দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: প্রতীক্ষার প্রহর শেষ। দেশবাসীকে স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্টের রায়। নির্ভয়ার চার দোষীর ফাঁসির দিন ঠিক হল অবশেষে। আগামী ৩ মার্চ সকাল ৬টায় তিহাড় জেলে একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে।

দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে এদিন নতুন করে ফাঁসির দিন ঘোষণা করেন বিচারক ধর্মেন্দ্র রানা। নানা আইনি প্রক্রিয়ায় চার দোষীর ফাঁসির দিন বারে বারেই পিছিয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় চার অপরাধী মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত ও অক্ষয় ঠাকুরের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়া জারির আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই মামলারই শুনানি ছিল আজ দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে।

বিচারক বলেছেন, আগামী ৩ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় একসঙ্গে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হবে চার আসামি অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত, বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংকে। এই মর্মে নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে।
জানুয়ারি মাস থেকে দু’বার তারিখ ঠিক হওয়ার পরেও পিছিয়ে গেছে ফাঁসি। এর পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্ভয়ার বাবা মা ও দিল্লি সরকার আদালতের দ্বারস্থ হন। চার অপরাধীর ফাঁসির নতুন দিন ঠিক করার দাবিতে পিটিশন দায়ের করেন। নতুন করে ফাঁসির দিন ঘোষণা হওয়া পরেও স্বস্তি পাননি নির্ভযার মা আশা দেবী। বলেছেন, ‘‘এই নিয়ে তৃতীয়বার ফাঁসির দিন ঘোষণা হল। আইনি ফাঁকে বারে বারেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এখনও নাকি কিছু আইনি পক্রিয়া বাকি। আমরা দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ পেরিয়েছি। আশা করব নির্দিষ্ট দিনেই ফাঁসি হবে দোষীদের।’’
দিল্লি হাইকোর্ট নির্ভয়া কাণ্ডে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত চার অপরাধীকে সাত দিন সময় দিয়েছিল। জানিয়েছিল, ফাঁসির বিরুদ্ধে যাবতীয় আইনি রাস্তার সুযোগ নিতে চাইলে, তা এর মধ্যেই নিয়ে ফেলতে হবে। এই সাত দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে চার অপরাধীর নামে নতুন করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে রাজি হয়নি দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্ট। একই ভাবে সুপ্রিম কোর্টও এ দিন সাত দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে নাক গলাতে চায়নি। দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিল, চার অপরাধীকে একসঙ্গে ফাঁসি দিতে হবে। কারণ, একই অপরাধের জন্য তাদের একই শাস্তি হয়েছে।
দিল্লি হাইকোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একসঙ্গে মামলা করেছিল কেন্দ্রীয় ও দিল্লির সরকার। দাবি ছিল, যাদের সামনে আইনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাদের আলাদা ভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো যাবে না কেন এবং এক অপরাধীর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে বাকিদের ফাঁসি পিছিয়ে যাবে কেন সে প্রশ্নও তুলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি আর ভানুমতীর বেঞ্চে যুক্তি দিয়েছিলেন, দেশের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে চার অপরাধী। আইনি মারপ্যাঁচকে হাতিয়ার করে বার বারই শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তুষার মেহতে প্রশ্ন তোলেন, এইভাবে বার বার ফাঁসির দিন পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রশাসন কি অনির্দিষ্টকাল অবধি অপেক্ষা করে থাকবে। চার জনের মধ্যে তিন জনেরই প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। আর কোনও আইনি প্রক্রিয়া বাকি নেই। একমাত্র পবন গুপ্ত এখনও আদালতের রায় সংশোধনের মামলাই করেনি। কেন্দ্রের আইনজীবীর যুক্তি ছিল, যাদের ক্ষেত্রে প্রাণভিক্ষার আর কোনও রাস্তাই খোলা নেই, তাদের ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হোক।
নির্ভয়া কাণ্ডের তিন দণ্ডিতের সব আইনি বিকল্প শেষ। একমাত্র বাকি ছিল পবন গুপ্ত। তার হাতে আছে সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনের আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা। এই দুই আর্জিই খারিজ না হওয়া পর্যন্ত সংশয় একটা রয়েই যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here