(দেশের সময়ের বিশেষ প্রতিবেদন)-এ রাজ্যে শাসক দলকে টক্কর দেওয়ার মত সংগঠন যে করে উঠতে পারেনি বিজেপির রাজ্য নেতারা তা এতদিনে ভাল করেই বুঝে গেছেন অমিত শাহরা,এবার তাই রাজ্যের শাসক দলকে চাপে রাখতে অন্যরকম কৌশল নিতেই রথকে সম্বল করেছে বিজেপি।অমিত শাহরা বুঝে গেছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা মূলত মুখে মারিতং জগত,একমাত্র মুকুল রায় ছাড়া রাজনৈতিক বোধ বুদ্ধিতে সবাই খুব কাঁচা।তবে এই মুহূর্তেই রাজ্য নেতাদের অদল বদল করাও সম্ভব নয়,কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে,তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এ রাজ্যের জন্য অন্যরকম কৌশল নিতে চলেছে বিজেপির দিল্লীর নেতারা।তারা ইতিমধ্যেই রাজ্যের নেতৃত্বের ভার সরাসরি দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দিয়েছেন।রথ নিয়ে যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে তাতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দাই দেখতে পাচ্ছে বলে খবর।তবে রথ নিয়ে বিজেপির দিল্লির নেতাদের এই বাড়াবাড়িকে প্রথমে ভাল ভাবে নেয় নি এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা,তাদের মনে হয়েছিল এর ফলে রাজ্যের মানুষের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমুল হতে পারে যে বিজেপি শুধুমাত্র রথ আর মন্দিরের বাইরে কিছু ভাবে না,রাজ্যের মধ্যে যে শিল্প-কলকারখানার অভাব,যে বেকারি,যে শিক্ষাহীনতা,চিকিত্সা বিভ্রাট,কলেজে যে দুর্নীতি তা নিয়ে সরব না হয়ে শুধু মন্দির আর রথ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে শাসক দলের সুবিধা হয়,মানুষও ভুল বোঝে।তবে রাজ্য বিজেপির একাংশের এই মনোভাবকে মেনে না নিয়ে অমিত শাহরা এ রাজ্যে রথযাত্রাকে নিয়েই লাগাতার প্রচার চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন,শোনা যাচ্ছে এর পেছনে অমিত শাহদের অন্য অংক আছে বলেই খবর।সেই অংক অনুযায়ী রথকে সামনে রেখে রাজ্য জুরে মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে যে এ রাজ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বার বার আসেন,তারা রাজ্য নিয়ে ভাবছেন,বিজেপি যেহেতু এখন কেন্দ্রের ক্ষমতায় তাই মানুষকে বোঝানো সম্ভব যে বিজেপি রাজ্যে ভাল ফল করলে তারা এ রাজ্যের জন্য শিল্প কলকারখানা নিয়ে ভাবতে পারে।তা ছাড়া বিজেপির দিল্লির নেতারা মনে করছেন এ রাজ্যের সংখ্যা লঘু মুসলিম ভোটকে এখনই শাসক দলের থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব নয়,সেই ভোট তৃণমূলের দিকেই যাবে,তাই চেষ্টা করতে হবে সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দু ভোটকে যতটা পারা যায় নিজেদের দিকে টেনে আনার,তাই রথ যাত্রাকে সামনে রেখে বিভাজনের কৌশলটা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা কিছুতেই ছাড়তে চাইছেন না।অন্য দিকে আর একটা কারণে বিজেপি লাগাতার মন্দির ও রথের প্রচার চালাতে চায়,সেই কারণটা হল,বিজেপির লাগাতার মন্দির ও রথের প্রচারের ফলে শাসক তৃণমূলও দুর্গামন্দির ও সুর্যমন্দিরের প্রচার শুরু করে দিতে বাধ্য হয়েছে।আর এটাকেই হাতিয়ার করে সংখ্যা লঘু মুসলিমদের কাছে এই প্রচার নিয়ে যেতে পারবে যে শুধু তারাই নয় তৃণমূলও আসলে মন্দির ও হিন্দুত্বের কথা বলে,এতে মুসলিমদের মধ্যে ধন্দ তৈরি হবে,যা শাসক দলের প্রতি প্র্শ্নহীন আনুগত্য দেখাতে বাঁধা দিতে পারে।নিজেরা মুসলিম ভোট না পেলেও সেই ভোট যদি সিপিএম বা কংগ্রেসের বাক্সে পড়ে তা হলেও বিজেপির লাভ,সেক্ষেত্রে শাসক ভোট ভাগ হয়ে যাবে।এই কথা মাথায় রেখেও রথ নিয়ে প্রচারটা তুঙ্গে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যে ভাবে রাজ্যের শাসক দলের সমালোচনা করেছে তাতেও নিজেদের ফায়দাই দেখছে বিজেপির শীর্ষ নেতারা।যা ঘটনা তাতে সব ঠিকঠাক চললে কোর্টই বিজেপিকে রথ যাত্রার অনুমতি দেবে বলে মনে করা হচ্ছে,আর তাহলে সমগ্র রাজ্যবাসীর কাছে এই বার্তা যাবে যে এ রাজ্যের শাসক দল অন্যায়ভাবে রথ যাত্রা আটকাতে চেয়েছিল সেই প্রচার বিজেপির ভোট বাক্সে পড়ার আশা করছেন অমিত শাহরা।মেরুকরণের প্রক্রিয়া ছাড়া এ রাজ্যে যে বিজেপি শাসক তৃণমূলকে কোনভাবেই চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না তা বুঝেই রথকেই শেষ সম্বল করে এগুতে চাইছে বিজেপি।বিজেপির এই রথ কৌশল তাদের কতটা ফায়দা দেয় সেটাই এখন দেখার,কৌশলের মাত্রার কথা ভেবেই বিজেপির নেতারা এখন রথ যাত্রাকে গণতন্ত্র যাত্রা বলে অভিহিত করতে চাইছেন,তবে তারা মনে মনে ঠিক জানেন ধর্মীয় মেরুকরণ ছাড়া এ রাজ্যে এখনই বিজেপি দাঁত বসাতে পারবে না,তাই রথই তাতের প্রধান হাতিয়ার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here