যশোররোড সম্প্রসারণ নিয়ে দেশের সময় ‘কে বনগাঁর পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বললেন-কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোড যশোর রোড। শুধু তাই নয় এপার বাংলার সঙ্গে উপর বাংলাকে জুড়েছে এই যশোর রোডই। প্রতিদিন লাখের কাছাকাছি গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যশোর রোড সম্প্রসারণ হলে অনেকটাই সুবিধা হবে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে। কবে থেকে শুরু রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ খোঁজ নিল দেশের সময় –

দেশের সময়, বনগাঁ: ট্রাক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন বনগাঁ শহরের রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ সম্প্রতি বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় জয়পুরের বাসিন্দা মা ও ছেলের ৷ এবার মঙ্গলবার সকালে পথ দুর্ঘটনার বলি হলেন এক গৃহবধূ। দেখুনভিডিও

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন ছেলেকে স্কুলে দিয়ে স্বামীর মোটর বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি স্বামী। মঙ্গলবার সকাল পৌঁনে ৯ টা নাগাদ মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বনগাঁর ছয়ঘড়িয়া এলাকায় জানা গেছে পুলিশ সূত্রে৷

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্যদিনের মতো এদিন সকালেও বনগাঁর শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা সৌমেন পাল এবং তাঁর স্ত্রী শ্রাবণী পাল তাঁদের ছেলেকে মোটর বাইকে করে স্কুলে দিতে যান। ছেলে ছয়ঘড়িয়ার সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্র।

ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তাঁরা দুজন বাইকে করেই বাড়ি ফিরছিলেন। যশোর রোড ধরে বনগাঁ শহরের দিকে কিছুটা আসার পরেই পেট্রাপোলের দিক থেকে বনগাঁর দিকে আসা একটি ট্রাক ওই বাইকে ধাক্কা মারলে রাস্তায় পড়ে যান বাইকের দুজনই। আর তারপর শ্রাবণীকে পিষে দিয়ে যায় ট্রাকটি। এর ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শ্রাবণীর। মাথায় আঘাত পেয়ে বনগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামী সৌমেন পাল।

চোখের সামনে স্ত্রীর এই মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে হতভম্ভ হয়ে যান সৌমেন। ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করেছে পুলিশ। 
এদিকে, বনগাঁ শহরের ট্রাক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় মানুষেরা। তাঁদের অভিযোগ, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের স্বার্থ দেখতে গিয়ে স্থানীয় মানুষদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে পুলিশ ও প্রশাসন ভ্রুক্ষেপ নেই কারও ৷

পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, অবিলম্বে বনগাঁ শহরের মধ্যে যশোর রোড সম্প্রসারণ করতে হবে ৷ এবিষয়ে NH ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটিকে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যাতে খুব শিঘ্রই বনগাঁ শহর অঞ্চলের মধ্যে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে ৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এসব কথা তাদের খাতায় কলমে সাজিয়ে রেখেই দায়সারছেন ৷ কাজে করছেন না ৷ ফলে দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যশোররোড সম্প্রসারণের কাজ মুক মুখথুবড়ে পড়ে আছে ৷ ভোগান্তি চরমে উঠেছে স্থানীয় মানুষের ৷ পুরকর্মী,পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে যাতে শহরের স্কুল এলাকায় যান চলাচলে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ করা সেই দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে ৷

তিনি আরও বলেন,কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোড যশোর রোড। শুধু তাই নয় এপার বাংলার সঙ্গে উপর বাংলাকে জুড়েছে এই যশোর রোডই। প্রতিদিন লাখের কাছাকাছি গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যশোর রোড সম্প্রসারণ হলে অনেকটাই সুবিধা হবে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই রোড?
আন্তর্জাতিক সড়ক এই যশোর রোড, যা সোজা পেট্রাপোল, বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর হল এই পেট্রাপোল সীমান্ত। বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ-হাবড়া-বারাসত পার করে কলকাতার শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাস্তা। দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২৫ কিমি। বাংলাদেশে যশোর রোডের নাম বেনাপোল সড়ক। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হওয়াতেই এখানে কোর্ট নির্দেশের পরও সম্প্রসারণের কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি।

যশোর রোড সম্প্রসারণে সমস্যা কী?

যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য রাস্তার দু’ধারের প্রাচীন গাছগুলির ভবিষ্যতে বা কী হবে! নানা কারণে বিলম্বিত হচ্ছে জাতীয় সড়ক যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ। যশোর রোড সম্প্রসারণের জন্য তোড়জোর শুরু করা হলেও রাস্তার দু’ ধারে থাকা শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলি কাটা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।

প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন পরিবেশপ্রেমীরা। সেই জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় মামলা চলার পর উচ্চতর আদালতের তরফ থেকে শর্তসাপেক্ষে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপরই আশা করা হচ্ছিল দ্রুত কাজ শুরু হবে যশোর রোড সম্প্রসারণের। কিন্তু আবারও বারংবার যশোর রোড ও তার পার্শ্বস্থ প্রাচীন গাছগুলির কে কাটার বিরোধিতা করে আন্দোলনে নেমেছেন এপিডিয়ার ও বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন । সড়ক সম্প্রসারণ হলেও, যাতে গাছ কাটা না হয় দাবি নিয়ে আবারও জনসমক্ষে বিভিন্ন সংগঠন।

কবে শুরু হবে সম্প্রসারণের কাজ?
যশোর রোডের কাজ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে সেই নিয়ে উত্তর ২৪ পরগণা জেলাশাসক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘শীঘ্রই সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে নির্দিষ্টভাবে কোনও তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই কাজ শুরু হওয়ার কথা। এতদিন যেসব পেপার ওয়ার্কের কাজ বাকি ছিল তা সম্পূর্ণ করে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, যশোর রোডের গাছ বাঁচাতে গত বছর২০২৩-এর মার্চ মাস থেকে বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষদের কাছ থেকে সংগঠনের তরফ থেকে সাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। যেখানে সকলেই প্রায় শতাব্দী প্রাচীন গাছ বাঁচিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করার মত প্রকাশ করেছেন। গাছ বাঁচিয়ে বিকল্প ভাবনার পরামর্শ বিশিষ্টজনেদেরও। সেই সাক্ষর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছানো হয়েছে গত বছর ২০২৩-এর ২১ অগাস্ট। তারই একটি প্রতিলিপি জেলাশাসক এবং বনাধিকারিকের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে কিনা এখন সেটাই দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here