দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুরিয়া থেকে গ্রেফতার হয়েছিল লস্কর-ই-তৈবার লিঙ্কম্যান তানিয়া পরভিন। এবার তার বিরুদ্ধে ৮৫০ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে এনআইএ। ২১ বছরের কলেজ ছাত্রীর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৭০টি জিহাদি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে প্যালেস্টাইন এবং সিরিয়ারও বেশ কিছু জিহাদি গ্রুপ রয়েছে বলে জানিয়েছে এনআইএ। 

তারা আরও জানিয়েছে যে কৌশলগত তথ্য সংগ্রহের জন্য পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর তরফে তানিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যাতে সে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে। মূলত বাংলা থেকে জঙ্গি নিয়োগের দায়িত্ব ছিল তার উপর। সবই হতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।

এনআইএ তাঁদের চার্জশিটের প্রায় ৯০ শতাংশ ধরে শুধু তানিয়ার নানা কার্যকলাপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে, যা দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছেন সকলে। সেখানে বলা হয়েছে, লাহোরে থাকা লস্করের সক্রিয় সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত তানিয়া। আইএসআই-এর দফতরে তাকে ‘লোকাল রিক্রুটার’ হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছিল। 

লস্করের সদস্যদের সঙ্গে সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে তানিয়ার যে কথোপকথন হয়েছিল সেই মেসেজ চ্যাটের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। এনআইএ-র তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই সাংকেতিক চ্যাট খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে যে যথেষ্ট গুরুতর বিষয় নিয়ে লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল তানিয়ার।

গত ১২ জুন বাদুরিয়া থেকে মৌলানা আজাদ কলেজের ছাত্রী তানিয়াকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। এরপর তদন্তভার যায় এনআইএ-র হাতে। এনআইএ সূত্রে খবর, অনলাইন মডিউলে লস্করের জন্য জিহাদি নিযুক্ত করত তানিয়া পরভিন। তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তানিয়ার বাসস্থান বাদুরিয়ায় ২০১৭ সালে ভয়ানক হিংসা ছড়িয়েছিল একটি সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টের কারণে। অনুমান, এই ঘটনা গভীর ভাবে তানিয়ার মনে প্রভাব ফেলেছিল।

এবং এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জঙ্গি কার্যকলাপে নিযুক্ত হয় এই কলেজ পড়ুয়া। কাশ্মীরের ভূখণ্ডে জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনলাইন মডিউলে ঠিক কী কী কাজ করত তানিয়া তা জানতে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে এনআইএ। আর সেই তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছে যে কাশ্মীরের প্রতি একটু বেশিই আগ্রহ ছিল তানিয়ার।

সোশ্যাল মিডিয়ায় জিহাদি কার্যকলাপ সক্রিয় করে তোলার মিশনে ক্রমশ দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছিল তানিয়া। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে একাধিক ভুয়ো প্রোফাইল ছিল তার। এইসব প্রোফাইল থেকে হানি ট্র্যাপ করে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের ফাঁসিয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তানিয়ার নামে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিক ভুয়ো প্রোফাইল থাকলেও হানি ট্র্যাপের অভিযোগে এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ ছিল তানিয়া জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত এবং উত্তর ২৪ পরগনার কিছু খবরাখবর দিত। তার বাবা একজন সামান্য কৃষক। তানিয়া কলেজ ছাত্রী ছিল। দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন কম–বেশি মাসে ৭ হাজার টাকা তার মোবাইলের বিল দিতে হত। সেই টাকা তার অ্যাকাউন্টে বাইরে থেকে জমা হত। তার বাড়ি থেকে কিছু আপত্তিকর কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গিয়েছিল তানিয়া।

এলাকায় ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত তানিয়া বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের পড়াত। তানিয়ার গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় বাসিন্দারা অবাক হয়েছিলেন, চুপচাপ শান্ত মেয়েটি জঙ্গিদের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে পড়ল। তাকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। দিল্লিতে সে একবার গিয়েছিল। এনআইএ তার ফোন নম্বর পরীক্ষা করে দেখে মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে ফোন করা হয়েছে। ফোন এসেছেও তার মোবাইলে। এরপরেই লোকেশন খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়। জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। 

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতায় এনআইএ-র স্পেশ্যাল কোর্টে এই চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তানিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১এ, ১২৪এ, ১২০বি (রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ষড়যন্ত্র)-সহ সন্ত্রাস দমন আইন এবং UAPA ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও ১৩, ১৫, ১৮, ২০, ৩৮, ৩৯ ইউএপিএ ধারা, ৬৬ আইপি অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩, ১৫, ১৮, ২০, ৩৮, ৩৯ ইউএপিএ ধারা, ৬৬ আইপি অ্যাক্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here