দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার বিকেলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পর থেকে দু’টি প্রশ্ন বা কৌতূহল যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এক, শুভেন্দু কাল বৃহস্পতিবারই দিল্লি যাচ্ছেন কিনা। দুই, শুভেন্দুর সঙ্গে আর কার দল থেকে বেরনোর জন্য পা বাড়াচ্ছেন।
আর তার পর থেকেই জল্পনায় রঙ লেগেছে! কেউ বলছেন, বৃহস্পতিবারই দিল্লি রওনা হবেন তিনি। কেউ বলছেন, ১৮ তারিখ তিনি দীনদয়াল মার্গে বিজেপি সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক ভাবে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন। তার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে ১৯ তারিখ কলকাতায় ফিরবেন। ওই দিন মেদিনীপুর কলেজ মাঠে অমিত শাহর সভা পূর্ব নির্ধারিত রয়েছে।


এ ব্যাপারে সম্ভবত আর কোনও রহস্য নেই যে ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহর সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেবেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, তার আগে কাল তাঁর দিল্লি যাওয়ার কোনও কর্মসূচি নেই। কাল ১৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস। কাল নিমতৌড়িতে তিন কিলোমিটার পদযাত্রা করার কথা শুভেন্দুর। প্রতি বছর এই কর্মসূচি পালন করেন তিনি।

সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবারই তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, শনিবারই বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তিনি। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ককে নিয়েই দলবদল করছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের সন্তানের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, এদিন বিধানসভায় এক বাম নেতার সামনে তাঁর বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু।

বুধবার বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়েই শুভেন্দু রওনা হয়ে যান বর্ধমানের উদ্দেশে। তার পর পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে ঘণ্টাখানেক মিটিং করেন। সুনীল মণ্ডলের কথাবার্তা গত কয়েকদিন ধরেই বেসুরো ঠেকছিল। এখন, আজ সন্ধের পর অনেকে মনে করছেন শুভেন্দুর পথেই পা বাড়াতে পারেন সুনীল।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সুনীলের বাড়িতে শুভেন্দুর যাওয়ার তাৎপর্য অনেক। উনি লোকসভার সাংসদ। এখনও সাড়ে তিন বছর মেয়াদ বাকি রয়েছে। তা সত্ত্বেও শুভেন্দুর সঙ্গে যদি যান, তা হলে আন্দাজ করা যেতে পারে কী পরিমাণ দল ভারি করতে পারেন শুভেন্দু।

সুনীলের বাড়িতে ওই তৃণমূল নেতা কর্নেল দীপ্তাংশু এবং আসানসোলের প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, এদিন বিকেলে জিতেন্দ্রকে ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর দেখা করা অর্থবহ।
সূত্রের মতে, সুনীলের বাড়িতে ওই বৈঠকে আরও দু’জন বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন, তাঁরাও পা মেলাতে পারেন শুভেন্দুর সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ এক নেতা দাবি করে বলেন, দুই বর্ধমান ফাঁকা হয়ে যাবে গো!
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, জেলা পরিষদের সদস্য, পুরসভার প্রশাসক, দলের জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মায় বহু নেতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তা ছাড়া শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেসের পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ কিছু নেতাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছেন। এদিন বিধানসভা থেকে শুভেন্দু ইস্তফা দেওয়ার সময়ে সুদীপ তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

সূত্রের মতে, সম্ভবত তা নয়। হয়তো অমিত শাহর সভার দিন কয়েক জন নেতা, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য ও কিছু সংখ্যালঘু নেতা তাঁর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু সেদিনই সবাই যোগ দেবেন না। তার দু’টি কারণ রয়েছে। এক, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু হয়ে যেতে পারে এখন থেকেই। দুই, এক দিনে পুরো ধাক্কা না দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে ধাক্কা দেওয়াই লক্ষ্য। যাতে তা সামলাতেই ব্যস্ত থাকে শাসক দল।
প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এদিন বলেছেন, “যাঁদের ভাল লাগছে না তাঁরা সবাই যেতে পারেন। যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন, তৃণমূলের কোনও বিপদ নেই। কেউ তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না।”

বুধবার যখন বিধানসভায় আসেন শুভেন্দু, ততক্ষণে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিধানসভার সচিবকে চিঠি দিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার সময়ই একটি ঘরে ওই বাম নেতার সঙ্গে কথা হয় শুভেন্দুর। সূত্রের খবর, ওই বাম নেতাকে দেখা মাত্রই শুভেন্দু জিগ্গেস করেন, ‘বুদ্ধবাবু কেমন আছেন?’ প্রত্যুত্তরে ওই নেতা বলেন, ‘আগের থেকে ভালো। তুমি কী ঠিক করলে?’ সেই প্রশ্নের উত্তরেই শুভেন্দু জানান, ‘১৯ তারিখ (ডিসেম্বর) বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি। আপাতত ১০ জন বিধায়ক যাবে। পরে ধাপে ধাপে।’

শুভেন্দুর কথা যে শুধু কথার কথা নয়, তা স্পষ্ট হয়ে যায় সন্ধ্যাতেই। বিধানসভায় পদত্যাগ পত্র জমা করেই শুভেন্দু যান তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে। সেখানে উপস্থিত হন আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও দীপ্তাংশু চৌধুরী। বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ও সেখানে উপস্থিত হন। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় সকলের। তারপর শুভেন্দু বেরিয়ে যান।

উল্লেখ্য, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে একেএকে গিয়েছেন মুকুল রায়, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, মিহির গোস্বামীর মতো নেতারা। এবার শুভেন্দুর মতো বড় ‘মাথা’কে ঘরে তুলছে গেরুয়া শিবির। স্বাভাবিক কারণেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মন্ত্রী, অন্য সুর ধরেছেন আসানসোলের মেয়র। পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে হাজির শুভেন্দু। এমনকী শনিবার বিজেপিতে শুভেন্দুর সঙ্গেই যোগ দিতে পারেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত’ও। ফলে তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। আর আতঙ্ক বাড়ছে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে।

পরিস্থিতি বুঝে বুধবার বিকেলে উত্তরবঙ্গ থেকে সরাসরি জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ফোনে উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে বলেন, ‘মাথা গরম করিস না। আমি যাচ্ছি ১৮ তারিখ, কথা বলব সবকিছু নিয়ে।’ মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পরও অবশ্য জিতেন্দ্র আসানসোল পুরসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলে যান, আগামীকাল বিকেল তিনটের সময় তিনি পুরসভার সব বিভাগীয় প্রধান ও কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মতে, উনি একটা গেট টুগেদার করতে চেয়েছেন। যদিও এদিন সন্ধ্যাতেই আবার শুভেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়ি যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ফলে জল্পনা বাড়ছে বই কমছে না৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here