পার্থসারথি সেনগুপ্ত ,কলকাতা: রেশন দুর্নীতির ( Ration Scam ) তদন্তে যেদিন ইডি ( ED ) সন্দেশখালিতে ( Sandeshkhali ) পা রেখেছিল, সেদিনই আক্রান্ত হয়েছিল প্রবলভাবে। শাহজাহান সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইডি আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও সাংবাদিকদের উপর। সাংবাদিকদের কপালে জুটেছিল বেধড়ক মার, হুমকি ! এবার সন্দেশখালি থেকে রিপোর্টিং করতে গিয়ে গ্রেফতার হতে হল সেই সাংবাদিককেই।

সত্যানুসন্ধানে সন্দেশখালিতে গিয়ে রাতদিন কাজ করে চলেছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।  সোমবার রিপোর্টিং করার সময়ই রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক সন্তু পানকে বেনজিরভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ।কর্তব্যরত এক সাংবাদিককে এভাবে গ্রেফতারে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানিয়েছে এবিপি আনন্দ। প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে রাজ্য রাজনীতি ও মিডিয়া মহলে।

এবিপি আনন্দর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে তাঁর X হ্যান্ডেলে বার্তা দিয়েছেন, ‘সন্তু পান আমার সতীর্থ। সন্তু পান আমার স্বজন। সন্তু পান আমার ভাই। কর্তব্যরত সাংবাদিকের নজিরবিহীন গ্রেফতারিতে ধিক্কার। অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে সন্তুকে। অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু সব প্রতিবাদী সাংবাদিককে ভরার মতো যথেষ্ট জায়গা আছে তো রাজ্যের জেলে?’ 

সন্দেশখালিতে খবর সংগ্রহের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক সন্তু পান। বেশ কয়েক দিন যাবতই তিনি খবর সংগ্রহের জন্য অশান্ত সন্দেশখালিতে যাচ্ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই ঘটনার জেরে মিডিয়া জগতে তো বটেই, রাজ্য রাজনীতিতেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবাদে সরব হয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাবও ।

ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বি জে পি ‘ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার মতে, এই দিনটি গোটা সংবাদ মাধ্যমের কাছে এক ‘কালো’ দিন। সন্দেশখালির নারকীয় ঘটনা নিয়ে নির্ভীকভাবে খবর সংগ্রহের কাজ করার জন্যই ওই সাংবাদিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তার কথায়, ” হীরকরানীর শাসনে এই রাজ্যে গনতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল হওয়া উচিত। বি জে পি এই ভয়ঙ্কর কালো দিনে সাংবাদিক দের প্রতি নৈতিক সমর্থন জ্ঞাপন করছে।”

রিপাবলিক টি ভির সাংবাদিক তথা কর্নধার অর্ণব গোস্বামী বলেন,’ সন্তুকে পুলিশ তিন চার ঘণ্টা এক জায়গায় দাড় করিয়ে রেখেছিল। তাকে কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ উঠতে দেওয়া তো দূরের কথা, এমনকি ফেরিতেও উঠতে দেওয়া হয় নি। আসলে তিনি সন্দেশখালিতে সাহসের সঙ্গে গত দু সপ্তাহ হয়ে টানা রিপোর্টিং করছিলেন। তাই পুলিস তাকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেফতার করলো। ” এই গ্রেফতারি কতটা আইনানুগ তা নিয়েও তিনি সন্দিহান। তার কথায়, ” মারাত্মক কোনো অভিযোগ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকলেও তাকে গ্রেফতারের সময় পুলিস নোটিশ সার্ভ করে। এক্ষেত্রে তাও হয় নি।” এই ব্যাপারে বি জে পি সমর্থিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শিলের কটাক্ষ, ” রাজ্য সরকারের পুলিশ যা করলো, তা জরুরি অবস্থার কালো দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়।”
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে সোমবার গভীর রাতে জরুরি ভিত্তিতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলকাতা প্রেস ক্লাব । তাতে ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক পরিষ্কার জানিয়েছেন, কর্তব্যরত অবস্থায় এভাবে এক জন সাংবাদিককে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাচ্ছে প্রেস ক্লাব। অবিলম্বে তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছে প্রেস ক্লাব। প্রেস ক্লাবের দুই শীর্ষ আধিকারিকই মনে করেন যদি ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগও থাকে তা তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু কর্তব্যরত অবস্থায় এভাবে এক জন সাংবাদিককে গ্রেফতারের ঘটনায় তারা তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

সূত্রে খবর, সন্তুর বিরুদ্ধে জামিন যোগ্য ও জামিন অযোগ্য বেশ কয়েকটি ধারা দেওয়া হয়েছে। আজ তাকে পুলিস বসিরহাট কোর্টে পেশ করছে।

বসিরহাটের এসপি-র দাবি, এক মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক সন্তু পানকে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। কোনও তদন্তের আগেই, কোনও নোটিস না পাঠিয়েই, এক কর্তব্যরত সাংবাদিককে তড়িঘড়ি এভাবে গ্রেফতার করা হল কেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here