দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গোষ্ঠী কোন্দলে বিদীর্ণ হুগলি জেলার সংগঠনকে ঠিক করতে সব নেতাদের বুধবার ডাকা হয়েছিল যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে। দিলীপ যাদব, প্রবীর ঘোষাল, অপরূপা পোদ্দার, বেচারাম মান্না-সহ হুগলির তাবড় নেতাদের নিয়ে বৈঠক চলাকালীনই ফোন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দেন এবার থেকে তিনিই হুগলি জেলার সংগঠন দেখবেন।

বৈঠকের মাঝে যে মমতা ফোন করেছিলেন একথা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রবীর ঘোষাল। তিনি জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। আশা করছি সমস্যা মিটবে। ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে।

মূলত, জেলার অধিকাংশ বিধায়কের ক্ষোভ জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের বিরুদ্ধে। তবে দিলীপ যাদবকে সভাপতি পদ থেকে না সরানো হলেও এদিনের বৈঠকে তাঁর ডানা ছাঁটা হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। কারণ, এদিনের বৈঠকে একটি কোর কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই বৈঠক করে.কর্মসূচি ঠিক করবেন এবং কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে দেখবেন।

গত কয়েক দিনে হুগলির নেতাদের কোন্দল চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। নাম না করে দিলীপ যাদবকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না। পাল্টা খোঁচা দিয়েছিলেন দিলীপ যাদবও। প্রবীর ঘোষালও কটাক্ষ করেছিলেন জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে।

পরিস্থিতি যখন এমনই তখন সোমবার রাতে তৃণমূলের পাঁচ নেতার কাছে ফোন যায় সর্বোচ্চ নেতৃত্বের। সূত্রের খবর, তাঁদের বলা হয়, আপনারা কি হুগলি থেকে পার্টিটাকে তুলে দেবেন? আরামবাগ মহকুমায় তো তুলেই দিয়েছেন। দিনের পর দিন কর্মসূচি হয় না। জানেন, কোন কোন অঞ্চল সভাপতি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন?

এহেন ফোনের পরেই মঙ্গলবার জানা যায় বুধবার বৈঠক ডেকেছেন অভিষেক। এদিনের বৈঠকের পরে বিরোধ ঠেকাতে নিজে হস্তক্ষেপ করেন দিদি। কিন্তু এরপরও অনেকে বলছেন, অতীতে বহুবার এমন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুদিন পর আবার এক দলাদলি।

এর আগে নদিয়া জেলা সংগঠন নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। মহুয়া মৈত্র, গৌরীশঙ্কর দত্ত, অরিন্দম ভট্টাচার্য, শঙ্কর সিং– এক একজন নেতার এক এক গোষ্ঠী। উনিশের লোকসভার আগে সেই কোন্দল মেটাতে নদিয়ার নেতাদের বিধানসভা এমনকি নবান্নে ডেকেও বৈঠক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উনিশের গোড়ায় মন্ত্রিসভার রদবদলে নদিয়া থেকে রত্না ঘোষ করকে মন্ত্রী করা নিয়েও তীব্র কোন্দল দেখা গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত লোকসভা ভোটে রানাঘাট আসন হারতে হয় তৃণমূলকে।

কিন্তু এবার সামনেই একুশের ভোট। লোকসভায় হুগলির ফল দেখলেই স্পষ্ট তৃণমূল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। একটি আসন হাতছাড়া হয়েছে। সুতোর ব্যবধানে জয় এসেছে আরামবাগে, এই পরিস্থিতিতে কী করবেন হুগলির নেতারা? উত্তর দেবে সময়ই। তবে জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই সব কোন্দলই আসলে নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থে। এখানে দল গৌণ। ফলে নেতৃত্বের ধমক খেয়ে সাময়িক ঠান্ডা হলেও ভিতরে কোন্দল থেকেই যায় ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here