দেশের সময় ,বাগদা: নদিয়ার হাঁসখালির দুর্ঘটনায় ‌উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদন গ্রামের নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বনগাঁর সাংদদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা । অনুরোধ করলেন, ‘‘তাঁদের জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিক কেন্দ্র সরকার। না হলে সংসারগুলো ভেসে যাবে।’’

পাশাপাশি এদিন মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন আহতদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। অনেকে মন্ত্রীর কাছে কাজের আবেদন জানান। ‌আর্থিক সাহায্যের পাসাপাশি যেকোনও প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। 

উল্লেখ্য,গত শনিবার গভীর রাতে উত্তর ২৪ পরগনা বাগদার পারমাদন গ্রাম থেকে নবতিপর শিবাণী মুহুরির দেহ নবদ্বীপে সৎকার করতে নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বাগদার পারমাদন এলাকার ১৩ জন। অনেক পরিবারেই একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় পরিবারগুলির এখন চিন্তা, বাকি দিনগুলো চলবে কী করে!

ওই দিনের পথ দুর্ঘটনায মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের। তার মধ্যে পারমাদন গ্রামের ৮ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছিলেন ৬ জন। এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে আলোড়ন পরে যায়।

সহযোগিতা, সমবেদনা জানাতে সেই সময় ওই গ্রামে হাজির হন রাজ্যের বন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি আলোরানী সরকার-সহ স্থানীয় নেতৃত্বরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের সৎকারের ব্যবস্তা করা হয় বনগাঁ পুরসভার তত্বাবধানে সেই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েদেন পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ। পাশাপাশি পরিবারের হাতে মাথা পিছু ২ লক্ষ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামে মোমবাতি মিছিল করেন গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীরা।সেদিন বিকেলেই ফের বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এলাকায় যান। সঙ্গে ছিলেন সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান সৌমেন ঘোষ, বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তরুণ ঘোষ। সেখানে তন্দ্রার সঙ্গে দেখা হয় বিধায়কের। তাঁর বাবা শ্যামল বিশ্বাস দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তন্দ্রার বাপের বাড়ি পারমাদন-সংলগ্ন ঝুপা গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি পারমাদনে। তাঁর শ্বশুর রবীন্দ্রনাথ মুহুরি দুর্ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তন্দ্রার বাবা শ্যামল বিঘে দু’য়েক জমিতে চাষবাস করতেন। পরিবার চলত তাঁর আয়েই। বাপের বাড়িতে রয়েছেন মা তাপসী এবং অসুস্থ ঠাকুমা বাসন্তী। কী ভাবে তাঁদের ভরণপোষণ চলবে, তা ভেবে চিন্তিত তন্দ্রা। তাঁর কথায়, ‘‘মা একটা কাজ না পেলে না খেয়ে মারা যাবেন। আমি কাজ পেলেও মাকে দেখতে পারব।’’

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তন্দ্রার শ্বশুরবাড়িতেও একমাত্র রোজগেরে তাঁর শ্বশুর। স্বামী দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বাবা হয় তো আর কাজ করতে পারবেন না। আমাকে একটা কাজ জোগাড় করতেই হবে। না হলে সংসারটা ভেসে যাবে।’’

এরপর শুক্রবার বনগাঁ লোকসভার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাগদার পারমাদন গ্রামে যান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে একাধিক নিহতের পরিবার থেকে কাজের আবেদন জানানো হয়।

দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বৃন্দাবন ও জয়ন্তী মুহুরির। তাঁদের একমাত্র ছেলে প্রসেনজিৎ আবুধাবিতে কাজ করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার সস্ত্রীক বাড়ি ফিরেছেন। এদিন বললেন, ‘‘আর বিদেশে যাওয়া হবে না। বাড়িটা তো শ্মশান হয়ে গেল। কী করে ফিরব! এখানেই একটা কাজকর্ম খুঁজতে হবে। সরকার কাজের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সুকুমার বিশ্বাস। বাড়িতে ছেলে সমীর ও স্ত্রী শ্যামলী। সুকুমার চাষবাস করতেন। তাঁর আয়েই সংসার চলত। সমীর এ বারই বিএ পাস করেছেন। বিধায়কের কাছে কাঁদতে কাঁদতে তিনিও কাজের অনুরোধ জানালেন। বললেন, ‘‘কী করে মায়ের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দেব জানি না।’’

দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন অমলেন্দু বিশ্বাস এবং অমর বিশ্বাস নামে দুই ভাই। দু’জনেরই এক ছেলে, এক মেয়ে। দু’জনের ছোট দোকান ছিল। তাঁদের রোজগারেই অন্নসংস্থান হত। স্ত্রী বাসন্তী, মল্লিকারা চিন্তিত, ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা, তা ভেবে।

এসব কথা শুনে, সেই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানান, ‘‌কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী দিনে নিহতদের পরিবারের কারোর যদি কাজের ব্যবস্থা  করার প্রয়োজন হয়, সেটিও করার ব্যবস্থা করা হবে।’ এদিন বাগদার গ্রামে মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল সহ অন্যান্য কর্মী সমর্থকরা৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here