দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সুরলোকে ঝড়–ঝাপটা অব্যাহত। সেই ঝড়ে ভারতীয় সঙ্গীত জগতে ফের নক্ষত্র পতন। গোটা দেশের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষকে কাঁদিয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ি।

লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখার্জির পর এবার চলে গেলেন বলিউডের ‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পি লাহিড়ী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। লতা মঙ্গেশকর বা সন্ধ্যা মুখার্জির অসুস্থতার খবর আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু বাপ্পি লাহিড়ীর অকস্মাৎ মৃত্যুতে হতবাক তাঁর ভক্তরা। আট থেকে আশি তাঁর গানের ভক্ত আপামর ভারতবাসী। সঙ্গীত অনুরাগীদের মতে, তাঁর গানের সুর মেজাজ পাল্টে দিতে পারে সকলের। 

মাত্র ৬৯ বছর বয়সে চলে গেলেন বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল সুরকারের।  গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। সোমবার ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু মঙ্গলবার ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সঙ্গে সঙ্গে ওই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মাঝরাতে মারা গেলেন বাপ্পি। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া মৃত্যুর কারণ। 

সঙ্গীতশিল্পীর অগণিত ভক্তের মতোই তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

বর্ষীয়ান এই গায়ক তথা সুরকারের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ি (অলোকেশ লাহিড়ি)-র প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘উত্তরবঙ্গের সন্তান আমাদের বাপি লাহিড়ি অসামান্য প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমে সর্বভারতীয় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর সাঙ্গীতিক অবদানের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছেন, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবিস্মরণীয় সুরের জাদুতে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। হিন্দি, বাংলা ছাড়াও তিনি তেলুগু, তামিল, কন্নড় সহ বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রের গানে সুরারোপ করেছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে ‘বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ২০১৫ স্পেশ্যাল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে ‘মহানায়ক সম্মান’ ও ২০১৭ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে।
তাঁর মৃত্যুতে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি বাপি লাহিড়ির পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

বর্ষীয়ান গীতিকার ও সুরকার বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সঙ্গীতজগত। তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বুধবার সকালে টুইট করে শোকবার্তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। লিখেছেন, বাপ্পি লাহিড়ির মিউজিক সবসময় ছিল আবেগে পরিপূর্ণ, অসাধারণ। তাঁর কাজের সঙ্গে যুগে যুগে মানুষ নিজেকে একাত্ম মনে করবে। সকলে তাঁর প্রাণবন্ত জীবনীশক্তিকে মিস করবে। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। ওঁর পরিবার এবং অনুরাগীদের আমার শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি।

বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুর সংবাদে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। টুইটে তিনি লিখেছেন, কিংবদন্তী মিউজিশিয়ান বাপ্পি লাহিড়িজি আর নেই, এটা অত্যন্ত দুঃখের খবর। জলপাইগুড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। বাপ্পিদার মিউজিক চারিদিকে অনুরাগীদের মন ছুঁয়ে গেছিল। তাঁর অসাধারণ মিউজিক কম্পোজিশনের জন্য তাঁকে মনে রাখবেন সকলে। যে কোনও জেনারেশনের মানুষই তাঁর তৈরি গান ভালবাসেন। ওঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল।

ছোট্ট ছেলেটা তিন বছর বয়স থেকেই তবলা বাজাত। তবলার সঙ্গে ছিল তার হৃদয়ের সম্পর্ক। বাড়ির পরিবেশও গানের সুরে ভরপুর ছিল। তাই ছোট থেকেই গানের জগতে মন বসেছিল বাপ্পির।

বাপ্পি লাহিড়ির মা-বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন অলকেশ। ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। ছোট থেকেই তবলা বাজাতে দারুণ ভালবাসতেন। তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ি ও মা বাঁশরী লাহিড়ি দুজনেই ছিলেন গানের জগতের মানুষ। গানের সঙ্গে তাই ছোট থেকেই পরিচিত বাপ্পি। শুধু তাই নয়, স্বয়ং কিশোর কুমার সম্পর্কে বাপ্পি লাহিড়ির মামা।

এহেন গানের পরিবেশে সুরের সাধনায় উত্তরবঙ্গে বড় হয়ে উঠেছেন অলকেশ লাহিড়ি। ১৯ বছর বয়সে মুম্বই পাড়ি দেন তিনি। সেখানেই গড়ে তোলেন চোখ ধাঁধানো কেরিয়ার। বলিউডে একের পর এক দুরন্ত গান বানিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। শুধু বলিউড নয়, দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাপ্পি লাহিড়ি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। বাপ্পি লাহিড়ির অনুরাগীরা কেউ কেউ বলেন সুরকার না হলে তবলা বাজাতেন তিনি, তবলাতেই কেরিয়ার গড়তেন।

মুম্বইতে গিয়েই ‘বাপ্পি’ নাম নেন অলকেশ। সেই নামেই তাঁর ভুবনজোড়া খ্যাতি। আশি-নব্বইয়ের দশকে সুরে, গানে বলিউডে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বাপ্পি। তাঁর ‘ডিসকো ডান্সার’ গানের তালে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর পায়ে পায়ে যেন আজও নেচে ওঠেন সকলে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে আজও সেই গান বাজতে শোনা যায়, শুধু রইলেন না গানের কারিগরটি।

শুধু তো ডিসকো ডান্সার নয়, ‘চলতে চলতে’, ‘উলালা উলালা’, ‘ইয়াদ আ রাহা হ্যায়’, ‘রাত বাকি বাত বাকি’, ‘জাওয়ানি জানে মন’ বলিউডকে একাধিক সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন বাপ্পি লাহিড়ি।

সোনার জিনিসের সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক ছিল বাপ্পির। বলতে গেলে তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছিল সোনায় মোড়া। সোনার গয়না পরতে খুব ভালবাসতেন তিনি। বলিউডে তাঁকে ‘গোল্ড ম্যান’ বলেও চিনত লোকে। চোখের সানগ্লাস থেকে শুরু করে গলার হার, হাতের বালা সবেতে ছিল গুচ্ছ গুচ্ছ সোনা।

মুম্বইয়ের হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন সকলের প্রিয় বাপ্পি লাহিড়ি। তাঁর মৃত্যুতে দেশজোড়া শোকের আবহ। ৬৯ বছর বয়সেই থেমে গেছে ডিসকো কিংয়ের জীবনদৌড়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here