সঙ্গীতা চৌধুরী , কলকাতা

প্রশ্ন: আপনার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে ?

অনসূয়া : ধানবাদে আমার জন্ম, ছোটবেলার সুন্দর সময়গুলো সেখানেই কেটেছে। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর কলকাতায় চলে আসি। লরেটো কলেজ থেকে স্নাতক হই।

প্রশ্ন: অভিনয় জীবন কবে থেকে শুরু হয়েছে ?

অনসূয়া: স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বহু অভিনয় করেছি। তখন অভিনয়কে পেশাগত ভাবে বাছার কথা ভাবিনি। তবে ভালো লাগত তাই করতাম। সে সময় কলেজের অন্তর্বর্তী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অভিনয়ের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছি। 

প্রশ্ন: আপনি নাচেও বেশ দক্ষ ছিলেন, কতদিন অবধি নাচের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ?

অনসূয়া : আমি কত্থক শিখেছিলাম, ইচ্ছে ছিল নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। পাশ করবার পরই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি পেয়ে যাই। তাই চাকরির পাশাপাশি অভিনয় এবং নাচ চালিয়ে যেতে থাকি। তবে আমার সন্তান হবার পর যখন সংসারের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় তখন নাচের জগত থেকে সরে আসি।

প্রশ্ন: চাকরি আর অভিনয় দুটোকে একসঙ্গে ধরে রাখতে অসুবিধা হতো না ? 

অনসূয়া : আমি থিয়েটারের সঙ্গে প্রথম থেকেই জড়িত ছিলাম, আমার অভিনয় অফিসের সহকর্মীরা খুব পছন্দ করতেন তাই সবসময় তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। তবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাজের দিকটিও আমি বরাবর খুব দায়িত্বের সঙ্গেই পালন করেছি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বহু মানুষও তখন আমার পাশে ছিলেন তাই দুটো কাজকেই চালিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হয় নি।

প্রশ্ন: এত ব্যস্ততায় পরিবারের জন্য সময় বার করতে অসুবিধা হতো না? 

অনসূয়া: পরিবারের সবাই আমার পাশে ছিলেন, বিশেষ করে আমার স্বামী, তিনিও থিয়েটার জগতের মানুষ তাই সবসময় আমার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন বলে জীবনের সেই কঠিন পথ সাফল্যের সঙ্গে পেরোতে পেরেছিলাম। 

প্রশ্ন: চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ মৃণাল সেনের ছবি দিয়ে, কিভাবে মৃণাল সেনের নজরে এলেন ? 

অনসূয়া : নাট্যগোষ্ঠী ‘চেনা মুখ’ – এ আমার অভিনয় দেখে মৃণাল সেন ওঁর ‘ মহাপৃথিবী’ – ছবির জন্য আমাকে পছন্দ করেছিলেন। তার আগে ‘বৃত্ত’ – নামে একটি ছবি করেছিলাম কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায় নি। মৃণাল সেনের ছবিতে কাজ করার সময় দেখেছিলাম তিনি কি অমায়িক মানুষ ছিলেন! আমি চাকরি করতাম বলে আমার কাজের যেন কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে সবসময় সজাগ দৃষ্টি থাকতো।

প্রশ্ন: কবে থেকে পাকাপাকি ভাবে অভিনয়ের এলেন?

অনসূয়া: ২০০৬ সালে চাকরিটা ছেড়ে দিই, তখন মনে হয়েছিল এবার অভিনয়ের দিকেই পুরোপুরি মন দেওয়া উচিত নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। এই সময় থেকেই একদিকে থিয়েটার আর অন্যদিকে ছোটপর্দা এবং বড়পর্দার কাজের মধ্যে ডুবে যাই। চাকরি করার সময় অনেক বাংলা ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু সব ছবির কাজ করতে পারি নি সময়ের অভাবে। তাই সে সময় টেলিভিশনের কাজটাকেই বাছতাম কারণ সেক্ষেত্রে  সুবিধে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ ছিল। 

প্রশ্ন: বেশ কিছু বছর আগে একসঙ্গে চারটে মেগা সিরিয়ালের কাজ করেছেন, কিভাবে সামলেছেন?

অনসূয়া: ‘ কুসুমদোলা’, কুন্দফুলের মালা’, ‘গাছকৌটো’, ‘অন্দরমহল’- এই চারটে মেগা একই প্রোডাকশন হাউসের হওয়ায় আমাকে শিডিউল নিয়ে ভাবতে হয় নি, ওরাই ঠিক করে নিতো। আমাকে শুধু একটা চরিত্র থেকে আরেকটা চরিত্রে প্রবেশ করতে হতো। আমি প্রত্যেকটি চরিত্রের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করতাম। সব চরিত্রগুলোই দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। টেলিভিশনে আজ অবধি যত কাজ করেছি সমস্ত কাজের মধ্যেই একটু ভিন্নতার ছোঁয়া রাখতে চেয়েছি। তবে চরিত্র ভাঙার শিক্ষাটা আমি থিয়েটার থেকে পেয়েছি। তাই থিয়েটারকেই আমি আমার অভিনয় শিক্ষার গুরু মনে করি।

প্রশ্ন: ‘গোত্র’, ‘মুখার্জিদার বউ’ – এই ছবিগুলোতে যে ভাবে আপনাকে পাওয়া গেল, আপনার এতো বছর অভিনয় জীবনে এরকম সুযোগ কি একটু দেরিতে এলো ?

অনসূয়া: আমি এটা নিয়ে অত ভাবি না, তবে সুযোগ যখনই আসুক না কেন আমার ভালো কাজটা শুধু দর্শকদের উপহার দিতে চাই। মৃণাল সেনের ছবির পর ‘কালরাত্রি’, ‘ভালো থেকো’, ‘ চিত্রাঙ্গদা’, ‘ তাহাদের কথা’ ও আরো অনেক ভালো ভালো ছবি করেছি। গত বছরও বেশ কয়েকটি ভালো ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম, সবসময়ই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই কি পাইনি তাই নিয়ে কোনও ক্ষোভ রাখতে চাই না জীবনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here