অশোক মজুমদার: কম বয়সে যখন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম তখন ভাবতাম দেশের কাজে জীবন দিতে হবে। শুধু আমি নয়, আমার মত অনেকেই এমন কথা ভাবতো। সে স্বপ্ন আমাদের পূরণ হয়নি। আজ সেই ঝোড়ো জীবন থেকে এক নিরাপদ জীবনে পৌঁছে গিয়েছি আমি।

তবে মাঝেমধ্যে এখনও সেই পুরনো ইচ্ছে মাথা চাড়া দেয়। এই করোনা নিয়ে এখন যেমন একটা আতঙ্কের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে তখন আমার মনে হচ্ছে আমি যদি এসময় করোনা আক্রান্ত বা যারা আক্রান্ত হতে পারেন তাদের জন্য কিছু করতে পারতাম তাহলে খুব ভাল হত। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক পদস্থ প্রশাসককে একথা সাহস করে বলেই ফেললাম।

তাকে বললাম, আমি তো ডাক্তার নই তাই চিকিৎসা করতে পারবো না। কিন্তু আক্রান্তদের সেবা তো করতে পারবো, কিংবা কোন আক্রান্তকে এসকর্ট করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে আসা বা কোয়ারেন্টাইনে যাদের রাখা হয়েছে তাদের কোন পরিষেবা দেওয়ার কাজেও তো আমাকে ব্যবহার করতে পারেন আপনারা। সতর্ক থাকার গুরুত্ব বুঝি, এছাড়া আমার কিন্তু করোনা বা অন্য কোন অসুখ নিয়ে বিরাট কোন ভয় নেই। তিনি অবশ্য আমাকে এব্যাপারে তেমন কোন উৎসাহ দিতে পারেননি।

এবার যে কথাটা বলবো তা আপনাদের কাছে আত্মপ্রচার বলে মনে হতে পারে কিন্তু এটা সত্যিই আমার ইচ্ছে। কোন বিজ্ঞানীর করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণার কাজে আমি নিজেকে ব্যবহার করতে দিতে রাজি। এই সিদ্ধান্ত আমি স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে নিয়েছি। বিজ্ঞানীরা যদি একাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে আমি এটা করতে পারবো না কেন?

আমার তো তাদের মত মেধা নেই কিন্তু শরীরটা তো আছে। এটা করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো। এখন তো এই কঠিন সময়েও দেখছি চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য প্রশাসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দিনরাত একাকার করে কাজ করে চলেছেন। তাদের কাজই আমায় এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এই সিদ্ধান্ত আমার সিস্টার নিবেদিতার থেকে পাওয়া বলতে পারেন। কারণ আমরা সবাই প্রায় জানি একবার কলকাতায় প্লেগ সংক্রমণের সময় ও নিজের সংক্রমণের পরোয়া না করে রাস্তা সাফাই ও রোগীদের সেবা করতে নেমে পরেছিল। সেই সময়কালে ভারতীয়রা এটা ভাবতেও পারতো না।

এই কথা সাহস করে কথাটা মাকে বলতেই মা বললো, ‘তুই কেন, আমার তো বয়স হয়েছে আমিই বা নয় কেন?’ তবে যে যা বলুক না কেন, এটাই আমার ইচ্ছে। আসলে মৃত্যুটা কীভাবে আসবে তা আমরা অনেকেই জানিনা। এই যে ৬০ বছর অবধি আমি বেঁচে আছে এটাই তো আমার কাছে অবাক লাগে!

আমার চেয়ে কম বয়সী অনেক বন্ধু, এমনকি আমার নিজের ভাই দিলীপও ৩৯ বছর বয়সে চলে গেছে। মৃত্যু যখন আমাদের হাতে নেই তখন আমরা এ নিয়ে ভেবে কী করবো? বরং কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে, তাতে আমাকে কাজে লাগানো হবে, আমি একটা ভাল উদ্যোগে যুক্ত হতে পারবো এটাই আমার পরম সৌভাগ্য হবে।

৬০ এর দরজায় দাঁড়িয়ে আমার আর নিজেকে নিয়ে নতুন কোন ভাবনা নেই, নিজের অক্ষমতা সম্পর্কেও আমি অবগত। স্কুল, কলেজ, ফটোগ্রাফি, গ্রাম, কলকাতা, বন্ধুদের সঙ্গে নেশাভাঙ এই সব নিয়ে যে জার্নি তা নিয়ে বই ছাপানোর ইচ্ছে হয়। বিশ্বাস করুন সে বই আপনাদের ভালো লাগবে।

কারণ কিছু না বুঝে, না জেনে জীবনকে তুড়ি মেরে চলতে চলতে আমি নিজের মত করে হেঁটে এ জায়গায় পৌঁছে গেছি। নতুন কিছু করার ভাবনা আমাকে সবসময় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে। জীবন নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই। মানুষের ভালোর জন্য একটা কাজ করাই আমার উদ্দেশ্য।

সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী, গবেষক, ডাক্তারদের কাছে আমার আবেদন রইলো এই মহামারি প্রতিরোধের গবেষণায় আমাকে যে কোন ভাবে কাজে লাগান। মৃত্যু তো প্রত্যেক মানুষের জীবনে আসবেই, সে ভয় আমি করি না।

আমাকে শুধু সারা পৃথিবীর মানুষের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করে আপনাদের সবার মনের মধ্যে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ করে দিন। আমি জানিনা এই মহাগুরুত্বপূর্ণ গবেষণার অংশ হবার সৌভাগ্য আমার হবে কিনা। কিন্তু আপাতত এখন যে কঠিন সময় চলছে তাতে যদি কারো কোনো সাহায্যের দরকার হয় সে বা তারা সানন্দে আমার কাছে আসতে ও যোগাযোগ করতে পারে।

ছোটবেলায় রাজনীতি করার সময়ে একটা গান গাইতাম আমরা – ‘জন্মিলে মরিতে হবে রে জানে তো সবাই/ তবে মরণে মরণে অনেক ফারাক আছে ভাই/ সব মরণ নয় সমান।’ মনে রাখবেন ভাল কাজের কাছে মৃত্যু বারবার হেরে যায়। এই লেখাটা পড়ার পর কেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান তাদের জন্য আমি আমার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ই-মেল নিচে দিয়ে দিলাম। এব্যাপারে আমার বাড়ির লোকেদের সন্মতিপত্র আপনাদের দিয়ে দেবো। অপেক্ষায় রইলাম।

অশোক মজুমদার।।

EE-23 flat 4/A,

salt lake. Kolkata- 700091

West Bengal ( India)

Ph: 9830165603

Email: ashokmajumder@gmail.com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here