দেশের সময়: কংগ্রেসের তরফে তাঁর কাছে আমন্ত্রণ এসেছিল। সিদ্দারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমারও তাঁকে আলাদা করে ফোন করেছিলেন বলে খবর। কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সিদ্দারামাইয়ার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিদ্দাকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়ে জরুরি কাজ আছে বলে তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানিয়ে দিলেন। পরিবর্তে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠালেন দলের সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদারকে।

ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, সিদ্দারামাইয়ার শপথে যোগ না দিয়ে মমতা ঘুরিয়ে কোনও বার্তা দিতে চাইলেন না তো কংগ্রেসকে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, বেঙ্গালুরুতে না যাওয়ার পিছনে মমতার স্পষ্ট একটি বার্তা রয়েছে। কয়েকদিন আগেই মমতা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, যে দল যেখানে শক্তিশালী, তাকে সেখানে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কংগ্রেসকে আমরা সমর্থন করব।

কিন্তু কংগ্রেস এ রাজ্যে প্রতিদিন তৃণমূলকে আক্রমণ করবে, এটা চলতে পারে না। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সিদ্দার শপথ অনুষ্ঠানে মমতা কংগ্রেস হাইকমান্ডকে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, আগে তারা তাদের রাজনৈতিক লাইন ঠিক করুক। অর্থাৎ তারা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে আক্রমণ করবে, নাকি করবে না? তারপর মমতা সরাসরি কংগ্রেসের সখ্যতা তৈরির পথে হাঁটবে। এদিকে মমতার এই মনোভাব ব্যক্ত হওয়ার পরই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর কি তা হলে কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

কারণ, সাগরদিঘি উপ নির্বাচন হোক কিংবা কর্ণাটক জয়, অধীর সংবাদ মাধ্যমে তৃণমূল এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তৃণমূল দল উঠে যাবে বলে মন্তব্য শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাঁকের কই হয়ে এখন কংগ্রেসের সঙ্গে ভিড়তে চাইছেন বলেও মন্তব্য করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর এ ধরনের মন্তব্যেই যে কংগ্রেস হাইকমান্ডের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুষ্ট, হাবেভাবে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এবার তাহলে কংগ্রেস হাইকমান্ড কী করবে? মমতার সঙ্গে জোটের স্বার্থে অধীরকে কি চুপ করিয়ে দেওয়া হবে? সেক্ষেত্রে কর্ণাটক জয়ের পর কংগ্রেস এ রাজ্যে যেটুকু অক্সিজেন পেয়েছে, সেটা ফের তলানিতে চলে যাবে। আবারও ঝিমিয়ে পড়বেন কংগ্রেস কর্মীরা। আর তৃণমূলকে অল আউট আক্রমণের মধ্যে দিয়েই কংগ্রেসের এ রাজ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অধীরের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গে সাইন বোর্ডে পরিণত হওয়া কংগ্রেসকে বাঁচানোর আর কোনও চেষ্টাই কাজে লাগবে না। কারণ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কংগ্রেস ভেঙেই তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়েছে। এখন তৃণমূলের যা পরিস্থিতি, তাতে অনেকেই বীতশ্রদ্ধ। তাঁদেরকে ফের কংগ্রেসে টানতে এটাই মোক্ষম সময়। ফলে কংগ্রেসকে পথে নামতে হবে। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ে কংগ্রেস আদৌও কতটা লাভবান হবে, প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে তা নিয়েও ৷

কারণ, মানুষ বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হলেও এ রাজ্যে আর সিপিএমকে এখনই চাইছে না। কারণ, সিপিএমের সেই পুরনো মুখে বেশিরভাগ মানুষই ভরসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক মহল বলছে, লোকসভা ভোটের আর এক বছরও বাকি নেই। সেখানে সিদ্দারামাইয়ার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী জোটের বার্তা দেওয়া উচিত ছিল মমতা। তা হলে কেন তিনি জরুরি কাজের কথা বলে এড়িয়ে গেলেন ওই অনুষ্ঠান। তা হলে কি বেঙ্গালুরুতে সিদ্দার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যেহেতু রাহুল গান্ধী থাকবেন, সেটাতেই তাঁর অ্যালার্জি ছিল? কারণ, অতীতেও দেখা গিয়েছে, রাহুলের নেতৃত্বকে মমতা মোটেই মেনে নিতে পারেননি। রাহুল জোটের ছড়ি ঘোরাবেন, এমনটা একেবারেই মানতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী। 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একটি অংশের বক্তব্য, কখনওই মুখে না বললেও মমতা বরাবরই চেয়েছেন বিরোধী জোটে মধ্যমণি হয়ে থাকতে। অর্থাৎ তাঁর নেতৃত্বেই সবটা হবে। সেখানে যখনই বাধা হয়েছে, তখনই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একলা চলার কথা বলেছেন। আগামী ২৫ তারিখ মমতা দিল্লি যাচ্ছেন। যোগ দেবেন নীতি আয়োগের বৈঠকে। এবারের দিল্লি সফরে সংবাদ মাধ্যমের সামনে জোট নিয়ে নিজের অবস্থান আরও একবার খোলসা করতে পারেন মমতা, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অনেকেরই প্রশ্ন, লোকসভায় যদি অ-বিজেপি দলগুলির জোট হয়, আর সেই জোটে যদি কংগ্রেস ও তৃণমূল থাকে, তা হলে লড়াইয়ের সমীকরণ কী হবে। কংগ্রেসের এখনও পর্যন্ত জেতার জন্য সম্ভাবনাময় আসন বলতে মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর। ফলে স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া যায়, এই জেলাগুলিতেই আসন চাইবে কংগ্রেস। কিন্তু তৃণমূল কি তা আদৌও ছাড়তে চাইবে? সেক্ষেত্রে মমতা হয়তো ভোট পরবর্তী জোটের কথাই বলবেন। অর্থাৎ আগে ভোট হোক, কে, কতগুলি সিট পাচ্ছে তা দেখে ফল ঘোষণার পর জোটের কথা ভাবা যাবে। এমনটা হলে তৃণমূল ও কংগ্রেসের ভোট মঞ্চে সঙ্ঘাত অনিবার্য হয়েই দাঁড়াবে। 

এদিকে, মমতাকে আমন্ত্রণে জানানো হলেও সিদ্দার শপথে বিজেপি বিরোধী অন্যতম মুখ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি? কিন্তু কেন? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, পাঞ্জাবের জলন্ধরে উপ নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি। সেই রোষেই কি কেজরিওয়াল সিদ্দার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন না?

উঠছে এই প্রশ্ন। কিন্তু আপ নেতাদের বক্তব্য, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর কেজরিওয়ালই কিন্তু সবার আগে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। ফলে কংগ্রেস যদি সংকীর্ণ রাজনীতির গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আসত, তাহলে ভাল হত। আমন্ত্রণ থেকে বাদ পড়েছেন কে সি আর, নবীন পট্টনায়েক, মায়াবতী, জগন্মোহনরা। মূলত নানা রাজনৈতিক সমীকরণ মাথায় রেখেই তাঁদের ডাকা হয়নি বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here