দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একেই বলে চমৎকার, এভাবেও জীবনের সন্ধান মেলে! করমণ্ডল দুর্ঘটনার মৃত্যুপুরী থেকে যেন আশ্চর্য এক আশার আলো জ্বলে উঠল বিশ্বজিৎ মালিকের হৃদ্স্পন্দনে। আরও কিছু দেহের সঙ্গে ‘মৃত’ বিশ্বজিৎকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মর্গে। তার পরেও সাড়া মিলেছে তাঁর দেহে। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতাে ভর্তি তিনি।

হাওড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মালিকের বাবা হেলারাম মালিক জানান, ওই দিন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন তাঁর ছেলে। দুর্ঘটনার পরে কোচ থেকে বেরিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের ডান হাত থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছিল। এর পরে যখন তাঁর জ্ঞান ফেরে, তখন তিনি আরও কিছু লাশের স্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন, চলেছেন বাহানাগার অস্থায়ী মর্গের দিকে।

সেই মর্গে পৌঁছনোর পরেই যখন সার দিয়ে দেহ শোয়ানো হয়, তখন তাঁদের মাঝখান থেকে কোনও রকমে নিজের ডান হাত নেড়ে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিশ্বজিৎ। দেখে চমকে যান উদ্ধারকারীরাও! এমনও হয়! তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বের করা হয় বিশ্বজিৎকে। করা হয় শুশ্রূষা।

বিশ্বজিতের বাবা হেলারাম মালিক কামারশালায় কাজ করেন। ইস্পাত পিটিয়ে শক্ত করার কাজে দক্ষ তিনি। ছেলেকেও বড় করেছিলেন তেমন কঠিন করেই। তাই তিনি যেন দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই নিশ্চিত ছিলেন, কোনও না কোনও ভাবে প্রাণে বেঁচে রয়েছেন তাঁর ছেলে।

ফোনে ছেলের কোনও খবর না পেয়ে হেলারাম হাওড়ার এক স্থানীয় অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ডেকে সোজা রওনা দেন বালেশ্বরে। তবে, কোনও হাসপাতালেই ছেলেকে খুঁজে পাননি। স্থানীয় হাইস্কুলের অস্থায়ী মর্গেও যান তিনি। সেখানেও প্রথমে কোনও খবর না পেলেও, তার পরে জানতে পারেন, মারা গিয়েছে ছেলে। দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মর্গে। সেখান থেকেই আনতে হবে ছেলের ‘লাশ’।

জানার পরেও বিশ্বাস করেননি হেলারাম। তাঁর মন বলছিল, ছেলে এত সহজে হার মানবে না! তাঁর মনের জোরই যেন সত্যি হল। সত্যি হল ছেলের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। মর্গে পৌঁছে ছেলের ‘লাশ’ শণাক্ত করার বদলে জানতে পারলেন, ছেলে বেঁচে আছে! ফিরে পেলেন জীবিত ছেলেকে! তবে বালাসোরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশ্বজিৎকে ছাড়তে চায়নি প্রথমে। ঝুঁকি ছিল অনেক। অনেক চেষ্টার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ২৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হেলারাম মালিক ছেলেকে সোজা নিয়ে আসেন এসএসকেএম-এ। সেখানেই চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার চলছে তাঁর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here