অর্পিতা বনিক, পেট্রাপোল: বাঙালি পাতে ইলিশ পেলে আর কি চাই! তাও আবার সেটা যদি হয় ওপার বাংলার পদ্মার ইলিশ।

পুজোয় ইলিশের স্বাদে মজবে বাঙালি! এই সুখবর আগেই শুনিয়েছিল হাসিনা সরকার।

পেট্রাপোল সীমান্তে এলো বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ-ছবি: সব্যসাচী ভট্টাচার্য্য


দুর্গাপুজোর আগেই পুজোর উপহার স্বরুপ সেই ইলিশ পেট্রাপোল সীমান্তের স্থল বন্দর দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢুকল এ রাজ্যে৷

এদিন ৯ টি ট্রাকে প্রায় ৪৫ টন পদ্মার ইলিশ বাংলাদেশ থেকে ভারতে পৌঁছাল। এই ইলিশ মাছের জন্য অপেক্ষায় ছিল বাঙালি । দুর্গাপুজোর মাত্র আর কয়েকটা দিন এই উৎসবের আগেই খুশির হাওয়া বাঙালির মধ্যে ।

জানা গিয়েছে এই ইলিশ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আগামীকালের মধ্যেই পৌঁছে যাবে । এক একটি গাড়ি তে ৪-৫ টন করে মাছ আসছে । জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার আরও ইলিশ ভর্তি ট্রাক আসার কথা ৷

পেট্রাপোল ফরওয়ার্ডিং ক্লিয়ারিং এজেন্ট ফিরোজ মন্ডল বলেন আজ বঙ্গে প্রথম পদ্মা ইলিশ ঢুকলো। এখনও পর্যন্ত ৯ টি ট্রাক এসেছে পরে আরও ৩টি ট্রাক ঢুকবে । আজ বিকাল সাড়ে চারটাটে পর্যন্ত ভারতে প্রায় ৪৫ টন মাছ এসে পৌঁছিয়েছে ৷

উৎসবের মরসুমে বাঙালির পাতে পড়বে বাংলাদেশের ইলিশ। কারণ, দুর্গাপুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ৩,৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবেশী দেশ পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রফতানির জন্য ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে। যদিও ইলিশ রফতানির অনুমোদন চেয়ে ১০০-রও বেশি সংস্থা আবেদন করেছিল। অনুমোদিত সংস্থাগুলির প্রতিটিকে ৫০ টন করে ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷

সেই মতো কথাও রাখলেন হাসিনা সরকার , বৃহস্পতিবারই পেট্রাপোলে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করল অনুমোদিত কয়েক টন ইলিশ।

এ নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরের শুল্ক দফতরের ক্লিয়ারিং সেক্রেটারি কার্তিক চক্রবর্তী দেশের সময়,কে জানান, ‘‘ আমরা বাংলাদেশ সরকারের তরফে ৩,৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানির অনুমতি পেয়েছি। বৃহস্পতিবার ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ইলিশ। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রফতানিকৃত ইলিশ চলে আসবে এ রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।’’ তিনি আরও জানান, শনিবার থেকে পাইকারি বাজারে ঢুকে পড়বে বাংলাদেশি ইলিশ।

দাম কি মধ্যেবিত্তের নাগালে থাকবে? পেট্রাপোল সীমান্তের ইমপোর্টার রামকৃষ্ণ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, থাকবে। তাঁর কথায়, ‘‘শুরুর দিকে দাম হয়তো একটু বেশি থাকবে। ১ কেজি ইলিশ পাইকারি বাজারে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। ৭০০ গ্রামের ইলিশগুলো ৭০০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত এই ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাবে।’’


উল্লেখ্য, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ ছিল। ২০১৯ সাল থেকে পুনরায় রফতানি শুরু হয়। ২০২০ সালে দুর্গাপুজোর আগে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি হয়। ২০২০ সালে আমদানি হয় ১,৮৫০ মেট্রিক টন।

২০২১ সালে ৪,৬০০ মেট্রিক টন ইলিশের রফতানিতে অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হাতে পাওয়া যায় ১,২০০ মেট্রিক টন মতো। একই ভাবে ২০২২ সালে ২,৯০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ইলিশ রফতানির কথা জানায় বাংলাদেশ। রাজ্যে শেষ পর্যন্ত ১,৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ ঢোকে।

দুর্গোৎসব খাদ্যরসিক বাঙালিদের কাছে সর্বোৎকৃষ্ট মহরত। রেস্তোরাঁ হোক বা বাড়িতে অষ্টমী বা নবমীর দুপুরে সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা বা ইলিশ পাতুরি, ইলিশ বিরিয়ানি দিয়ে লাঞ্চ না করলে পুজোর আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যায়। স্বাদে গন্ধে পদ্মার ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। এবার বাংলাদেশের ইলিশ আসার কারণে পুজোয় ইলিশ রসনায় তৃপ্ত হবে বঙ্গ সমাজ এ কথা বলাই বাহুল্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here