পার্থ সারথি নন্দী , বনগাঁ : সবুজ ঝড়ের আশায় যে ছিল তৃণমূল তা রবিবার ভোটগ্র হণের দিনই দেশের সময় লিখেছিল। আর আজ হলোও তাই ৷ সবুজ ঝড়ের দাপতে লন্ডভন্ড মতুয়া গড়ে বিরোধী শিবির৷ ২০১৯ লোকসভা এবং একুশের বিধান সভা ভোটে বনগাঁয় যে ছাপ রেখেছিল বিজেপি। তা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল পুরভোটে।

মতুয়াগড়ে বিধানসভা ভোটের পরই ভাঙন শুরু হয়েছিল বিজেপির। বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বনগাঁ পুরভোটে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রবলভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামে রাজ্যের শাসক দলের হয়ে। আর পুরভোটের ফল দেখে রাজনৈতিক মহল এখই বলতে শুরু করেছে এখানে তৃণমূল একেবারে ‘‌শেষ’‌ করে দিল বিজেপিকে।

প্রসঙ্গত, পুরভোটের মুখে মতুয়া ভক্তদের নিয়ে মিছিল করে চমক দিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতৃত্ব।গত সোমবার বনগাঁয় প্রায় পাঁচ হাজার মতুয়া ভক্তকে নিয়ে মিছিল করে তৃণমূল। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁ পুরসভার কয়েক জন তৃণমূল প্রার্থীও। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের গড়ে তৃণমূলের সেই মিছিল ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা শুরু হয়েছিল তখনই৷ জোড়াফুল শিবিরের বক্তব্যে , সেই মিছিল বিজেপি-র পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। যদিও তখন বিজেপি-র বক্তব্য, ওই মিছিলে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে।

এদিন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলপ্রার্থী গোপাল শেঠ তাঁর জয়ের শংসা পত্র হাতে নিয়ে তাঁর বাড়িতে ফিরে প্রথমে তাঁর প্রয়াত বাবা ভূপেন্দ্র নাথ শেঠ -র প্রতীকীতে ফুলের মালা দিয়ে প্রণাম করেন তারপর বলেন, আমাদের প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়া মানুষদের জন্য যে সমস্ত কাজ করেছেন তা তাঁদের কাছে তুলে ধরেছি এবং নেত্রীর কথায় বিশ্বাস রেখে তাঁরা বিজেপি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে ফিরে এসেছেন৷ আজ বনগাঁর মতুয়া গড় ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁদের সহযোগিতা ও সমর্থন অনস্বীকার্য৷

গোপালের কথায় এখানে মতুয়াতেই আস্থা রেখে সবুজ ঝড়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে বিজেপি- কংগ্রেস , ধূলীসাৎ সিপিএম৷ দেখুন ভিডিও:

৭ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী বিজেপি প্রার্থী দেবদাস মন্ডল বলেন এই ওয়ার্ডটাই আগে সবুজ দ্বীপছিল তৃণমূল পরাজিত হয়েছে এখানে,এবার গেরুয়া হল,বিচ্ছিন্ন তাহলে কারা? আমার জন্মটাই হয়েছে লড়াইয়ের জন্য, আগামীদিনে প্রমাণ করেদেব মতুয়ারা গেরুয়াতেই আছেন এবং থাকবেন৷
৫নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলপ্রার্থী দিলীপ মজুমদার.কে ঘিরে উল্লাস কর্মী সমর্থকদের৷

পুরভোটে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিধায়ক বিশ্বজিত দাস দেশের সময়কে অনেক আগেই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে পুরভোটে মতুয়াগড় উপহার দেবেন, হলও তাই৷ এদিন তিনি বলেন প্রকৃত মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছেন আবার ও প্রমাণহল৷ মতুয়ারা দিদির প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং বনগাঁকে সবুজ গড়ে পরিনত করেছেন৷

নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস৷

বনগাঁ পুরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের কোন প্রার্থী কত ভোটে জয়ী হলেন, তা এক নজরে—  

নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শিখা ঘোষ৷

১। দীপালি বিশ্বাস (তৃণমূল–৬২০)
২। শিখা ঘোষ (তৃণমূল–১০৪৪)
৩। গোপাল শেঠ (তৃনমূল–৮৪৯)
৪। জ্যোৎস্না আঢ্য (তৃণমূল–১৩৭০)
৫। দিলীপ মজুমদার (তৃণমূল–২৬১)
৬। প্রসেনজিৎ বিশ্বাস(তৃণমূল–১২৪০)

২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূ প্রার্থী নারায়ণ ঘোষ।


৭। দেবদাস মন্ডল (বিজেপি–১০৩১)
৮। বন্দনা মুন্সি (তৃণমূল–৩১৪)
৯। বন্দনা দাস (তৃণমূল–২৯৯২)
১০। কৃষ্ণা রায় (তৃণমূল–১৫৮২)
১১। শম্পা মোহন্ত (তৃণমূল–১৯১২)
১২। টুম্পা রায় (তৃণমূল–২৫৮৮)
১৩। মৌসুমী চক্রবর্তী (তৃণমূল–১৬২৫)
১৪। দিলীপ দাস (তৃণমূল–৪২৯)
১৫। অমিতাভ দাস (তৃণমূল–১৭২৮)
১৬। অভিজিৎ কাপুরিয়া (তৃণমূল–৯৬৫)

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী শর্মিলা দাস ৷

১৭। ঋতুপর্ণা আঢ্য (কংগ্রেস–৬৯৪)

১৮। চিরঞ্জিত বিশ্বাস(নির্দল– ৩৪৫)

১৯। শর্মিলা দাস (তৃণমূল–৬৫৪)

২০। নারায়ণ ঘোষ (তৃণমূল–২৩৮৮)

২১। সুরজিৎ দাস (তৃণমূল–১৬৩২)

২২। সুকুমার রায় (তৃণমূল–১০১৬)

‘মা-মাটি-মানুষকে কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা আরও বাড়ল’, টুইট মমতার :

পুরভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে (Fair Vote)। রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

আজ একটু পরে বারাণসী পৌঁছবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানে ওঠার আগে কলকাতা বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, রবিবার ১১০২৫টি বুথে ভোট নেওয়া হয়। তার মধ্যে সাতটি বুথে বড়জোর গোলমাল হয়েছে। তাও পাঁচটি বুথে ইভিএমে জটিলতা হয়েছিল বলে শুনেছি। মাত্র দু’টি বুথে পুনরায় ভোট নিতে হয়।

মমতা বলেন, মানুষ ভালোবেসে আমাদের ভোট দিয়েছে। অনেক নতুন জায়গায় আমরা জিতেছি। দলীয় কর্মী সমর্থকদের প্রতি তাঁর পরামর্শ এখন আরও নম্র, সংযত হতে হবে আমাদের। মানুষের প্রতি কর্তব্য আরও বেড়ে গেল।

একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদেরও একহাত নেন। ৭ তারিখ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা। মিটিং মিছিল করে তাদের পড়াশুনোর ক্ষতি করবেন না। তিরিশ বছর ধরে মিটিং মিছিল করে বাংলার অর্থনীতিকে শুধু পঙ্গু করেননি, কৃষি করেননি, শিল্প করেননি। কিছুই করেননি।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিজেপির অশোক কীর্তনীয়া বলেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হল। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল। পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে এ সব করিয়েছে।’’

অশান্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বনগাঁ পুরভোটে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বিরোধীরা মাঠে ছিল না। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিরোধীশূন্য বোর্ড হবে।’’

রবিবার ভোটের পরই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ভোট হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। তিনিও বলেছিলেন, কটা বুথে গোলমাল হয়েছে? ভোট তো হয়েছে এগারো হাজারের বেশি বুথে।
যদিও তৃণমূলের একাংশও পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ মেনে নিয়েছিল।

দমদমের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোলমাল এড়ানো গেলে ভাল হত। কিছু ঘটনায় দলের বদনাম হয়েছে। প্রবীণ সাংসদের বক্তব্য ওই দিনই খারিজ করে দেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। দলনেত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সৌগত কোনও প্রতিক্রিয়া দেন কিনা সেটাই দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here