দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ তৃণমূল সরকারের চাকরি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ সরগরম বাংলা। এরমধ্যেই এবার খাদ্য দফতরের চাকরি দুর্নীতি নিয়ে নতুন অভিযোগ উঠল ৷

খাদ্য দফতরে এস আই পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৮ লক্ষ টাকা প্রতারণার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধে। তিনি হাবরার এক তৃণমূল কর্মী বলে জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে৷

জ্যোতিপ্রিয়র নাম করে হাবরার এক তৃণমূল কর্মী অমিত সাহা ওরফে ফেলার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগ করেছে একটি পরিবার। তাদের দাবি, খাদ্য দফতরের এস আই পদে ওই পরিবারের মেয়েকে চাকরি করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অমিত সাহা তাঁদের বলেছিল, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খোদ এই চাকরি করিয়ে দেবেন। এই বলে ওই পরিবারের কাছ থেকে চেকে ও ক্যাশে ধাপে ধাপে আট লক্ষ টাকা নেওয়া হয় বলে দাবি প্রতারিত পরিবারের।

গত বছর নভেম্বর মাসে এ বিষয়ে অশোকনগরের নবজীবন পল্লি এলাকার বাসিন্দা গোপাল দাস থানায় অভিযোগ করেছিলেন বলে তাঁর দাবি। কিন্তু তদন্ত না এগোনোয় ফের বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে লিখিত কোনও অভিযোগ হয়নি। পরিবারটিকে বরং লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর বাড়ি হাবরার বাণীপুর এলাকায়। অভিযোগ, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে এই কয়েক বছরে অশোকনগরের বাসিন্দা গোপাল দাসের থেকে সে চেক ও নগদে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ।

গোপাল বাবু জানান, তাঁর মেয়ে বিবাহবিচ্ছিন্না। তাঁর চাকরির জন্যই ওই তৃণমূল কর্মী ফেলার সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলেছিল মন্ত্রীর কোটায় খাদ্য দফতরের এস আই পদে চাকরি করিয়ে দেবে। তার জন্য চার লাখ টাকা দিতে হবে। সেই মতো প্রথমে দু লাখ টাকা চেক দেন গোপালবাবু।

কিন্তু পরে চেকে নিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় অভিযুক্ত। কয়েকদিন পর সে জানায় যে সহজে এই চাকরি হয় না। দর বেড়ে গিয়েছে। ১২ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ও মেয়ের গয়না বিক্রি করে মোট আট লাখ টাকা অভিযুক্তকে দেন বলে দাবি গোপালবাবুর। কিন্তু পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর দেখেন লিস্টে মেয়ের নাম নেই। এরপর অভিযুক্তকে ধরলে সে বলে, অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় লিস্টে থাকতে পারে। কিন্তু তাও হয়নি।

এরপর প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পারে হাবরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গোপালবাবু। মাস খানেক বাদে থানা থেকে অভিযুক্তকে নাকি ডেকেও পাঠানো হয়। তাকে দিয়ে একটি মুচলেকা লেখানো হয়। সেখানে চার মাসের মধ্যে ওই টাকা শোধ দেবে বলে জানায় অভিযুক্ত । কিন্তু তারপর থেকে সেই টাকা শোধ তো করেইনি উলটে ফোনও ধরছে না বলে অভিযোগ।

এই নিয়ে ওই পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা মন্ত্রী জ্যোর্তিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গেও দেখা করেন। জানান সবকিছু। যদিও এ ব্যাপারে জ্যোতিপ্রিয়র কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ফেলা নামে ওই যুবক তৃণমূলের কেউ নয়। বিভিন্ন সভাস্থলে ভিড়ের মধ্যে নেতাদের পাশে ওকে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। তবে তা দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না।

অবশেষে কোনও পথ না পেয়ে সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানান গোপালবাবু৷। বলেন, তাঁর মতো অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখন মেয়ের চাকরি নয়, তাঁর কষ্টে অর্জিত আট লাখ টাকা ফেরত চান তিনি। এদিকে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনেও যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে চায়নি সে।

লিখিত অভিযোগ পেলে হাবরার ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here