দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চালু হতে চলেছে লোকাল ট্রেন। সোমবার বিকালে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানানো হল রেলের তরফ থেকে। এদিন রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলে কর্তারা। সেখানেই লোকাল ট্রেন চালুর বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে কথাবার্তা হয়। আগামী ৫ তারিখ এই ফের বৈঠক হবে বলে জানা গিয়েছে। লোকাল ট্রেন চালু হলে যে ৫টি বিষয়ের কথা মাথায় রাখা হবে। 

  • ১০-১৫% লোকাল ট্রেন দিয়ে পরিষেবা চালু করে ধীরেধীরে তা বাড়ানো হবে।
  • কালীপুজোর পর চালানো হতে পারে ২৫% লোকাল ট্রেন।
  • মেট্রোর মতো ই পাসের ব্যবস্থা করা হবে না বলেই প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন কী কী নিয়ম হতে পারে ?

১) প্রত্যেক যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকতে হবে। এমনিতে করোনা অতিমারির জেরে মেট্রো-বিমান-সহ বিভিন্ন যাতায়াতের মাধ্যমে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক রয়েছে। আনলকের পরে যে ট্রেন পরিষেবাগুলি রেলের তরফে শুরু হয়েছে, সেখানেও মাস্ক পরে যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে। এবাার সেই নিয়মই দেখা যেতে চলেছে লোকাল ট্রেনে।

২) ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন শুরু করার ভাবনা রেলের। এই বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে কথাবার্তা চলছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য়ের কথা মাথায় রেখে একটি লোকালে ১২০০-র জায়গায় ৬০০-র যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চলতে পারে।

৩) ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লোকাল ট্রেন দিয়ে প্রাথমিক ভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে। অফিস টাইমেই লোকাল ট্রেন বেশি চালানো পারে। পরে ধাপে ধাপে সংখ্যা বাড়াতে পারে ট্রেনের। বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ লোকাল ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টিও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। 

৪) আনলকের পরে রাজ্যে মেট্রো রেলে ই পাস সিস্টেম চালু হয়েছে। অর্থাৎ যাত্রীরা নির্দিষ্ট অ্যাপ থেকে মেট্রোয় যাতায়াতের জন্য ট্রেনের টাইমের স্লট বুকিং করতে পারে। এবার সেই সিস্টেমই চালু হতে চলেছে লোকাল ট্রেনে। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

৫) হাওড়া ও শিয়ালদহ লাইনে কোন কোন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে। এছাড়াও ট্রেনের টাইম টেবিলও বদলে যাবে। নতুন টাইম টেবিলে কীভাবে লোকাল ট্রেন চলবে তা ঠিক করা হবে বৃহস্পতিবারে বৈঠকে। সেইসঙ্গে কোন কোন স্টেশনে লোকাল ট্রেন দাঁড়াবে সেগুলিও স্পষ্ট হতে পারে৷

বৈঠকের আগেই অবশ্য এদিনের বৈঠকে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা অনুরোধ করেছিলেন পূর্ব রেলের কর্তারা। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণে যাত্রী রোজ যাতায়াত করেন, ট্রেনে চালু হওয়ার প্রাথমিক পর্বে তার অনেক কম যাত্রী ট্রেনে যাত্রা করার সুযোগ পাবেন। সে ক্ষেত্রে ঝামেলা বেঁধে যেতে পারে। তাই পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কথাও ভাবা হচ্ছে রেলের তরফে।

এদিকে, রাজ্য-রেল বৈঠকের দিনই লোকাল ট্রেন চালু করার দাবিতে নানা জায়গায় অবরোধ বাঁধল। ট্রেন চালানোর দাবিতে হুগলির বিভিন্ন স্টেশনে চলল যাত্রী বিক্ষোভ। স্পেশ্যাল ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন নিত্যযাত্রীরা। ধুন্ধুমার বাঁধে রিষড়া, বৈদ্যবাটি, শেওড়াফুলি স্টেশনে। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখা হয় জিটি রোড। সন্ধ্যায় হাওড়া স্টেশনেও যাত্রী বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে, পাণ্ডুয়া ও চুঁচুড়াতেও একই কারণে বিক্ষোভ হয়েছিল।

এর আগেই অবশ্য রেল কর্তৃপক্ষ লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করতে পুজোর আগেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’টি চিঠি রাজ্য সরকারকে দিয়েছিল। নবান্ন অবশ্য তখন তার জবাব দেয়নি। বিজেপি নেতৃত্বও লোকাল ট্রেন চালানোর আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে তখন নবান্নর কাছে দুর্গাপুজোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরাও বলেছিলেন, পুজোর পর রাজ্যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। যেমনটা হয়েছিল কেরালায় ওনাম উৎসবের পর। কিন্তু পুজোয় মারাত্মক হারে সংক্রমণ ছড়ানোর মতো পরিস্থিতি এখনও দেখা দেয়নি। অপরদিকে, নানা দিকে লোকাল ট্রেনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। তাই আপাতত লোকাল ট্রেন চালুকেই পাখির চোখ করছে রাজ্য সরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here