ধর্মতলার সভা থেকে বাংলার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে সরব হবেন, সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্টই ছিল। হলও তাই। এদিন তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে গেলেন শাহ।

দেশের সময়, কলকাতা: বুধবার ধর্মতলায় হয়ে গেল বিজেপির মেগা শো। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সকাল থেকে গ্রাম উজিয়ে শহরে এসেছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। চব্বিশের নির্বাচনের আগে শীর্ষ নেতৃত্ব ঠিক কী বার্তা দেন? কীসের ওপর হাতিয়ার করে নির্বাচনী রণকৌশল বাতলে দেবেন শাহ, সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন সকলে। শাহ এলেন, বক্তৃতা রাখলেন মিনিট তেইশ। আর তার মধ্যেই স্পষ্ট করে দিলেন, বাংলার শাসককে বিঁধতে ঠিক কোন বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছে ‘হাইকম্যান্ড’।

দুর্নীতির পাশাপাশি, অনুপ্রবেশকারী ইস্যু সিংহভাগ জুড়ে ছিল শাহি বক্তৃতার। বাংলায় এসে বঙ্গবাসীকে আরও একবার ‘CAA’ স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন শাহ। আশ্বাস দিলেন, “আমি এই সভা থেকে বলে যাচ্ছি CAA হল একটি আইন। একে কেউ রুখতে পারবে না। সকল হিন্দু ভাই বোনের দেশের উপর অধিকার রয়েছে।”

ধর্মতলার সভা থেকে বাংলার দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে সরব হবেন, সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্টই ছিল। হলও তাই। এদিন তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাংলার শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে গেলেন শাহ।

দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত মন্ত্রী ও নেতাদের নাম উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে শাহ বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলকে পার্টি থেকে সাসপেন্ড করে দেখান। দিদি রোজ দুর্গানাম জপছেন, যাতে ভাইপোর নাম না আসে।”

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে গত বছরের ২২ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। পার্থর বান্ধবী অপির্তা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৫১ কোটি নগদ টাকা। এরপরই পার্থকে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই খবর হয়তো অমিত শাহের কাছে নেই। সেকারণেই পার্থর নামও টেনে এনেছেন তিনি।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “আমি গুজরাতে রাজনীতি করেছি। কখনও কোনও নেতার বাড়ি থেকে এত বান্ডিল বান্ডিল টাকা বেরোতে দেখিনি।”

গরু পাচারের অভিযোগে গত বছর অগস্টে অনুব্রতকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। আর গত ২৬ অগস্ট গভীর রাতে রেশন দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করে ইডি। তৃণমূলের তরফে বারে বারে অভিযোগ করা হয়েছে, যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের পর্যুদস্ত করতে চাইছে মোদী সরকার। দলের তরফে সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের স্পষ্ট জানিয়েছেন, কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। কিন্তু তদন্তের নামে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে হয়রানি বরদাস্ত করা হবে না।

এদিন অমিত শাহর বক্তৃতার আগে বিধানসভায় বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, “একটার জায়গায় দুটো বিড়ি খেলে চোর? আর গেরুয়া পরলে সাধু?”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,  CAA- এই শব্দবন্ধ দুটি রাজনৈতিক দলের কাছেই একটি তরুপের তাস। কারণ বিজেপি বাংলার একটি শ্রেণিকে বোঝাতে চাইছে, বাংলায় তাঁর অধিকার এক ও সর্বাধিক। অন্যদিকে, বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেই এক শ্রেণির ভোটব্যাঙ্ককে সুনিশ্চিত করার প্রয়াস চালিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা এটাও বলছেন, চব্বিশের নির্বাচনের আগে CAA ইস্যুতে বেশ খানিকটা বিব্রত গেরুয়া শিবির। নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে মতুয়াদের একটা বড় ভোট ঝুলিতে ভরেছিল বিজেপি। হিন্দুদের নাগরিকত্বের আশ্বাস সেবার বিজেপির ভাল ‘ডিভিডেন্টের’ কাজ করেছিল। তারপর বিল পাশও হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ নাগরিকত্ব পাননি।

কেন্দ্রের সরকার যতটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই আইন কার্যকর করতে, ততটাই বিরোধিতায় তৎপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বরাবর বঙ্গবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন, “সিএএ নিয়েও চিন্তা করবেন না। আমি বাংলার মানুষের পাশে আছি। এ মাটি আমাদের। বাইরের কে কী বলল, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

ধর্মতলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাহ এদিনও আবার বললেন, “আমি এই সভা থেকে বলে যাচ্ছি, CAA হল একটি আইন। একে কেউ রুখতে পারবে না।” উদাহরণ দেন অসমের। তাঁর কথায়, ” অসমে বিজেপি সরকার হয়েছে। সেখানে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে। আর এখানে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ৩০ লক্ষ ভুয়ো অনুপ্রবেশ ঘটে সেখানে বিকাশ সম্ভব?”  চব্বিশের নির্বাচনের আগে এসে, আরও একবার এক ‘কার্ড’ ছুড়ে দিয়ে গেলেন শাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here