মোহনবাগান – ১ (পেত্রাতোস)
ইস্টবেঙ্গল – ০

দেশেরসময় , কলকাতা: ১৯ বছর আগে মোহনবাগান হার মেনেছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে।

১৯ বছর পর পাল্টে গেল পাশা। ২০০৪ সালে ডুরান্ড ফাইনালে শেষ সাক্ষাতে মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল হলুদ তাঁবুতে শেষ সর্বভারতীয় ট্রফি ঢুকেছিল ২০১২ সালে ট্রেভর মর্গ্যানের জমানায়। কাটল না ১১ বছরের খরা।

সেবার ফাইনালে লাল হলুদ জিতেছিল ২-১ গোলে। সেই চাকা ঘুরল এবার এক বিদেশির হাত ধরে। যুবভারতীতে মোহন জয়ের কাণ্ডারি হয়ে থাকলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস । ১-০ গোলে জিতে এবারের ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন জুয়ান ফেরান্দোর মোহনবাগানই ।

এই নিয়ে মোহনবাগান মোট ১৭ বার সেরা হল। দুই প্রধানের মোট ২২ বারের সাক্ষাতের মধ্যে আটবার জিতল সবুজ মেরুন দল। ইস্টবেঙ্গল অবশ্য এখনও একটি জয়ের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে।

গত ডার্বিতে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান। তারা মধুর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। সেটাই তারা করে দেখিয়েছে। দিমিত্রির গোলের আগে মোহনবাগান দশ জনে হয়ে যায়। তারপরেও যে খেলা (Durand Cup Final 2023) খেলেছে, তার জন্য কোচ ফেরান্দোর প্রশংসা করতেই হবে।

দশ জনে খেলে মোহনবাগানের এই ডুরান্ড জয় উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে বলা যায়। কারণ ম্যাচের শেষ প্রায় ৩০ মিনিট তাদের একজনে কম খেলতে হয়েছে। সেই সুবিধে নিতে পারেনি কার্লোস কুয়াদ্রাতের লাল হলুদ দল। তারা গত ডার্বির মতোই খেলছিল এদিন। বারবার অবশ্য সবুজ মেরুনের জমাট রক্ষণের সামনে আটকে গিয়েছে।

সেই অবস্থা থেকে বিরতির পরে মোহন কোচ খেলার কৌশল বদলান। তিনি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকেন। দিমিত্রির গোল তারই ফসল। দুরন্ত গোল পেত্রাতোসের। একেবারে একক দক্ষতায় গোল করেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। মোহনবাগানের হয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠেন পেত্রাতোস।

প্রায় মাঝমাট থেকে বল টেনে নিয়ে আসেন তিনি। তিনি বক্সের বাইরে থেকে তাঁর বাঁ-পায়ের শটে বল জালে জড়ান। গোলটি হয়েছে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলে। দিমি একা বল টেনে এনে গোল করে বেরিয়ে গেলেন। বল আটকানোর কেউ ছিল না ইস্টবেঙ্গলের।

মোহনবাগান দশজনে হয়ে যেতেই মোহন কোচ ফেরান্দো তিনটি বদল আনেন, সেটাই ম্যাজিকের মতো কাজ করে গিয়েছে। নামান লিস্টন, মনবীর ও কামিন্সকে। একেবারে তরতাজা মেজাজে পুরো দল খেলতে থাকে। সেইসময়ই মিলিয়ন ডলারের গোল দিমিত্রির। তিনি এদিন শুরু থেকেই দিমিত্রি ছটফট করছিলেন কিছু করার জন্য। দলের পক্ষে জয়সূচক গোল করে ডার্বির ইতিহাসে স্থান করে নিলেন।


মোহন কোচ খুব ভাল করে ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছেন, প্রতিপদে বোঝা গিয়েছে ম্যাচে। আশিস রাই এবং আনোয়ার ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ক্রেসপো এবং বোরহাকে দারুণ ভাবে বোতলবন্দী করে রেখেছিলেন। তাঁদের সুবিধেই করতে দেননি ম্যাচে।

খাবরা এবং রাকিপ শেষপর্যন্ত ওভারল্যাপে উঠে বাগানের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করলেও সফল হননি। মহেশ একবার প্রায় গোল করে ফেলছিলেন। সবুজ মেরুন রক্ষণ শেষপর্যন্ত বল ক্লিয়ার করে দিয়েছে।
খেলার প্রথম ২০ মিনিট সবুজ মেরুনকে ভাল লাগলেও খেলা যত গড়িয়েছে, ইস্টবেঙ্গলও জাল বিস্তার করেছে। তবে শেষ হাসি মোহনবাগানের।

দিমিত্রি গোল করে জেতাতে পারেন, কিন্তু যেভাবে ম্যাচে দুটি অব্যর্থ গোল বাঁচান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ। এই খেতাব জয়ে তাঁর ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না। মোহনবাগান এদিন জিতেছে টিম গেমে ভরসা করেই। ফেরান্দো ম্যাচের আগের দিন বলে দিয়েছিলেন, ফাইনালে হবে অন্য খেলা। সেটাই স্প্যানিশ কোচ বুঝিয়ে দিলেন খেতাব জিতিয়ে।

অন্যদিকে ২৩ বছর পর ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। আইএসএল জিতে মরশুম শেষ করেছিল মোহনবাগান। এবার ডুরান্ড দিয়ে শুরু। একটা সময় ডুরান্ডের শেষ আটে ওঠা অনিশ্চিত ছিল বাগানের। প্রথম দিন থেকেই জুয়ান ফেরান্দো এটাকে প্রাক মরশুম প্রস্তুতি বলে আসছেন। কিন্তু শেষে বাজিমাত। রবিবাসরীয় সন্ধেয় ৪৫ হাজারের যুবভারতী সাক্ষী থাকল ইতিহাসের। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here