দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এতোদিন সেনা সূত্রে যে খবরগুলো পাওয়া যাচ্ছিল, মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে সে কথাগুলোই পষ্টাপষ্টি বললেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি জানান, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা অমীমাংসিত। তবু ’৯৩ ও ’৯৬ সালে দ্বিপাক্ষিক যে সীমান্ত সমঝোতা হয়েছিল, বেজিং যে তার শুধু লঙ্ঘন করেছে তা নয়, গত এপ্রিল মাস থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে, হামলাও চালিয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, এর মধ্যে জুন মাসেই সব থেকে বড় হামলা চালিয়েছে চিনা ফৌজ। তবে তার যোগ্য জবাবও দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এমন জবাব, যাতে ভারী ক্ষতি হয়েছে চিনের। এই প্রসঙ্গেই রাজনাথ সিংহ জানান, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ও তাদের ভূখণ্ডের দিকে প্রচুর সেনা ও অস্ত্র মজুত করেছে চিন। পূর্ব লাদাখ, গোগরা, কোঙকা লা, প্যাঙ্গং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ তীরে বেশ কিছু সংঘাতের ক্ষেত্র তথা ফ্রিকশন পয়েন্ট তৈরি করেছে।”

বেজিং যে এই সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে তা উপগ্রহ চিত্রে পরিষ্কার দেখতে পেয়েছেন ভারতের কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা। সেনা গোয়েন্দাদের কাছেও সেই রিপোর্ট রয়েছে। তবে সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, লাদাখ সীমান্তে পাল্টা প্রস্তুতি রেখেছে ভারতও। যথাযথ জবাব দিতে সেনা মোতায়েন যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনই অস্ত্রের মজুতও রয়েছে পর্যাপ্ত। তাঁর কথায়, “বাকিটা সেনসিটিভ অপারেশনাল ইস্যু। কৌশলগত কারণেই তা প্রকাশ করা যাবে না। সাংসদরাও আশাকরি সেই স্পর্শকাতরতা বুঝবেন।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ দিন লোকসভায় আরও বলেন, ভারত মনে করে চিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ভাবে মোটামুটি একটা সীমারেখা রয়েছে। সেটাকে মর্যাদা দিয়ে সীমান্ত বিবাদের নিষ্পত্তি ঘটানো যেতে পারে। কিন্তু চিন তা মনে করে না। ভারতের ৩৭ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার দখল করে রেখেছে। তা ছাড়া পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৫১৮০ স্কোয়ার কিলোমিটার জমি পাকিস্তান চুক্তি করে চিনকে বেচে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অরুনাচল সীমান্তে ৯০ হাজার স্কোয়ার কিলোমিটার এলাকা তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করছে বেজিং।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এদিন সংসদে যা বলেছেন তা কেবল সামরিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ নয়। কূটনৈতিক ভাবেও এর গুরুত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলও তাকিয়ে রয়েছে চিনের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদী সরকার কী বার্তা দেয়। এই পরিস্থিতিতে রাজনাথ এদিন আরও বলেন, কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত শান্তি বজায় রাখাই ভারতের কাছে অগ্রাধিকার। তবে হ্যাঁ দেশের সেনাবাহিনী যেমন সংযম রাখতে পারে, তেমন প্রয়োজনে আঘাত হানতেও প্রস্তুত। বেজিংয়ের সেটাও বোঝা উচিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here