রাজ্য জুড়ে বিজেপির রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে,সুষ্ঠ ও অবাধ গণতন্ত্রের পক্ষে তা একেবারেই কাম্য নয়।আমাদের সংসদীয় গণতান্ত্রীক ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।তবে মনে রাখা দরকার যে হেতু এ দেশ ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধান্য না দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আগ্রাধিকার দিয়েছে তাই কোন রাজনৈতিক দলেরই ধর্মীয় বিভাজন ধরাবার মত কোন কর্মসূচি নেওয়া উচিত নয়।কিন্তু খুবই দঃখের কথা এ দেশের প্রায় সবকটি রাজনৈতিক দলই সংবিধানের সেই আদর্শকে ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক প্রচারে ধর্মকে ব্যবহার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এ ব্যপারে শুধু বিজেপিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই,অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও সমান দোষী।একমাত্র বামপন্থী দলগুলিই এ বিষয়ে কিছুটা হলেও সতর্ক।এ রাজ্যে গত কয়েক বছর জুড়ে যে ভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটছে তা রীতিমত দৃষ্টিকটু।সেই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরেই বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে রাজ্য জুড়ে চূড়ান্ত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট গোলমেলে।কেন তারা তাদের অবস্থান আগে থেকে জানায় নি,কেন বিজেপি নেতারা বার বার চিঠি দেবার পরেও রাজ্য প্রশাসন চুপ করে ছিল তা জানতে চেযেছে মাহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতিরাও।সব মিলিয়ে রথযাত্রার কর্মসুচি নিয়ে রাজ্যময় এক ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।এ রাজ্যের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করে ভোটে তার ফায়দা তুলতে বিজেপি যেমন সক্রিয় তেমনি রাজ্যের শাসকদলও বিজেপির এই ধর্মীয় মেরুকরণের প্রয়াস বন্ধ করতে পাল্টা ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করে চলেছে,যা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রক্রিয়া বলেই আমরা মনে করি।কেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হয় যে বিজেপির রাম থাকলে আমাদের দুর্গা আছে?কেন রাম মন্দিরের পাল্টা হিসেবে সূর্য মন্দির তৈরির ঘোষণা করতে হয় রাজ্যকে?কেন বিজেপির রথযাত্রার মোকাবিলায় পান্টা পবিত্রযাত্রার আয়োজন হবে?এসবইতো ধর্মীয় কর্মসূচি,রাজনীতির সঙ্গে এসব কেন মিশে যাবে!ধর্ম ব্যক্তি মানুষের বিশ্বাসের বস্তু,ঘরে যে কেউ তার ধর্ম পালন করুন কারোর কোন আপত্তি নেই,ভগবান,আল্লা বা গড কে ডাকুন কেউ কিছু কোন আপত্তি করবে না,কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যখন এইসব কর্মসূচির সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে তখন বুঝতে হবে এর পেছনে অন্য অংক আছে।সে অংক হল রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতাবার অংক।আমাদের বোঝার সময় এসে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা আমাদের ভগবান বিশ্বাস,ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে রাজনীতির খেলা খেলতে দেবো না।আমাদের বলার সময় এসেছে আমাদের ভগবান আমাদের হৃদয়ে আছে,আমাদের ঘরের ছোট্ট আসনে তাকে আমরা জায়গা করে দেবো।ভগবান বড় মন্দির চান না,ক্ষমতা চান না,তিনি মঙ্গলময়,তাই তিনি চান সব মানুষের উন্নতি,সবার সমৃদ্ধি,মানুষে মানুষে হানাহানি ভগবানের চাহিদা নয় এ চাহিদা ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলির তাই এই সব দলগুলিকে আমাদের এই বার্তা দেওয়ার সময় এসেছে আমাদের ভগবান,আমাদের ধর্ম আমরাই রক্ষা করবো,নেতারা তা নিয়ে আর না ভাবলেও চলবে,তারা বরং দেশের মানুষের খাওয়া পড়া,চাকরি,শিক্ষা,চিকিত্সা দেওয়া নিয়ে ভাবুন এগুলোই তাদের কাজ।এই কাজগুলো করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই ধর্ম দিয়ে মানুষে মুনুষে বিভাজন তৈরি করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করছেন।আমরা এই চালাকি ধরে ফেলেছি,আমরা আর কোন ভাবেই নেতা-নেত্রীদের ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরির ফাঁদে পা দিতে রাজি নই।বন্ধ হোক যাবতীয় ধর্মীয় উত্তেজনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here