দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিএসএফ-এর একান্ত সহযোগিতায় মৃত বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পেলেন সীমান্তের ওপারে থাকা তাঁর মে।

বৃহস্পতিবার নদিয়া সীমান্তের গ্রাম মাটিয়ারির বাসিন্দা নামাজ মন্ডল ৫৪  ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকির কমান্ডারকে জানান, সকাল ১০টায় তাঁর বাবা মারা গেছেন। নামাজের বোন এবং আত্মীয়স্বজন সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে থাকেন। বিএসএফ সাহায্য করলে বাবাকে শেষবার দেখতে পাবেন তাঁরা।

আন্তর্জাতিক সীমান্তের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তবাসীর মানসিক ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে বিএসএফ দায়িত্ব পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চিমবাংলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিএসএফের ৫৪ ব্যাটালিয়ন আবারও মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

মৃতের মেয়ে সাহেরা বিবি, লেলি খা (ভাগ্নি), সিরাজুল মন্ডল (চাচা) বাংলাদেশের চুয়াডাঙার সীমান্ত গ্রাম মধুপখালির বাসিন্দা। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই গ্রাম।  

কোম্পানি কমান্ডার অবিলম্বে মানবিক ও আবেগগত দিকটি মাথায় রেখে কোনও বিলম্ব না করে এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিএসএফের অনুরোধে সাড়া দেয় বিজিবি। তাই উভয় দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী পারস্পরিক সহযোগিতার কথা মাথায় রেখে মানবতাকে সর্বাগ্রে রেখে বাংলাদেশে বসবাসরত মেয়েকে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে জিরো লাইনে অন্তিম দর্শনের ব্যবস্থা করে। এভাবেই মেয়ে ও স্বজনরা মৃতকে শেষবার চোখের দেখা দেখে যান। 

প্রসঙ্গত, এর আগেও বিএসএফ-এর এই মানবিক দিক দেখেছিল উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত গ্রাম বাঁশঘাটার বাসিন্দারা৷ ওই গ্রামের মাহতাব মণ্ডল ১০৭ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত চৌকি সুটিয়ার কোম্পানি কমান্ডারকে জানান, তাঁর ভাই জুলফিকার আলি মণ্ডল, যিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক, তিনি মারা গেছেন। তাঁর তিন বোন এবং আত্মীয়স্বজন সকলেই সীমান্তের ওপারে, বাংলাদেশে থাকেন। বিএসএফ যদি সাহায্য করে, তবেই ভাইয়ের শেষ দেখা পাবেন বোন ও আত্মীয়রা। 

ফাইল চিত্র

আন্তর্জাতিক সীমান্তের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তবাসীর মানসিক ও সামাজিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) তাদের ডিউটি পালন করছে সেদিনও৷

ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁকে শেষ দেখার সুযোগ দিয়ে বিএসএফ শুধুমাত্র মানবতার ধর্মই পালন করেনি, প্রমাণ করেছে তাদের আদর্শ বাক্য – ‘জীবনের জন্য কর্তব্য’। 

সেখানকার পরিবেশ খুব অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে শেষ দর্শন শেষে সকল স্বজনরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এই উদ্যোগের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের মানবিকতার কারণে আমরা আমাদের ভাইয়ের শেষ দর্শন পেয়েছি।’

বিএসএফ-এর এক আধিকারিকের কথায়,  বিএসএফ জওয়ানরা দিনরাত সীমান্তে পলক না ফেলে মোতায়েন রয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি সীমান্তের বাসিন্দাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও তাঁদের ধর্মীয় সুখ-দুঃখের দিকটিও যত্ন নিয়ে দেখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকলেও মানবতা এবং মানবিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here