দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ৩০ তারিখ যাওয়ার কথা ছিল।অনেক টালবাহানা, বিধিনিষেধকে মান্যতা দিয়ে অবশেষে সোমবার ২ অগস্ট ত্রিপুরায় পা রাখতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । শনি ও রবিবার ত্রিপুরায় কঠোর করোনা বিধি-নিষেধ জারি থাকার কারণে সফর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল অভিষেককে। অবশেষে সোমবার তিনি যাচ্ছেন আগরতলা। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগরতলায় পা রেখেই অভিষেক যাবেন বিখ্যাত মাথাবাড়ি মন্দিরে।

ত্রিপুরায় প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকের কর্মীদের ‘বন্দি’ করে রাখার অভিযোগ তুলে, তাঁদের মুক্ত করতে ত্রিপুরায় পৌঁছেছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বুধবার আগরতলা পৌঁছেছিলেন ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক এবং ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়রা। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় পৌঁছেছেন দুই সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তারপর কাল যাচ্ছেন অভিষেক। দুপুরে আগরতলা থেকে সাংবাদিক বৈঠকও করবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।

কথিত আছে, ত্রিপুরার যে কোনও ভালো কাজ শুরু হয় ত্রিপুরেশ্বরীর আশীর্বাদ নিয়ে। তাই ত্রিপুরায় জাঁকিয়ে বসার আগে তৃণমূলও নতুন করে ত্রিপুরায় যাত্রা শুরু করছে মাথাবাড়ি থেকেই। তৃণমূলের ত্রিপুরার নেতারা জানাচ্ছেন, স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অভিষেক। নেবেন বুথ রিপোর্ট। সেই অনুযায়ী পথ এগোনোর পরবর্তী নির্দেশ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

বৃহস্পতিবারই ত্রিপুরার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা। অভিযোগ, হঠাৎ করেই সেখানে হাজির হয়ে যায় ত্রিপুরা পুলিশ। ১০০ জন পুলিশ কর্মী গোটা এলাকা ঘিরে ধরে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। পুলিশ তাঁদের কাছে জানতে চায়, কীসের বৈঠক, কেন বৈঠক। ঋতব্রত অভিযোগ করেন, যারা হোটেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, তাঁদের পরিচয়পত্র জমা রাখতে হচ্ছে। আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতির কথায়, আসলে বিজেপি স্নায়ুর জোর রাখতে পারছে না। তাই এসব করছে।

বিজেপির তরফেও পাল্টা দাবি করা হয় যা হচ্ছে নিয়ম মেনেই হচ্ছে।একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল পরিষ্কার করে দিয়েছে এবার তাদের আগামী লক্ষ্য দিল্লি।

সূত্রের খবর, আই প্যাক কর্মীদের ত্রিপুরায় হোটেলবন্দি করে রাখার পর তৃণমূলের তরফে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন অভিষেক। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের কোভিড প্রোটোকল মেনে চলারই নির্দেশ দেবেন তিনি। ত্রিপুরার সংগঠনে ঝাঁকুনি দিয়ে নতুন মুখও তুলে আনতে পারেন তিনি। বস্তুত, তৃতীয় বার বাংলায় ক্ষমতায় আসা ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসার পরই অভিষেক জানিয়েছিলেন, তৃণমূল ভিনরাজ্যে যেখানেই যাবে, ভোট শতাংশ কাটার জন্য যাবে না। বরং সরকার গড়া বা সরকার গঠনে বড় ভূমিকা নিতেই যাবে তাঁরা। কিন্তু ত্রিপুরায় এখন থেকেই ক্ষমতা দখলের স্বাদ পাচ্ছে তৃণমূল। সেই সূত্রেই অভিষেকের সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘ত্রিপুরায় তৃণমূলের কিছুই নেই। বাংলার বাইরে তৃণমূলের কোনও অস্তিত্বই নেই।’ তবে, ত্রিপুরায় যেভাবে আঁটঘাঁট বেঁধে নামছে এ রাজ্যের শাসক দল, তাতে ‘খেলা’ যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বিজেপি শাসিত রাজ্যে ক্রমেই কোমর বেধে নামছে তৃণমূল। আর তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাকের কর্মীদের ত্রিপুরা সরকারের হাউজ অ্যারেস্ট করে রাখার ঘটনা। আইপ্যাকের কর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীকে। আর এমনই এক পরিস্থিতিতে সোমবার ত্রিপুরায় পা রাখছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামবে ঘাসফুল বাহিনী। সেই মতো তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। তৃণমূলের প্রথম টার্গেট হতে চলেছে ত্রিপুরাই। সে রাজ্যে সংগঠনকে আরও দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েই আগামীকাল রওনা দিচ্ছেন অভিষেক। সেখান থেকে তিনি কী বার্তা দেন, তার দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। ২০২৩-এ ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here