অর্ঘ মুখার্জী:

শুধু “বনলতা সেন”ই নন , নাটোরের পরিচিতি বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় এক মিষ্টি “কাঁচাগোল্লার” জন্মস্থান হিসাবেও। প্রায় তিনশো বছর ধরে, কাব্যরসিক থেকে মিষ্টিরসিক, সবার প্রাণেই দু-দন্ড শান্তি প্রদান করে আসছে যে শ্বেতশুভ্র বর্তুলাকার বস্তুটি , তা রসিক মহলে কাঁচাগোল্লা হিসাবেই অধিক পরিচিত।

কিভাবে ভবানী রানীমার আশীর্বাদধন্য মিষ্টান্ন ব্যাবসায়ী মধুসূদন বাবু এই মিষ্টি সৃষ্টি করেছিলেন আর কিভাবেই বা স্বাধীনতা পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গে এই মিষ্টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে সে ইতিহাস বরং অনুসন্ধিৎসুদের জন্য তোলা থাকে। আমরা খুঁজতে চেষ্টা করবো নির্ভরযোগ্য বা জনপ্রিয় কোনো প্রতিষ্ঠান যেখানে ঐতিহ্যশালী এই মিষ্টিটি নিয়মিত পরিবেশিত হয়। কলকাতার প্রায় সব অভিজাত মিষ্টান্ন পরিবেশকের শোকেসেই গোলাপের পাংখুড়ি মাথায় সেজে কাঁচাগোল্লা নিয়মিত শোভা পায়। তবুও … বিশেষ কিছু মিষ্টির ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিশেষ কিছু জায়গার সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে থাকে যা প্রায় একে অপরের সমার্থক হয়ে ওঠে। যেমন কলকাতার রসগোল্লা , ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা, চন্দননগরের জলভরা অথবা ……. বনগাঁর কাঁচাগোল্লা।

দীনবন্ধু মিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহর, সাহিত্যের পাশাপাশি যে মিষ্টি কারণে বৃহত্তর বঙ্গে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, তা হলো কাঁচাগোল্লা।

নরমপাকের এই মিষ্টিটির সাধারণ উপকরণ হলো ছানা, চিনির রস ( আর শীতকালে নলেনগুড়ের রস ), ছোট এলাচ, পেস্তার কুচি ইত্যাদি। অধিকাংশ জায়গাতেই শীতে নলেন গুড়ের আর বাকি সময় চিনির কাঁচাগোল্লা পাওয়া গেলেও বনগাঁতে শীতকালেও নলেন গুড়ের পাশাপাশি চিনির কাঁচাগোল্লাও পাওয়া যায়।
কাঁচাগোল্লার সন্ধানে বনগাঁ শহরে এসে আরও একটি ঐতিহ্যশালী মিষ্টির খোঁজ পাওয়া গেলো, তা হলো চন্দ্রচূড় দই। প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ বছর আগে যোগেন চন্দ্র ঘোষ যার আবিষ্কার করেন।
মাঘের শেষ রবিবার কাঁচাগোল্লার স্বাদ আস্বাদনে বনগাঁ শহরের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিয়েছিলাম, এই পর্বের মিষ্টি যাত্রায় সৌভাগ্যবশত সঙ্গী তথা পথপ্রদর্শক হিসাবে পেয়েছিলাম “দেশের সময়” সংবাদপত্রের সম্পাদক পার্থ সারথি নন্দীকে। আমাদের গন্তব্য ছিল শহরের ঐতিহ্যশালী তথা জনপ্রিয়তম মিষ্টি দোকানগুলি। সেইমতো পর্যায়ক্রমে আমরা যাই শতাব্দী প্রাচীন টাও বাজারে “কার্তিক মিষ্টান্ন ভান্ডার” , “বিস্টুপদ প্রামানিকের” শত বৎসরের পুরোনো মিষ্টির দোকান এবং বাটার মোড়ের ঐতিহ্যশালী “লস্কর মিষ্টান্ন ভান্ডার” ও “গোবিন্দ ডেয়ারিতে”।

সীমান্ত শহর, সাহিত্যের শহর ( বা বলা ভালো সাহিত্যিকদের শহর ), কাঁচাগোল্লার শহর ছাড়াও প্রকৃতিপ্রেমিকদের কাছে বনগাঁর আরও একটি পরিচয় হলো পারমাদান বা “বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে” প্রবেশ পথ। আর ইতিহাসে আগ্রহীদের জন্য আছে ইছামতী নদী তীরে পরিত্যক্ত,ভগ্নপ্রায় মঙ্গলগঞ্জ নীলকুঠী, যেথায় শুধু ইতিহাসই নয় কল্পনাবিলাসীরা ভূতের সন্ধানও পেতে পারেন।

যাইহোক, ফিরে আসি কাঁচাগোল্লার কথায়। যথারীতি শুধু কাঁচাগোল্লা অথবা চন্দ্রচূড় দধির স্বাদ আস্বাদনই নয়, আমার উদ্দেশ্য ছিল বনগাঁর বিখ্যাত এই মিষ্টিগুলির ব্যাপারে মিষ্টান্ন ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা ও সম্ভব হলে মিষ্টান্ন প্রস্তুতির পর্বটিও চাক্ষুষ করা। বলা বাহুল্য, আমার এই পর্বের বনগাঁ যাত্রা সার্থক হয়েছে। ছবি -লেখক৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here