দেশের সময়: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরমুজে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ওজন কমাতে সাহায্য করে এই ফল। তরমুজ স্ট্রেস কমায়। প্রস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। তরমুজের ক্যারোটিনয়েড চোখ ভালো রাখে। এই ফলটিতে সিট্রোলিন নামে অ্যামাইনো অ্যাসিড যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

তরমুজ খেলে হাড়ের গঠন ভালো হয়। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকার কারণে তরমুজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। করোনারি হার্ট ডিজিজ রুখে দেয়। তরমুজে রয়েছে ভিটামিন বি। গবেষণা বলছে, ভিটামিন বি খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। নিয়াসিনের মতো ভিটামিন বি স্নায়ুতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রকে রক্ষণাবেক্ষন করে।

এ তো গেল তরমুজের গুণাগুন। আর তরমুজের বীজ?

লাল টুকটুকে রসালো ফলটিতে মজে অনেকেই তরমুজের বীজ ফেলে দেন। তাতেই বাদ চলে যায় আসল জিনিসটি। চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদরা বলছেন, তরমুজে যদি তোফা থাকে হার্ট, তাহলে তরমুজের বীজেই লুকিয়ে জীবনীশক্তি। এককথায় গুণে ভরপুর। দেখা গিয়েছে, সারাদিনে যে পরিমাণ প্রোটিন দরকার, তার ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় এককাপ তরমুজ বীজে। এছাড়াও তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম। রিপোর্ট বলছে, ম্যাগনেশিয়াম ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে। তরমুজের এককাপ শুকনো দানায় ফ্যাটের পরিমাণ ৫১ গ্রাম। এর মধ্যে ১১ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট। বাকিটা পলি স্যাচুরেটেড, মনো স্যাচুরেটেড এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড।

আমেরিকা হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্টে প্রকাশ, মনো ও পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। প্রোটিন তো বটেই, তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর আয়রন। চুলের শক্তি বাড়ে। চুল পড়া কমায়। চুল পাতলা হয় না। চুল শুকনো হয় না। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পাত্রে তরমুজের বীজ নিয়ে তাতে ৫০০ মিলি জল দিয়ে ২৫ মিনিট অল্প আঁচে ফুটেয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

ঠান্ডা করে খাওয়া যেতে পারে সেই জল। এই জল প্রতিদিন খেলে ডায়াবেটিস বলবে টা টা, বাই বাই। তরমুজের শুকনো বীজ চায়ের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। তরমুজের বীজে আর্জিনেন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকায় হার্টের পক্ষে খুবই ভালো। কিন্তু বীজের উপরের আস্তরণ মোটা। ফলে চিবিয়ে খেয়ে হবে। মিক্সিতে পিষে খাওয়া যেতে পারে। আমন্ড বা সূর্যমুখীর বীজের চেয়েও উপকারি তরমুজের বীজ। তবে যাঁদের ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, চিকিৎসকের মতামত নিয়ে খেতে হবে।

পুষ্টিবিদ অরিত্র খানের মতে, তরমুজের বীজ পুষ্টির দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, তরমুজের বীজে একদিকে যেমন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, অন্যদিকে এক কাপ তরমুজ বীজ থেকে ম্যাগনেশিয়ামের দৈনিক চাহিদার অনেকটাই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়, এটি খুবই কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার। ৩০ গ্রাম তরমুজ বীজ থেকে ক্যালোরি পাওয়া যায় ১৫০।

তরমুজের বীজে থাকা ভালো উপাদানের মধ্যে বেশি মাত্রায় রয়েছে এমইউএফএ এবং পিইউএফএ। ফলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। জিঙ্ক থাকায় পাচন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তরমুজের বীজ রোস্ট করে খাওয়া ভালো। ওভেন ৩২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রেখে বেকিং সিটের উপর বীজগুলো নাড়াচাড়া করতে হবে। ১৫ মিনিটের মধ্যে রোস্ট হয়ে যাবে। এর সঙ্গে লেবুর রস ও লবন স্বাদের জন্য যোগ করা যেতে পারে। তবে অযথা চিনি কিংবা তেল ব্যবহার না করাই ভালো। আর ডিপ ফ্রাই অর্থাৎ কড়া করে ভাজা চলবে না। তাহলে তরমুজে বীজের গুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যাবে।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তরমুজ ফল হিসেবে যেমন অনবদ্য, তেমনই তার বীজে রয়েছে নানা ভেষজগুণ। সেই গুণের কথা জানলে তরমুজের বীজকে কেউ অনাদরে ফেলে দিতে পারবেন না। জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে, তরমুজের বীজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবনের উপস্থিতি। রয়েছে তামা, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা প্রভৃতি। তরমুজের বীজ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। দ্বিতীয়ত, তরমুজের বীজ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। তৃতীয়ত, এতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকায় শরীরে ফ্যাটজনিত ক্ষতি থেকে রেহাই মেলে। চতুর্থত, তরমুজের বীজ খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পঞ্চমত, তরমুজের বীজ খেলে চুল ও চামড়ার ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়।

তরমুজের মধ্যে ৯২ শতাংশ জল থাকে। ফলে যাঁরা রোগা হতে চান, তাঁদের জন্য ফলটি দারুণ উপকারি। আবার তরমুজ খেলে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে এক কাপ তরমুজ বীজ খাওয়া যেতে পারে। তরমুজ ও এর বীজ খেলে চুল এবং নখের বৃদ্ধি ঘটে। ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি পায়। পেশীর গঠন উন্নত হয়। তরমুজের বীজে থাকা আর্জেনিন রক্তে ইনসুলিনের উপর ভালো প্রভাব বিস্তার করে। মিনারেল, ফাইবার, পুষ্টির ভালো উৎস তরমুজ বীজ।

এতে ভিটামিন সি ও অন্যান্য পুষ্টি থাকায় অ্যাজমার ঝুঁকি কমায়। তরমুজের বীজ থেকে তৈরি তেল দারুণ উপকারি। ত্বকের সংক্রমণ দূর করে। শরীরে দুর্গন্ধ কমায়। মাথা যন্ত্রণা সারাতে অব্যর্থ। তরমুজের বীজে থাকা লাইকোপিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এই ফলটি নিয়মিত খেলে অবসাদ দূর হয়। রাগ কমে। মন ভালো থাকে। শুকনো কাশিতে কাজ দেয়। খাবার হজম ভালো হয়। হাঁটু ব্যথা কমে। রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তরমুজের সঙ্গে কালো নুন মিশিয়ে খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি দূর হয়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, সকালে জিমে যাওয়ার আধঘণ্টা আগে ২ কাপ (৪০০-৫০০ গ্রাম) তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। তরমুজে রয়েছে ভিটামিন বি-৬। যা নার্ভাস সিস্টেমের জন্য ভীষণ জরুরি। প্রোটিনকে ভাঙার কাজ করে ভিটামিন বি। ফলে যাঁরা বেশি পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান, তাঁদের জন্য তরমুজ দারুণ উপকারি ফল। এছাড়াও তরমুজে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তরমুজে থাকা সিট্রোলিন রূপান্তরিত হয় আর্জেনিনে।

এটি ব্লাড ভেসেলকে খুলে দিতে সাহায্য করে। ফলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। অনেকে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আর্জেনিন খেয়ে থাকেন। তাঁদের জন্য তরমুজ ও তার বীজ, প্রাকৃতিক উৎস। তরমুজের বীজ মিক্সার মেশিনে ভালোভাবে পেষাই করার পর তাতে কয়েক ফোটা লেবুর রস ও চিনি যোগ করে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে কিছুক্ষণ। তার পর সেই মিশ্রণ মুখে লাগালে ত্বকের জেল্লা বাড়ে। মরা কোষ ও ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। তরমুজের বীজ পটাশিয়ামের ভালো উৎস হওয়ায় রক্ত জমাট বাঁধে না। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। তরমুজের বীজে কোলাইন থাকায় শরীরের প্রদাহ দূর করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ঘুম ভালো হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here