রতন সিনহা, বনগাঁ: স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল ভারত বাংলাদেশ পেট্রাপোল সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’- এ৷ বিএসএফের ১৭৯ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএসএফের আধিকারিকরা এবং দু’দেশের বহু সাধারণ মানুষ৷ এদিন বিএসএফ জওয়ানরা বিজিবি জওয়ানদের কে মিষ্টি ও ফল উপহারদেন৷ পেট্রাপোল সীমান্তে সৌহার্দ্যের ছবি ধরা পড়ল ।

তবে শুধু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেই নয়, স্বাধীনতা দিবসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সৌহার্দ্যের ছবি ধরা পড়ল । জম্মু কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও আর এস পুরায় বিএসএফ জওয়ান ও পাক রেঞ্জার্সের মিষ্টি বিনিময় চলে। অন্যদিকে, সিয়াচেনে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। 

আজ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইতিমধ্যেই সারাদেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এই উপলক্ষে বাংলার বিভিন্ন জেলায় জেলায়ও বিভিন্ন ভাবে পালিত হল। প্যারেড, পতাকা উত্তোলন করে চলল উদযাপন। বিভিন্ন জেলাতেও উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যেই পালিত হল ৭৫তম স্বাধীনতার বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান৷

উত্তর ২৪পরগনার বনগাঁ মহকুমাতে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস বর্ষ .পুর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় প্যারেড, পতাকা উত্তোলন করে চলল উদযাপন। সেই সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।

বনগাঁ পুর সভার আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো৷ এদিন নীল দর্পণ পেক্ষাগৃহের সামনে অর্থাৎ ত্রিকোণ পার্কে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পুরপ্রধান গোপাল শেঠ।

পাশাপাশি সাদা পায়রা উড়িয়ে শান্তির বার্তা দেওয়া হয়৷ পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন ৭৫ ফুট উচ্চতায় ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ৷ শহরের বিভিন্ন এলাকার ৩৪টি সংস্থার শিশুরা তাঁদের নৃত্য, সংগীত পরিবেশন করেন বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ৷ প্রত্যেক সংস্থাকে অনুষ্ঠানের মঞ্চে পুরসভার পক্ষ থেকে ম্মারক লিপি প্রদান করা হয় ৷

এদিন বনগাঁ ষ্টেশন রোডে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষক – শিক্ষিকা সহ স্কুলের কর্ণধার শঙ্কর আঢ্য তথা (প্রাক্তন চেয়ারম্যান বনগাঁ পুরসভা) দুঃস্থ শিশুদের হাতে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা সহ রং পেন্সিল এবং মিষ্টি খাবার প্রদান করে স্বাধীনতা দিবস পালন করেন ৷

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জ্যোৎস্না আঢ্য এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের কাউন্সিলর ৠতুপর্ণা আঢ্য৷ শঙ্কর আঢ্য বলেন প্রতি বছরই এই স্কুলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের জন্য এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয়৷ তবে এ বছর ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস তাই এলাকার৭৫ জন দুঃস্থ শিশুদের কে আহার ও রং পেন্সিল দেওয়া হল৷

গোবরডাঙা রবীন্দ্র নাট্য সংস্থার উদ্যোগে ১৫ই আগস্ট ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস পূর্তি উপলক্ষে পালিত হলো “আজাদী কা অমৃত মহোৎসব”। ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সংস্থার সভাপতি তথা কর্ণধার বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য্য।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পলাশ মণ্ডল, মিহির চক্রবর্তী ও বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য্য। গীতি আলেক্ষ্য পরিবেশন করেন শিল্পী সেন ও অজানা বসু। আবৃত্তি পরিবেশন করে আলোকবর্তিকা ভট্টাচার্য, আইভী সান্যাল, নীলাদ্রি দত্ত এবং সুবীর চট্টোপাধ্যায়। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন মেদিয়ার”মেঠোপথ” সঙ্গীত দলের শিল্পীবৃন্দ তবলা সংগতে ইন্দ্রজিৎ নট্য।

নৃত্য পরিবেশন করে তিতলি পাল, প্রিয়ম বিশ্বাস, সরমা বৈদ্য, তিথি রায়, রবীন্দ্র নাট্য সংস্থার পক্ষ থেকে দেশাত্মবোধক নৃত্য কোলেজ পরিবেশন করা হয়। নৃত্য অংশ নেন স্মৃতি চক্রবর্ত্তী, রুমকি দে, শর্মিষ্ঠা রায়, দেবার্ঘ পাইক ও ঋতুপর্ণা মুখার্জী, নৃত্য পরিচালা করে স্মৃতি চক্রবর্ত্তী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনতা দিবস উদ্‍যাপন করছেন ITBP জওয়ানরা। সিকিমে ১৮ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তাঁরা। উত্তরাখণ্ডে সাড়ে ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। অরুণাচলের তাওয়াং ও লাদাখে প্যাংগং লেকের ধারে জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রভাতফেরি করেন ITBP জওয়ানরা। 

বনগাঁয় হিন্দু জাগরন মঞ্চের সদস্যদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা৷

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে আজাদি কি অমৃত মহোত্সব। ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকায় সেজে উঠেছে গোটা দেশ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দিল্লি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা।

রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর লালকেল্লায় যান প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টায় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার দেশীয় কামান থেকে ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। 

এদিকে, দু’ বছর পর সাধারণ দর্শকের উপস্থিতিতে রেড রোডে উদযাপিত হয় স্বাধীনতা দিবস। পুলিশ মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর রেড রোডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় নানা বিভ্রাটে চরম অস্বস্তিতে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসন। এদিন সকালে জেলা সদর দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে প্রথমে তা আটকে যায় দণ্ডের মাঝখানে। পতাকা নামিয়ে ফের উত্তোলন করা হয় মাঝদণ্ড পর্যন্ত। বিষয়টি নজরে আসায় ফের পতাকা নামিয়ে সম্পূর্ণ রূপে পতাকা উত্তোলিত হয়। এহেন ত্রুটিপূর্ণ কর্মকাণ্ড নিয়ে নিন্দায় সরব অনেকেই।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতি বছর ১৫ আগস্ট উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতে পতাকা উত্তোলন করেন জেলা শাসক স্বয়ং। সেইমতো এ বছরও সকাল সাড়ে ন’টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে আসেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বর্তমান জেলা শাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী। কিন্তু পতাকা উত্তোলন করেও উপরে ওঠার সময় মাঝপথে আটকে যায় জাতীয় পতাকা। ফের সেই পতাকা নামিয়ে আবার তোলেন জেলাশাসক নিজেই। তবে তা তোলা হয় দণ্ডের অর্ধেক পর্যন্ত। বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আসায় আবার পতাকা দণ্ডের শীর্ষে তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয় দফতরের আধিকারিকদের। চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন।

যদিও এই সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী। জেলার সদর দফতরেই যদি এই বিভ্রাট হয় তাহলে প্রশ্নচিহ্ন ওঠে জাতীয় স্বাধীনতা দিবস পালনের উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে। ইতিমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

সাধারণত ভিভিআইপিদের হাত দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আগে বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে পতাকা উত্তোলন করে দেখে নেওয়া হয়। যাতে কোনও বিভ্রাট না ঘটে। কিন্তু এদিন সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কেও কোনও সঠিক তথ্য নেই জেলা প্রশাসনের কাছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হচ্ছে সারা দেশ তথা বাংলা জুড়ে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পঞ্চায়েত, পুরসভাতেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অতিমারীর ভয়াবহতা কাটিয়ে এ বছর রেড রোডে স্বাধীনতা দিবস পালনের মূল সরকারি অনুষ্ঠান ফিরে এসেছে স্বাভাবিক ছন্দে। কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয় রেড রোড। ৭৬ তম বছরে কুচকাওয়াজকে ঘিরে সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বার্তা দেয় রাজ্য সরকার ৷ কোভিডে গত দু’বছর ধরে রেড রোডেই স্বাধীনতা দিবস পালন করে রাজ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here