অর্পিতা বনিক, বনগাঁ: রাজ্যের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে নানান ধরনের কর্মসূচী গ্ৰহন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে কলমে শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের কাঁচামাল সরবরাহও করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে মহিলাদের আত্মনির্ভরতা বাড়ছে।

এই সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাজে আরও উৎসাহ বাড়াতে বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে দিন পনেরো আগে প্রায় ৫০০ জন মহিলাকে একটি কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কর্মশালার শিরোনাম ছিল, ‘‘কচুরিপানা আনবে সোনা’।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে,  কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত মহিলারা ইতিমধ্যেই কচুরিপানার ব্যাগ, ফাইল, টুপি, ফুলদানী,রাখি-সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা শিখেছেন।

পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, কচুরিপানার সামগ্রী তৈরির মাধ্যমে আমরা মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর করার পরিকল্পনা করেছি। এতে একদিকে যেমন ইছামতী নদী কচুরিপানা মুক্ত থাকবে। অন্যদিকে মহিলাদের আয়ের সুযোগ বাড়বে হবে।

তিনি আরও জানান, দেশ-বিদেশের বাজারে কচুরিপানা দিয়ে তৈরি সামগ্রীর বিপুল চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দফতর ও প্রতিষ্ঠান থেকে বরাত আসতে শুরু করেছে। সামনেই রাখিপূর্ণিমা। ওই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের নক্সার রাখির চাহিদা মেটাতে পুরসভার পক্ষ থেকে কয়েক লক্ষ রাখি তৈরি করার কাজ চলছে ৷ যা তৈরী করছেন ‘‘কচুরিপানা আনবে সোনা’ কর্মশালার সেই সমস্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলারাই ৷ করোনায় অনেক পরিবারে রুজিরোজগার কমেছে। বাড়ির মহিলারা টাকা আয়ের সুযোগ পেলে পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে।

পুরসভা সূত্রে জানাগিয়েছে, বুধবার পুরসভার পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের হাতে শুকনো কচুরিপানা তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

ঘরে বসেই আয়ের সুযোগ পেয়ে খুশি প্রশিক্ষিত মহিলারা। তাঁদেরর কথায়, লকডাউন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকের কাজকর্ম হারিয়ে গিয়েছে, ফের টাকা রোজগারের সুযোগ মিলছে পুরসভার এই কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নেওয়ায়৷ এতে উপার্জন হওয়ায় সংসার চালানোর জন্য দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা দেখছেন তাঁরা৷ ।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইছামতী নদীর কচুরিপানা কেজি প্রতি ৬৫ টাকায় কিনবে পুরসভা। তবে নদী থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবেন মহিলারাই ৷ সেই কচুরিপানা শুকিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে। মহিলারা বাড়ি বসেই হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করবেন তা দিয়ে।

পুরসভা সেই সামগ্রী আবার তাঁদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কিনে নেবে। পুরসভা তা আবার অন্যত্র বিক্রির ব্যবস্থা করবে। একদিকে যেমন কচুরিপানা বিক্রি করবেন , অন্যদিকে হস্তশিল্পের সামগ্রীও বিক্রি করতে পারবেন৷ অর্থাৎ দু’ভাবে আয় করার সুযোগ পাবেন এই‘‘কচুরিপানা আনবে সোনা’ কর্মশালার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলারা।

এখন নদীপারের বাসিন্দাদের প্রশ্ন ? প্রায় ৪০ বছর আগেই নাবত্য হারিয়ে কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে ইছামতী নদী। নাবত্য হারিয়ে এখন সে মৃতপ্রায় !

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আগে ইছামতীতে জোয়ার ভাটা খেলত। নদীতে স্নান করা, মাছ ধরা, এবং এই নদীর জল চাষের কাজে ব্যবহার করতেন নদী পাড়ের চাষিরা। কিন্তু বহু বছর ধরেই সে সব বন্ধ। এখন গোটা নদীর বুকে কচুরিপানার চাদরে ঢাকা। জলের দেখা পেতে হিমসিম খেতে হয় ৷ কোনরকমে কচুরিপানা ঠেলে তবেই হাঁটু সমান জলের স্পর্শ পান তাঁরা৷

দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কচুরিপানা পচে নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমিয়ে দিয়েছে বহুকাল আগেই। এখন দূষণ ছড়াচ্ছে জল। তার উপর, কচুরিপানার কারণে মশা ও সাপের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে এলাকায়। এই সমস্যার সমাধান কি কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্পের সামগ্রী তৈরি করে করা সম্ভব ! প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বনগাঁর মানুষের মুখে মুখে৷

এই বিষয়ে পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ইছামতী নদীকে কচুরিপানা মুক্ত করতে দ্রুত আরও একটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুরসভার পক্ষ থেকে আধুনিক যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।শীঘ্রই সেই যন্ত্রের সাহায্যে আমরা নদীকে কচুরিপানা মুক্ত করব৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here