সৃজিতা শীল দেশের সময় :

তাপমাত্রা বাড়ছে আন্টার্কটিকার। হিমবাহ গলছে । আন্টার্কটিকার উপকূলীয় স্রোতের গতি কমছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী ৪০ বছর পর বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রই বদলে যাবে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলস্রোতের প্রবাহ বন্ধ হবে আন্টার্কটিকা থেকে। জলের তাপমাত্রা বাড়বে, সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।

আন্টার্কটিকার এই ‘জ্বর’ সর্বকালীন রেকর্ড!
বিশ্বের ১৯৩টি সদস্য দেশের সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)’ শুক্রবার এই খবর দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই গায়ের ‘জ্বর’ মাপা হয়েছে আন্টার্কটিকার।

কনকর্ডিয়া গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ২০২২ সালের মার্চে দক্ষিণ মেরুর বরফঢাকা পূর্ব দিকের মালভূমিতে এক আশ্চর্য ঘটনা নজর করেন। দিনটা ছিল ১৮ মার্চ। বিজ্ঞানীরা দেখেন, ওই দিনটিতে কনকর্ডিয়া এলাকার দিনের তাপমাত্রা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি। গবেষকেরা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে হিমশীতল জায়গায় তাপমাত্রার এই বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের অধ্যাপক মাইকেল মেরেডিথ বলেন, বিষয়টি এককথায় মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো! মেরেডিথ বলেন, হিমাঙ্কের নীচে থাকা তাপমাত্রার এত বড় বদল অশনি সঙ্কেতই দিচ্ছে।

 ১৯৭৯ সাল থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আন্টার্কটিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত ৪০ বছরের রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে গ্রীষ্মের মরসুমে যে হারে দ্রুত বরফ গলে গিয়েছে, তার কারণ উষ্ণায়নের মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ অবধি তাপমাত্রার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আন্টার্কটিকার তাপমাত্রা যদি ৫০ ডিগ্রি ছাড়ায় তাহলে তা মানব জাতির জন্য খুবই মারাত্মক হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আন্টার্কটিকা থেকে ২৫০ ট্রিলিয়ান টনের মতো ঠান্ডা, অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলের প্রবাহ ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক সাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। আন্টার্কটিকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিমবাহ গলনের কারণে এই অক্সিজেন সমৃদ্ধ জলের স্রোতের পরিমাণ কমছে। ওই জলের প্রবাহ অন্য সাগর-মহাসাগর অবধি যেতেই পারছে না। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, একটা সময় আসবে যখন পৃথিবীর সমস্ত সাগর-মহাসাগরের ব্যালান্সটাই বদলে যাবে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ ও তার জেরে জলবায়ু বদলের কারণে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে বড় প্রভাব পড়বে।

আন্টার্কটিকার বিশাল হিমবাহ গলেছিল সেই ২০১৭ সালে। হিমবাহ থেকে খসে পড়া দানবাকৃতি হিমশৈল ভাসতে ভাসতে এখন প্রায় সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের কাছে এসে পড়েছে। আন্টার্কটিকার বরফের বিশাল বিশাল পুরু চাঙড়গুলি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙলেই দ্রুত বরফ গলতে শুরু করবে আন্টার্কটিকার। চিড় ধরতে শুরু করেছে আন্টার্কটিকার বিশাল বিশাল গ্লেসিয়ারগুলিতেও। পরিণতিতে আর ১০০ বছরে অন্তত ১০ ফুট উঠে আসতে পারে সমুদ্রের জল-স্তর। তাতে বহু দেশের বহু শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে অ্যান্টার্কটিকাই
ডব্লিউএমও-র মুখপাত্র ক্লেয়ার নুলিস বলেছেন, ‘‘গ্রীষ্মেও কোনও দিন আন্টার্কটিকার তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যায়নি। এমনকি, তা তিন বছর আগের রেকর্ডকেও (১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ভেঙে দিয়েছে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here