ার জন্য চাপ দেয়।

এদিন মমতা এও বলেন, বস্তির সমস্ত জমি সরকারি জমি। তাই বলে বস্তি পেলাম আর সবাইকে তুলে দিয়ে উঁচু উঁচু বাড়ি বানিয়ে দিলাম তা করলে হবে না। দিদির কথায়, “বস্তি পেলাম আর মাল্টিস্টোর বানিয়ে দিয়ে বাইরের লোক নিয়ে এলাম সেটা চলবে না। গরিব মানুষ জায়গা পেল না এটা যেন না হয়। মনে রাখবেন গরিব মানুষ সমাজের সম্পদ।”

প্রসঙ্গত, আগামী রবিবার কলকাতা পুরভোট। তার আগে প্রচারে নামলেন তৃণমূল নেত্রী। সেখান থেকে কাউন্সিলরদের সংযত হতে বললেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here