দেশেরসময় , বনগাঁ: হচ্ছেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার আর এক নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নতুন স্বপ্ন গড়ার তিনিই কারিগর। ফের মতুয়াগড়ে সবুজ ঝড় উঠবে ৷ মন্তব্য বর্নগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠের ৷

শনিবার থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে কর্মীদের নতুন তৃণমূল সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিলেন বনগাঁর পুরপ্রধান।

গোপাল শেঠের কথায় , ” নতুন তৃণমূলটা আসলে কী? এটাই নতুন তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আর তৃণমূলের নেতারা তৈরি করবে না। বাংলার মানুষ মতামত দেবে। এটাই হচ্ছে নতুন তৃণমূল কংগ্রেস। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হচ্ছে সেই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবার জন্য এই জেলাতেও আসছে।”

১০ই জুন শনিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নবজোয়ার এর রথ প্রবেশ করবে। পুরপ্রধান জানান, বিরোধীদের সব অভিযোগ ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছেন আমাদেত নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের মতুয়াগড়ে সবুজ ঝড় উঠবে ৷

গোপালবাবুর কথায়, তাঁরা ভাবছে একটা বাচ্চা ছেলে করছে কী? ভারতবর্ষে আর কোনও দ্বিতীয় মানুষের নাম শোনা যায়নি, যে টানা দুমাস একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাম আমল থেকে এই মহকুমা তৃণমূলের খাস তালুক হিসেবে পরিচিত ছিল ৷ তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্যে ধাক্কা লাগে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৷  বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ৷ ২০২১ সালে বনগাঁ মহকুমায় ৪টি বিধানসভা আসনেই জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা ৷

সামনে পঞ্চায়েত ভোট তাই অভিষেকের কর্মসূচিকে সামনে রেখে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তৃণমূল ৷ জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর অভিষেকের কর্মসূচি সফল করতে জোরদার প্রচার কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা ৷

এলাকাভিত্তিক কর্মিসভা হয়েছে ৷ ৬২টিরও বেশি পথসভা হয়েছে নেতা মন্ত্রীরা বেশ কিছু প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন মহকুমা জুড়ে দেওয়াল লিখন পোস্টার ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে।

তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বে জানা গিয়েছিল, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে এখানে দলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল ৷  কিছু নেতাকর্মীর জনবিচ্ছিন্ন অবস্থা। সেইসঙ্গে তাঁদের অহংকারও মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল৷ অভিষেকের কর্মসূচির আগে দলের নেতা কর্মী , জনপ্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ বাড়াচ্ছেন ৷ এছাড়া গোষ্ঠী কোন্দল তৃণমূল  নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ এই এলাকায় ৷

স্থানীয় তৃণমূলের নেতা ও জন প্রতিনিধিদের অনেকের ভাবমূর্তি নিয়েও মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে ৷  কিছু পঞ্চায়েত প্রধান , সদস্যের বিরুদ্ধে নানা সময়ে দূর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে ৷ সেসব খামতি মিটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অভিষেকের কর্মসূচিকেই আপাতত পাখির চোখ করেছেন এলাকার নেতারা ৷

গত পাঁচ বছরে মহকুমায় কয়েকজন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মারা গিয়েছেন। তারফলে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে ৷ তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস গত বিধানসভা ভোটে বাগদা থেকে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে ছিলেন। পরে তৃণমূলে যোগদান করেন ৷  তাঁকে জেলা সভাপতি করা হয়। যা নিয়ে তৃণমূলের একাংশের মধ্যে হতাশা আছে বলে মানছেন দলের নেতৃত্বের একাংশ ৷

লোকসভা বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভরাডুবির আরো একটি কারণ ছিল , মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের সমর্থন হাত ছাড়া হওয়া ৷ কেন্দ্রের পক্ষে থেকে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বিজেপির প্রতি মতুয়াদের সমর্থন বেড়েছিল ৷ সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়দের  আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ গুরুচাঁদ  ঠাকুরের নাম ভূল উচ্চারণ বলে অভিযোগ উঠেছিল ৷

যা নিয়ে জল ঘোলা  হয় বিস্তর ৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছেন , অভিষেক নিশ্চয়ই নব জোয়ার কর্মসূচিতে এসে মতুয়াদের মন জয় করার চেষ্টা করবেন। নাগরিকত্ব না পাওয়া নিয়ে মতুয়াদের ক্ষোভকে তিনি কিভাবে কাজে লাগান , তা নিয়েও কৌতুহল আছে রাজনৈতিক মহলের ৷

নব জোয়ার কর্মসূচির প্রস্তুতি হিসেবে জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্লক ভিত্তিক সভা করা হয়েছিল ৷ বাগদা, বনগাঁ ,গোপালনগরের সভায় বেশ কিছু বুথ সভাপতি গরহাজির ছিলেন যা গোষ্ঠী কোন্দলের  ইঙ্গিত বলেই রাজনৈতিক মহলের মত ৷

যদিও গোপাল শেঠের দাবি,  কিছু কর্মী নানা কারণে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ৷ তাঁদের সক্রিয় করা হয়েছে ৷ যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ছিল ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে দল ৷ অরাজনৈতিক, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষকে দলের দায়িত্বে আনা হয়েছে। এর ফলে নব জোয়ার কর্মসূচির আগে তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারে ফের সবুজ ঝড় উঠবে মতুয়াগড়ে৷

উল্লেখ্য, আগামী ১০ তারিখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নবজোয়ার কর্মসূচি এই জেলায়। কল্যাণী থেকে হয়ে হরিণঘাটার মধ্য দিয়ে নগরউখড়া হয়ে জলেশ্বর পোঁছাবে। সেখানে জলেশ্বর মন্দিরে পুজো দেবেন অভিষেক। সেখান থেকে চলে যাবেন চাঁদাপাড়া,ঝাউডাঙা দিয়ে ঢুকবেন।

ডেউপুল, কৈপুকুর, গোয়ালবাধান, ঝাউডাঙ্গা বাজার, পাঁচপোতা, শিমুলপুর হয়ে রামচন্দ্রপুর গাইঘাটায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাত্রিযাপন করবেন। পরদিন তিনি রামচন্দ্রপুর থেকে বেড়িয়ে মতুয়া ধামে ঠাকুরিবাড়িতে তাঁর পুজো দেওয়ার কথা। সেখান থেজে বেড়িয়ে গাইঘাটা থানার মোড় থেকে ইছাপুর ১,২ গোবরডাঙা পুরসভা হয়ে নকপুল, মছলন্দপুর শিমুলপুরে একটা জনসভা করবেন।

এরপর তিনি যাবেন হাবরা চৈতন্য কলেজের ২নম্বর রেলগেটে আসবেন সম্ভাব্য সময় ১১ তারিখ বিকেল পাঁচাটা। তারপর কলেজের সামনে দিয়ে বিল্ডিং মোর হয়ে সোজা তিনি রেলগেট পার করে চলে যাবেন গুমা।এই পর্যন্ত কর্মসূচি ফাইনাল আছে,এর পরের নবজোয়ার রথে আপডেট এখনও হয়নি বলে জানান পুর প্রধান গোপাল শেঠ ৷

পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট বেজে গিয়েছে ইতিমধ্যে। শাসক দল নিজেদের সঠিক প্রমাণিত করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। একই ভাবে বিরোধী দলগুলি শাসক দলকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবক শেখাতে তৈরি। আগামী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মনোনয়ন জমা, দেওয়াল লিখন, প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে সব দলই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here