দেশের সময়: বনগাঁর একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে। আছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সেই ইতিহাসকে কোনওভাবেই মুছে যেতে দেবে না এই শহরের বর্তমান প্রজন্ম। ১৮ আগস্ট বনগাঁর স্বাধীনতা দিবসের দিনটিতে আবেগ আপ্লুত আইনজীবী দীপাঞ্জয় দত্ত।

বনগাঁ আদালত চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান শেষে বনগাঁর ভূমিপুত্র হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গিয়ে গর্বে চিকচিক করছিল তাঁর চোখমুখ। বললেন, আজ যদি ভারতবর্ষের সঙ্গে বনগাঁ না থাকত, তা হলে হয়তো এই শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এভাবে ধরে রাখা সম্ভব হত না। এই শহরের যে নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, সেটাকে এতটা প্রসার ঘটানো সম্ভব হত না। ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাতে যখন ভারতবর্ষের মানচিত্র তৈরি হয়, বনগাঁ মহকুমাকে বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে রাখা হয়, তখন এখানকার মানুষ যেভাবে তার বিরোধিতা করেছিলেন, দাবি জানিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গ নয়, ভারতবর্ষের সঙ্গেই থাকতে চান তাঁরা, তাঁদের সেই আবেগ আমাদের কাছে সত্যিই নস্টালজিয়া। এই নস্টালজিয়াকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে বনগাঁর ইতিহাসকে।

১৫ আগস্ট যখন গোটা দেশজুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়, বনগাঁতেও তা হয়ে থাকে। কিন্তু ১৮ আগস্ট বনগাঁর নিজস্ব স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটিকে ভুললে চলবে কী করে। সেকারণেই বেশ কয়েকবছর ধরে বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আদালত চত্বরে পূর্ণ মর্যাদায় এই দিনটি পালন করা হয়।

বর্ষীয়ান আইনজীবীদের হাত ধরে শুরু হওয়া এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবার নতুন প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে। কারণ, এই শহরের নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না, এই দিনটি সম্পর্কে। তাঁদেরকে ইতিহাস জানানোর দায়বদ্ধতা গড়ে তুলতে হবে। দীপাঞ্জয় বলেন, বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অফিস সেক্রেটারি হিসাবে আমার দাবি থাকবে, প্রশাসনিকভাবেও যেন এই দিনটি বনগাঁ মহকুমার সর্বত্র পালন করা হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট তৎকালীন পরাধীন ভারতের ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করেন, ভারতবর্ষকে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দেওয়া হবে। এর পরই তৎকালীন ব্রিটিশ আধিকারিক সাইরিন রেডক্লিফ যিনি ভারতের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন, তাতে তথাকথিত বাংলা থেকে গিয়েছিল বিতর্কিত অবস্থায়।

বাংলার কিছু জেলা যেমন মালদহ, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এনিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়তে হয় ব্রিটিশ সরকারকে। সেই বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, শেষমেশ ব্রিটিশ সরকার মাউন্টব্যাটেনকে নতুন করে মানচিত্র তৈরি করার নির্দেশ দেন।

১৭ আগস্ট রাতে নতুন মানচিত্র প্রকাশ পায়। তাতে দেখা যায়, বনগাঁ মহকুমা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেই খবর আসতেই আনন্দে মেতে ওঠেন বনগাঁ মহকুমার মানুষ। ১৮ আগস্ট স্বাধীনতা প্রাপ্তির আনন্দে উদ্বেল হয়ে রাস্তায় নামেন বনগাঁর মানুষ। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই আবেগকেই ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর প্রবীণদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here