দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ শনিবারই সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে৷

হাইলাইটস্

  • ফের একটা ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে
  • এর নাম ‘গুলাব’
  • দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ
  • তৈরি হয়েছে বাংলাও

দুর্যোগের সম্ভাবনা প্রকোট হতেই সব দফতরের কর্মীর ছুটি আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাতিল করেছে রাজ্য সরকার । মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী শনিবার এই মর্মে একটি নির্দেশ জারি করেছেন। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে জেলাগুলিতে।

ক্রমেই স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’। আর ঘূর্ণিঝড় যত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে তত উত্তাল হচ্ছে সমুদ্র। মঙ্গলবার আরও একটি নিম্নআসার কথা রাজ্যের দিকে। ইতিমধ্যেই উপকূলের দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর প্রভৃতি এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বড় বিপর্যয় ঠেকাতে সোমবারের মধ্যে দিঘা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের। নির্দেশ না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।

রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দিঘা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হোটেলগুলিকে নতুন করে বুকিং নিতে নিষেধ করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এই মুহূর্তে যে সব পর্যটক দিঘায় রয়েছেন তাঁদেরও দ্রুত হোটেল খালি করে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাগিয়েছে। নজর এড়িয়ে সমুদ্রে নেমে যাতে কারও জীবনহানি না হয় তারই আগাম সতর্কতা হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দিঘা জুড়ে মাইকে প্রচার করে পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি নজরে রাখতে দিঘায় রয়েছেন রামনগর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও এবং অন্যান্য সরকারি আধিকারিকরা। রবিবার সন্ধ্যা থেকে পর্যটকদেরও আর কোনও ভাবেই সমুদ্রের ধারে যেতে দেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছেন ব্লক আধিকারিকরা। আগাম সতর্কবার্তা এলে ৩০ মিনিটের মধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকা খালি করে দেওয়া হবে বলে জানাগিয়েছে রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিশেষ সূত্রে৷

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর ভাগ এবং ওড়িশা উপকূলের দক্ষিণ অংশে আছড়ে পড়তে পারে গুলাব। প্রতি ঘণ্টায় ৭৫-৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ পৌঁছতে পারে ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।

মোকাবিলায় তৈরি কলকাতা পুলিশ। শনিবার থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত সতর্ক থাকবে লালবাজার। একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে লালবাজারে। শুধু তাই নয়, পুরসভা, সিইএসসি, পিডব্লুডি, দমকল তৈরি থাকবে।  পুলিশি বন্দোবস্তের দায়িত্বে থাকবেন এডিশনাল সিপি (৪) তন্ময় রায় চৌধুরী। তিনি নোডাল অফিসার। মোট ২২টি বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। প্রতিটি দলে তিনজন করে থাকবে। 

এবার রাজ্যে বৃষ্টি মোটের উপর ভালোই হয়েছে। ফলে খাল-বিল-নদী-নালা সব ভরে রয়েছে। এখন ভারী বৃষ্টি হলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়া অসম্ভব তো নয়ই বন্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পুজোর মুখে সম্ভাব্য বিপর্যয় কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে শুক্রবার থেকে নবান্নে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মুখ্যসচিব।

বাংলায় ঝড়ের প্রকোপ তেমন না থাকলেও বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের কারণে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ভাসতে পারে রাজ্য। বর্ষা বিদায় কালে প্রবল বৃষ্টিপাতের পরিনতি বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ধরে নিয়ে শুধু বিপর্যয় মোকাবিলা নয়, সব দফতরেরই কর্মীদের ছুটি বাতিল করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।

নিম্নচাপের বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। দিল্লির মৌসম ভবন বিশেষভাবে সতর্ক করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশাকে।

ওই দুই রাজ্যে আইলা-আমফান-ইয়াসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝডে়র সময়। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের কর্তা গণেশ দাস জানান, বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড়টির পোশাকি নাম ‘গুলাব’। রবিবার সেটি ওড়িশা বং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। তার প্রভাবে বাংলায় পূর্ব মেদিনীপুরে ভালো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শনিবার রাজ্যে এসেছে দুটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল । কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের এই দল দুটি বন্যা পরিস্থিতি এবং ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখবে। দুটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করবে তারা। একটি দল যাবে হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরে এবং হুগলির আরামবাগে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে যাবে অন্যটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here