গোটা দেশ এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে নতুন নাগরিকতা আইনের বিরুদ্ধে।বিশেষ করে ছাত্র সমাজ গর্জে উঠে বলছে ধর্ম দিয়ে নাগরিকতা যাাচাইয়ের এই প্রক্রিয়া এক বিপদের দিকে দেশকে ঠেলে দিতে পারে।দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের সংস্কৃতি বিরাজ করার যে রীতি চলছে এই নতুন নাগরিকতার আইন সরাসরি তার উপর আঘাত হানতে চলেছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অব্শ্য বলা হচ্ছে তারা নাগরিককতা আইন দিয়ে বেনগরিককে নাগরিকতা দিতে চান কারোর নাগরিকা কেড়ে নিতে াচান না।তবে কার্যক্ষেত্রে নতুন আইনের যে খসরা তৈরি হয়েছে তাতে পরিষ্কার এ দেশে হিন্দু ও মুসলিমদের নাগরিকতা প্রাপ্তিতে নতুন আইন এক ধর্মীয় পরিচয় জুড়ে দিতে চাইছে।বাংলাদেশ,পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের থেকে আগত অমুসলিমরা এদেশে শরণার্থী বলে চিহ্নিত হবেন এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই পরিষ্কার হয়ে যায় যে মুসলিমদের জন্য এদেশের দরজা সংকোচিত করার একটা প্রয়াস বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার করতে চাইছে।

কেউ কেউ বলতেই পারেন মুসলিম দেশগুলোতে হিন্দুরা অত্যাচারিত হয় তাতো মিথ্যে নয়,তবে এ দেশ যদি নিপীড়িত হিন্দুদের আশ্রয় দেয় তাতে ক্ষতি বা আপত্তি কেন?আমরা বলবো না তাতে কোন আপত্তি নেই,যে কোন নিপীড়িত মানুষকে আশ্রয় দেওয়াটা মহত্বের পরিচয়।আপত্তি শুধু নিপীড়িত মানুষের ধর্ম পরিচয় প্রধান্য পাওয়া নিয়ে।যারা জানেন না তারা শুনে রাখুন পাকিস্থানে শুধু হিন্দুরাই নিপীড়িত হন না,সেখানে অত্যাচার হয় শিয়া সম্প্রদায় ও ্মহজিদ সম্প্রদায়ের উপরও।

তারাও দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়।তবে কেন তাদেরও ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হওয়াতে এদেশে আশ্রয় দেওয়া হবে না?মায়ানমারে রহিঙ্গা মুসলিমরা যেভাবে খুন হচ্ছে তার পরেও কোন যুক্তিতে আমরা বলতে পারি যে শুধু হিন্দুরাই ধর্মীয় মৌলবাদের শিকার।বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে হিন্দু লেখক বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি খুন হয়েছেন একাধিক মুসলিম লেখক ও বুদ্ধিজীবী।

তসলিমা নাসরিন মুসলিম হয়েও মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আজও তাঁর নিজের দেশ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত।আসল কথাটা হল যে কোন মৌলবাদই তা সে হিন্দু হোক বা মুসলিম যাই হোক না কেন, মানুষে মানুষে ব্যবধান ও বিভাজন তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে।

আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য যে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ধর্ম পরিচয়কে কখোন গুরুত্ব দিই নি।আমরা পাকিস্থান,আফগানিস্থান বা বাংলাদেশের মত মুসলিম রাষ্ট্রের বপরীতে হিন্দু রাষ্ট্র হতে চাইনি।আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েছি,আমরা সব ধর্মের মানুষকে ধারণ করতে সক্ষমতার কথা বলতে পেরেছি।এটা আমাদের দূর্বলতা নয় এটাই আমাদের দেশের শক্তি বলে চিহ্নিত হয়েছে।বিশ্বের দরবারে আমাদের মাা উঁচু হয়েছে।

বিশ্ব আমাদের বাহবা দিয়ে বলেছে সাম্প্রদায়িকতার ছোবল সহ্য করেও ভারত সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের যে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার জন্য তার মহনুভবতাকে মান্যতা দিতে হয়।সেই থেকে এদেশ সব ধর্মের দেশ,সব ভাষার দেশ।আজ যদি নাগরিকতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলি তবে তা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় হবে।মানুষ মহত হয় সহ্য ধারণ ক্ষমতার বিচারে,আজকের শাসক যদি মানুষের সেই ধারণ ক্ষমতাকে শুধু ধর্মীয় ভাবনার গহ্বরে ঢুকিয়ে মানুষকে শুধু হিন্দু আর মুসলিমে ভাগ করতে চায় তবে ইতিহাস বোধহয় তাদের ক্ষমা করবে না।

কেউ কেউ বলছেন পাকিস্থান বাংলাদেশ যদি মুসলিম রাষ্ট্র হতে পারে ভারতও কেন হিন্দু রাষ্ট্র হবে না।এই যুক্তি আসলে ভারতের মহত্ব ও উদারতাকেই আঘাত করে।ভারত সব ধর্মকে আশ্রয় দেয় সেই জন্যই তো ভারত এক অনন্য দেশ।পাকিস্থান বা আফগানিস্থান শুুধু মুসলিমদের প্রাধান্য দেয় তাই আমরাও শুধু হিন্দুদের প্রাধন্য দেবো এই যুক্তি তো আসলে তুমি অধম তাই আমিও অধম হইবো এমন যুক্তিরই নামান্তর মাত্র।

আমার দেশ ধর্ম নিরপেক্ষতার যে আদর্শকে সামনে রেখে এগিয়েছে তা বজায় রাখার পক্ষে আওয়াজ তোলা তাই জরুরি।নাগরিক ও ধর্ম পরিচয়ের ব্যবধান বজায় রাখা তাই আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের জন্যই খুব- খুবই দরকার।এ দেশে আর ্অনেক গুরুতর সমস্যা আছে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার বরং সেই সব সমস্যার সমাধধান নিয়ে ভাবুন,দোহাই আমাদের নাগরিকতা দেওয়ার নামে ধর্মীয় বিভাজন আর ডেকে আনবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here